পদার্থের অবস্থা ও পরিবর্তন
পদার্থ
ইংরেজী : matter, substance।
সমার্থক শব্দাবলি : পদার্থ, বস্তু।
আমাদের চারপাশের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য যে সকল সত্তা আছে, সাধারণভাবে এগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। এই ভাগ দু’টি হলো- পদার্থ ও বিকীর্ণ শক্তি (radient energy)। এর ভিতরে পদার্থ হলো– ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য যে কোন বস্তু, যার ভর আছে, যেটি কোন স্থান দখল এবং যার প্রতিরোধ করার ক্ষমতা আছে, তাকে পদার্থ বলে। যেমন-বই, পাথর, কাগজ, কলম, ইত্যাদি।
তাপ ও চাপের উপর নির্ভর করে পদার্থ সাধারণত তিনটি ভৌত দশায় থাকতে পারে। তবে এক্ষেত্রে সহনীয় কক্ষ-তাপমাত্রা এবং চাপকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। পদার্থের আকার আয়তনের উপর ভিত্তি করে পদার্থকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। এই ভাগগুলো হলো—
১. কঠিন পদার্থ। যেমন : লোহা, কাঠ, কাঁচ ইত্যাদি। দেখুন : কঠিন পদার্থ।
২. তরল পদার্থ। যেমন : পানি, তেল ইত্যাদি। দেখুন : তরল পদার্থ।
৩. বায়বীয় পদার্থ। যেমন : বাতাস, অক্সিজেন, হহিড্রোজেন ইত্যাদি। দেখুন : বায়বীয় পদার্থ।
এ ছাড়া পদার্থ আরও দুটি বিশেষ দশায় থাকতে পারে। বিচারে পদার্থকে অতিরিক্ত দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন—
১. তরল-স্ফটিকার পদার্থ
২. প্লাজমা পদার্থ।
সাধারণ বিচারে পদার্থ তিন অবস্থায় (কঠিন,তরল,ও বায়বীয়) থাকলেও একই পদার্থ সাধারণ তাপমাত্রায় একটি মাত্র অবস্থায় থাকতে পারে। সাধারণ তাপীয় অবস্থা হতে কোন পদার্থকে নিম্ন বা উচ্চ তাপীয় অবস্থায় আনলে, পদার্থ তার দশা পরিবর্তন করে। এই পরিবর্তিতনশীল দশার নিম্ন তাপীয় অবস্থায় কঠিন এবং উচ্চ তাপীয় অস্থায় বায়বীয় ধর্ম লাভ করে। পদার্থের এই রূপান্তরকে পদার্থের অবস্থান্তর বলে। যেমন– সাধারণ তাপমাত্রায় পানি একটি তরল পদার্থ। একে শীতল করলে এটি ০০ সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় বরফে পরিণত হয়। আবার এই বরফকে তাপ দিলে, এটি পানিতে এবং আরো তাপ দিলে একই পানি ১০০০ সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় বাষ্পে পরিণত হয়। অন্যদিকে, বাষ্পকে শীতল করলে, পানিতে এবং পানিকে আরো শীতল করলে বরফে পরিণত হয়। অর্থাৎ পানি, বরফ ও জলীয়বাষ্প একই পদার্থ, যেটি সাধারণ তাপমাত্রায় তরল অবস্থায় থাকে। পানির এইরূপ পরিবর্তনকে পানির তাপীয় অবস্থা বলে।
পদার্থের ভৌত পরিবর্তন (Physical Change Of Matter)
যে সকল পরিবর্তনের ফলে পদার্থের ভৌত অবস্থা, গঠন-প্রকৃতি, স্থিতিস্থাপকতা, বৈদ্যুতিক ও চৌম্বক ধর্ম প্রভৃতির পরিবর্তন হয়, কিন্তু উপাদানগত কোন পরিবর্তন হয় না অর্থাৎ কোন নূতন পদার্থের সৃষ্টি হয় না, সেই সকল পরিবর্তনকে ভৌত পরিবর্তন বলা হয়। যেমন– বরফকে তাপ দিলে তা প্রথমে পানিতে পরিণত হয় এবং তরল পানিকে আরও তাপ দিলে তা জলীয়বাষ্পে পরিণত হয়। এই জলীয়বাষ্পকে আবার শীতল করা হলে তরলে পরিণত হয় এই তরলকে আরও শীতল করলে তা পুনরায় বরফে পরিণত হয় । কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় অবস্থায় পানির ধর্ম ভিন্ন । কিন্তু তিন অবস্থাতেই পানি H2O অণুর সমন্বয়ে গঠিত ।সুতরাং পানির এইরূপ পরিবর্তন হল ভৌত পরিবর্তন। এই পরিবর্তনের বৈশিষ্ট্যেসমজূহকে পদার্থের ভৌত পরিবর্তনের ধর্মাবলি (Physical Properties Of Matter) বলা হয়। যেমন– বর্ণ, গন্ধ, ঘনত্ব, গলনাঙ্ক, স্ফুটনাঙ্ক দ্রাব্যতা, ভঙ্গুরতা ইত্যাদি ভৌত ধর্ম ।পদার্থের রাসায়নিক পরিবর্তন (Chemical Change Of Matter)
এক বা একাধিক পদার্থের উপাদানগত পরিবর্তনের মাধ্যমে ওই পদার্থের নিজস্ব সত্তা হ্রাস পায় এবং নূতন এক বা একাধিক পদার্থ সৃষ্টি হয়, এরূপ পরিবর্তনকে রাসায়নিক পরিবর্তন বলে। যেমন– লঘু সালফিউরিক এসিডের সাথে জিংক যুক্ত করলে হাইড্রোজেন গ্যাস ও জিংক সালফেট সৃষ্টি হয়। এই পরিবর্তনের সময় জিংক ও সালফিউরিক এসিডের সত্তা হ্রাস পায় এবং নূতন ধর্ম বিশিষ্ট হাইড্রোজেন ও জিংক সাকফেট সৃষ্টি হয় ।
Zn + (লঘু) H2SO4 = ZnSO4 + H2
এটি একটি রাসায়নিক পরিবর্তন।
অনুরূপ ক্যালসিয়াম কার্বনেটকে তাপ দিলে তা ক্যালসিয়াম অক্সাইড ও কার্বন ডাই-অক্সাইডে পরিণত হয় । এখানে ক্যালসেয়াম কার্বনেট ভেঙ্গে সম্পূর্ন নূতন ধর্ম বিশিষ্ট দুটি পদার্থ তৈরি হয়।
CaCO3 = CaO + CO2
সুতরাং এটিও একটি রাসায়নিক পরিবর্তন।
মৌলিক, যৌগিক ও মিশ্র পদার্থ
প্রতিটি পদার্থ গঠিত হয় অতি ক্ষুদ্র কণার দ্বারা। পদার্থের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম কণাকে অণু বলা হয়। এই অণুগুলো গঠিত হয় এক বা একাধিক পরমাণুর দ্বারা। পদার্থের অণুগুলোর গঠন বিন্যাসের বিচারে পদার্থ হতে পারে তিন প্রকার। এই প্রকার তিনটি হলো– মৌলিক, যৌগিক ও মিশ্র।
মৌলিক পদার্থ (element)
যে পদার্থকে রাসায়নিক পদ্ধতিতে বিভাজিত করে দুই বা ততোধিক ভিন্ন ধর্মবিশিষ্ট পদার্থে বিশ্লিষ্ট করা যায় না, অর্থাৎ যে পদার্থ হতে সাধারণভাবে সেই পদার্থ ব্যতীত অন্য কোন নূতন পদার্থ পাওয়া যায় না, তাকে মৌল বা মৌলিক পদার্থ বলে। যেমন– কার্বন, হাইড্রোজেন, লৌহ ইত্যাদি । বিস্তারিত দেখুন : মৌলিক পদার্থ
যৌগিক পদার্থ (compound matter)
যে পদার্থ থেকে দুই বা ততোধিক সম্পূর্ণ ভিন্ন ধর্মবিশিষ্ট মৌলিক পদার্থ পাওয়া যায়, সেই পদার্থকে যৌগ বা যৌগিক পদার্থ বলে। যেমন– পানি একটি যৌগিক পদার্থ। এটি দুইটি ভিন্ন মৌলিক পদার্থ হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন দ্বারা গঠিত । আবার পানিকে বিশ্লেষণ করা হলে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন পাওয়া যায় । মৌলিক পদার্থের সংখ্যা সীমিত হলেও যৌগিক পদার্থের অসীম সংখ্যক হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
মিশ্র পদার্থ (compound matter)
বিভিন্ন মৌলিক বা যৌগিক অণুর মিশ্রণে যে পদার্থ তৈরি হয়, তাকে মিশ্র পদার্থ বলা হয়। যেমন— বাতাস।
পদার্থ ও শক্তি (Matter and Energy) প্রকৃতিতে দুটি ভিন্ন বিষয়ের অস্তিত্ব আমরা বুঝতে পারি একটি জড় বা পদার্থ (matter) এবং অন্যটি হল শক্তি (energy) । পদার্থ (Matter) : যা ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য, যা কিছুটা স্থান দখল করে, যার ওজন আছে এবং বলপ্রয়োগের সাহায্যে যার স্থির বা গতিশীল অবস্থার পরিবর্তন করা যায়, তাকেই পদার্থ বলে । যেমন চেয়ার, টেবিল, ইট, বালি, খাতা, পেন্সিল ইত্যাদি । পদার্থের নির্দিষ্ট পরিমাণকে বস্তু বলে । যেমন প্লাস্টিক দিয়ে জলের বালতি, মগ তৈরি করা হয় সুতরাং জলের বালতি, মগ হল বস্তু কিন্তু এগুলির উপাদান প্লাস্টিক হল পদার্থ অর্থাৎ বস্তু যে উপাদানে তৈরি হয় তাকে জড় বা পদার্থ বলে । পৃথিবীতে জড়বস্তু এবং সজীব বস্তু এই দুই ধরনের বস্তু আমরা দেখতে পাই । ভর এবং ভার বা ওজন : বস্তুর ভার বা ওজন নির্ণয় : ভরের নিত্যতা সূত্র বা পদার্থের অবিনাশিতা সূত্র : শক্তির বিভিন্ন রূপ : শক্তির নিত্যতা সূত্র : শক্তির রূপান্তর : সূর্যই পৃথিবীর শক্তির প্রধান উৎস :
পদার্থের অবস্থাভেদ : পদার্থ তিনটি অবস্থায় থাকতে পারে। যথা: কঠিন, তরল ও বায়বীয়। তাপ পদার্থের তিন অবস্থায় রূপান্তরের কারণ। পানি একমাত্র পদার্থ যা প্রকৃতিতে কঠিন (বরফ), তরল (পানি) এবং বায়বীয় (জলীয় বাষ্প) তিনটি অবস্থাতেই পাওয়া যায়।
কঠিন পদার্থ : কঠিন পদার্থের নির্দিষ্ট আকার ও আয়তন এবং দৃঢ়তা আছে। আর অণূসমূহ পরস্পরের অতি সন্নিনিকটে অবস্থান করে। যেমন: বালু, পাথর, লবণ।
তরল পদার্থ : তরল পদার্থের নির্দিষ্ট আয়তন আছে কিন্তু নির্দিষ্ট আকার নেই। তরল পদার্থের অণুসমূহ পরস্পরের সন্নিনিকটে থাকে, তবে তাদের মধ্যকার আকর্ষণ কঠিন পদার্থের মত প্রবল নয়। উদাহরণ: পানি, কেরোসিন।
বায়বীয় পদার্থ : বায়বীয় পদার্থের নির্দিষ্ট আকার ও আয়তন নেই। বায়বীয় পদার্থের অনুসমূহের দূরত্ব অনেক বেশি, তাই আকর্ষণ শক্তি অনেক কম। ফলে তারা মুক্তভাবে চলাচল করে। উদাহরণ: নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, মিথেন।
গলনাংক : যে অবস্থায় কোন পদার্থ কঠিন পদার্থ হতে তরল অবস্থায় পরিণত হয়, তাকে সে পদার্থের গলনাংক বলে। পানির গলনাংক ০০ সেন্টিগ্রেড।
স্ফুটনাংক : যে তাপমাত্রায় কোন তরল পদার্থ ফুটতে থাকে, তাকে সে পদার্থের স্ফুটনাংক বলে। পানির স্ফুটনাংক ১০০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড।
ঠিক থাকে
কম হয়
বেশি হয়
কোনোটিই নয়
উর্ধ্বপাতন : কোন কোন ক্ষেত্রে কঠিন পদার্থকে উত্তপ্ত করলে তা তরলে রূপান্তরিত হয়, এই প্রক্রিয়াকে উর্ধ্বপাতন বলে। যেমন: কর্পুর, গন্ধক, আয়োডিন, ন্যাপথালিন, নিশাদল, অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড, কার্বন ডাই অক্সাইড, আর্সেনিক, বেনজয়িক এসিড ইত্যাদি।
পদার্থের পরিবর্তন : পদার্থের পরিবর্তন দুই ধরণের। যথা- (১) ভৌত বা অবস্থাগত পরিবর্তন (২) রাসায়নিক পরিবর্তন।
ভৌত বা অবস্থাগত পরিবর্তন : যে পরিবর্তনের ফলে পদার্থের শুধু বাহ্যিক আকার বা অবস্থার পরিবর্তন হয় কিন্তু নতুন কোন পদার্থে পরিনত হয় না, তাকে ভৌত পরিবর্তন বলে। যেমন: পানিকে ঠান্ডা করে বরফে এবং তাপ দিয়ে জলীয় বাষ্পে পরিণত করা, একটি লোহার টুকরাকে ঘর্ষণ করে চুম্বকে পরিণত করা ও তাপ দিয়ে মোম গলানো।
ভৌত পরিবর্তনের উদাহরণ :
➺ লোহাকে চুম্বকে পরিণত করা।
➺ চিনিকে পানিকে দ্রবীভূত করা।
➺ কঠিন মোমকে তাপে গলানো।
➺ বৈদ্যুতিক বাল্ব জ্বালানো।
➺ পানিকে ঠান্ডা বরফে পরিণত করা।
➺ পানিকে তাপ দিয়ে জলীয় বাষ্পে পরিণত করা।
রাসায়নিক পরিবর্তন : যে পরিবর্তনের ফলে এক বা একাধিক বস্তু প্রত্যেকে তার নিজস্ব সত্তা হারিয়ে সম্পূর্ণ নতুন ধর্ম বিশিষ্ট এক বা একাধিক নতুন বস্তুতে পরিণত হয়, তাকে রাসায়নিক পরিবর্তন বলে। যেমন: লোহায় মরিচা ধরা, দুধকে ছানায় পরিণত করা, চাল সিদ্ধ করে ভাতে পরিণত করা ও দিয়াশলাইয়ের কাঠি জ্বলানো।
রাসায়নিক পরিবর্তনের উদাহরণ :
➺ লোহায় মরিচা পড়া
➺ দুধকে ছানায় পরিণত করা
➺ মোমবাতির দহন
➺ দিয়াশলাইয়ের কাঠি জ্বালানো
➺ গাছের পাতায় খাদ্য তৈরি প্রক্রিয়া
তোমরা কি কখনো ভেবে দেখেছো আমাদের চারপাশের জিনিসগুলো কী দিয়ে তৈরি? তোমার শরীরই বা কী দিয়ে তৈরি? হ্যাঁ, তোমাদের মতো প্রাচীন দার্শনিকেরাও এ নিয়ে বহু চিন্তা-ভাবনা করেছেন। প্রাচীন গ্রিক দার্শনিকেরা ভাবতেন মাটি, পানি, বায়ু এবং আগুন ইত্যাদি মৌলিক পদার্থ আর অন্য সকল বস্তু এদের মিশ্রণে তৈরি। গ্রিসের দার্শনিক ডেমোক্রিটাস প্রথম বলেছিলেন, প্রত্যেক পদার্থের একক আছে যা অতি ক্ষুদ্র আর অবিভাজ্য। তিনি এর নাম দেন এটম। কোনো বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা দিয়ে এটি প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি বলে এটি কোনো গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। অবশেষে 1803 সালে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী জন ডাল্টন বিভিন্ন পরীক্ষায় প্রাপ্ত ফলাফলের উপর ভিত্তি করে পরমাণু সম্পর্কে একটি মতবাদ দেন যে, প্রতিটি পদার্থ অজস্র ক্ষুদ্র এবং অবিভাজ্য কণার সমন্বয়ে গঠিত। তিনি দার্শনিক ডেমোক্রিটাসের সম্মানে এ একক কণার নাম দেন Atom, যার অর্থ পরমাণু। এর পরে প্রমাণিত হয় যে, পরমাণু অবিভাজ্য নয় । এদের ভাঙলে পরমাণুর চেয়েও ক্ষুদ্র কণিকা ইলেকট্রন, প্রোটন, নিউট্রন ইত্যাদি পাওয়া যায়। পরমাণুর বিভিন্ন মডেল, পরমাণুর ইলেকট্রন বিন্যাস ইত্যাদি এ অধ্যায়ে আলোচনা করা হবে।
প্রাচীন গ্রীসে আজ থেকে প্রায় ২৫০০ বছর পূর্বে লুসিপাস ও তার ছাত্র ডেমোক্রিটাস মত প্রকাশ করেন যে, সব পদার্থ ুদ্র ুদ্র অবিভাজ্য অংশ দ্বারা গঠিত । ডেমোক্রিটাস এ অবিভাজ্য অংশের নাম দেন atoma । এ শব্দ দুটি গ্রিক শব্দ a(not) এবং temnein (to cut) হতে উদ্ভূত । অর্থাৎ ডেমোক্রিটাসের মতে, পদার্থকে ভাঙতে ভাঙতে এমন এক অবস্থানে পৌছা সম্ভব যখন তাকে আর ভাগ করা সম্ভব নয় । কিন্তু এরিস্টটল এ মতবাদের বিরোধিতা করেন । ফলে এ মতবাদ তখন চাপা পড়ে যায় । ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দীর দিকে ডেমোক্রিটাসের ও লুসিপাস এর মতবাদ সমর্থন লাভ করে । অবশেষে ব্রিটিশ স্কুল শিক্ষক জন ডাল্টন এ মতবাদকে বৈজ্ঞানিক মতবাদ হিসেবে প্রকাশ করেন ।
এ মতবাদের স্বীকার্যসমূহ নিম্নরূপঃ
১. প্রত্যেক পদার্থ পরমানু নামক অতি ুদ্র কণা দ্বারা গঠিত ।
২. একই পদার্থের পরমানুসমূহ প্রকৃতিতে ভরে ও ধর্মে একই ।
৩. ভিন্ন ভিন্ন পদার্থের পরমানুসমূহ প্রকৃতিতে ভরে ও ধর্মে ভিন্ন ভিন্ন ।
৪. পরমানু অবিবাজ্য । এদের ধ্বংস বা সৃষ্টি নেই ।
৫. দুই বা ততোধিক পদার্থের পরমানুর সংযোগে নতুন পদার্থের সৃষ্টি হয় । এ সংযোগ পূর্ণ সংখ্যার নির্দিষ্ট সরল অনুপাতে হয় ।
৬. পরমানুসমূহ সরাসরি রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশ নেয় ।
৭. রাসায়নিক বিক্রিয়ার সময় কোন পরমাণুর ধ্বংস বা সৃষ্টি হয় না । কেবলমাত্র তাদের মধ্যবর্তী সংযোগের প্রকৃতির পরিবর্তন ঘটে ।
ডাল্টনের পরমানুবাদ আধুনিক রসায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে । এ মতবাদের জন্যই ডাল্টনকে আধুনিক রসায়নের জনক বলা হয় ।
এ মতবাদের কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে। যা নিম্নরূপ ঃ
১. ডাল্টনের পরমানু মতবাদে মৌলিক ও যৌগিক উভয় পদার্থের ুদ্রতম অংশের নাম পরমানু বলা হয় । কিন্তু এদের মধ্যে বিশেষ কোন পার্থক্য দেখান হয়নি ।
২. এ মতবাদ অনুসারে একই মৌলের পরমানুর ভর একই । কিন্তু আধুনিক রসায়নের মতে একই মৌলের বিভিন্ন ভরের পরমানু আছে, যাদেরকে পরস্পরের আইসোটোপ বলা হয় । যেমন-
হাইড্রোজেনের তিনটি আইসোটোপ হলঃ
(ক)প্রোটিয়াম
(খ)ডিউটেরিয়াম
(গ)ট্রিটিয়াম
৩. এ মতবাদ অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন মৌলের পরমানু ভরে ও ধর্মে ভিন্ন । কিন্তু আধুনিক রসায়নের মতে, ভিন্ন ভিন্ন মৌলের আইসোটোপ সমূহের ভর পরস্পর সমান হতে পারে। যেমন-
নিকেল, তামা ও দস্তা এই তিনটি মৌলের একটি করে আইসোটোপ আছে যাদের প্রত্যেকের ভর ৬৪ একক ।
(ক) নিকেল
(খ) তামা
(গ) দস্তা
৪. ডাল্টনের মতবাদ অনুসারে পরমানুষমূহ অবিভাজ্য । কিন্তু আধুনিক রসায়নের কল্যানে আমরা জানি যে, পরমানুকে ভাঙলে ইলেক্ট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন নামক স্থায়ী মৌলিক কণিকা পাওয়া যায় ।
যদিও ডাল্টনের পরমাণু মতবাদে কিছু ত্রুটি আছে, কিন্তু এটি আধুনিক রসায়নের পথিকৃৎ।
পারমাণবিক ভর বা আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর
আমরা আগেই জেনেছি যে, কোনো মৌলের পরমাণুর ভরসংখ্যা হলো পরমাণুর নিউক্লিয়াসে উপস্থিত প্রোটন ও নিউট্রন সংখ্যার যোগফল। তাহলে ভরসংখ্যা নিশ্চয়ই হবে একটি পূর্ণসংখ্যা। কিন্তু তুমি যদি কপারের পারমাণবিক ভর দেখো তাহলে দেখবে সেটি হচ্ছে 63.5 আর ক্লোরিনের পারমাণবিক ভর হলো 35.5। এটা কীভাবে সম্ভব? আসলে এটি হলো আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর। সেটি কী? বা তার দরকারই বা কী?
ফ্লোরিনের একটি পরমাণুর ভর হলো 3.16 x
10
−
23
গ্রাম।
অ্যালুমিনিয়ামের একটি পরমাণুর ভর 4.482 x
10
−
23
গ্রাম।
কার্যক্ষেত্রে এত কম ভর ব্যবহার করা অনেক সমস্যা। সে জন্য একটি কার্বন 12 আইসোটোপের ভরের 1/12 অংশকে একক হিসেবে ধরে তার সাপেক্ষে পরমাণুর ভর মাপা হয়।
কার্বন 12 আইসোটোপের পারমাণবিক ভরের 1/12 অংশ হচ্ছে 1.66 x
10
−
24
গ্রাম
কাজেই কোনো মৌলের আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর হচ্ছে:
মৌলের একটি পরমাণুর ভর / 1 একটি কার্বন 12 আইসোটোপের পারমাণবিক ভরের 1/12 অংশ
কোনো মৌলের একটি পরমাণুর প্রকৃত ভর জানা থাকলে আমরা আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর বের করতে পারব। এক্ষেত্রে ঐ মৌলের একটি পরমাণুর প্রকৃত ভরকে 1.66 x 10-24 গ্রাম দ্বারা ভাগ করে আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর বের করা যায়।
যেমন: A1 এর 1টি পরমাণুর ভর 4.482 x
10
−
23
গ্রাম।
কাজেই Al মৌলের আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর = 4.482 x
10
−
23
গ্রাম / 1.66 x
10
−
24
গ্রাম = 27
কোনো মৌলের আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর হলো দুটি ভরের অনুপাত, সেজন্য আপেক্ষিক পারমাণবিক ভরের কোনো একক থাকে না।আইসোটোপের শতকরা হার থেকে মৌলের গড় আপেক্ষিক ভর নির্ণয়:
প্রকৃতিতে বেশির ভাগ মৌলেরই একাধিক আইসোটোপ রয়েছে। তাই যে মৌলের একাধিক আইসোটোপ আছে সেই মৌলের সকল আইসোটোপের প্রকৃতিতে প্রাপ্ত শতকরা হার থেকে মৌলের গড় আপেক্ষিক ভর এর মান নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করে হিসাব করা হয়।
ধাপ 1: প্রথমে কোনো মৌলের প্রত্যেকটি আইসোটোপের ভর সংখ্যা এবং প্রকৃতিতে প্রাপ্ত ঐ আইসোটোপের শতকরা পরিমাণ গুণ দিতে হবে।
ধাপ 2: প্রাপ্ত গুণফলগুলোকে যোগ করতে হবে।
ধাপ 3: প্রাপ্ত যোগফলকে 100 দ্বারা ভাগ করলেই ঐ মৌলের গড় আপেক্ষিক ভর পাওয়া যাবে।
ধরা যাক একটি মৌল A এর দুটি আইসোটোপ আছে। একটি আইসোটোপের ভর সংখ্যা p প্রকৃতিতে প্রাপ্ত ঐ আইসোটোপের শতকরা পরিমাণ m, অপর আইসোটোপের ভর সংখ্যা q প্রকৃতিতে প্রাপ্ত ঐ আইসোটোপের শতকরা পরিমাণ n তাহলে,
মৌল A এর গড় আপেক্ষিক পরমাণবিক ভর = pxm + qxn / 100
উদাহরণ: প্রকৃতিতে ক্লোরিনের 2টি আইসোটোপ আছে 35c1 এবং 37cl ।
প্রকৃতিতে প্রাপ্ত
35
C
l
এর শতকরা পরিমাণ 75% এবং
প্রকৃতিতে প্রাপ্ত
37
C
l
এর শতকরা পরিমাণ 25%
অতএব ক্লোরিনের গড় আপেক্ষিক পরমাণবিক ভর = 35x75+37X25 /100 = 35.5
এখানে উল্লেখ্য, তোমরা দেখবে পর্যায় সারণিতেও ক্লোরিনের গড় আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর 35.5 লেখা আছে। পর্যায় সারণিতে যে পারমাণবিক ভর লেখা আছে তা মূলত গড় আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর।
উদাহরণ: প্রকৃতিতে যদি কোনো মৌলের দুটি আইসোটোপ থাকে তাহলে সেই মৌলের গড় আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর থেকে ঐ মৌলের বিভিন্ন আইসোটোপের প্রকৃতিতে প্রাপ্ত শতকরা পরিমাণ বের করা যায়।
প্রকৃতিতে কপারের দুটি আইসোটোপ আছে
63
C
l
এবং
65
C
l
কপারের গড় পারমাণবিক আপেক্ষিক ভর 63.5 ।
ধরা যাক, প্রকৃতিতে প্রাপ্ত
63
C
l
এর শতকরা পরিমাণ x% এবং প্রকৃতিতে প্রাপ্ত
65
C
l
এর শতকরা পরিমাণ (100 - x)%
এখানে, কপারের গড় আপেক্ষিক পরমাণবিক ভর = x × 63 + (100 - x ) x 65 / 100 = 63.5
বা, x = 75%
প্রকৃতিতে প্রাপ্ত
63
C
l
এর শতকরা পরিমাণ = 75% এবং
প্রকৃতিতে প্রাপ্ত
65
C
l
এর শতকরা পরিমাণ (100-75) % = 25%
3.9.2 আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর থেকে আপেক্ষিক আণবিক ভর নির্ণয়:
কোনো মৌলিক বা যৌগিক পদার্থের অণুতে যে পরমাণুগুলো থাকে তাদের আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর নিজ নিজ পরমাণু সংখ্যা দিয়ে গুণ করে যোগ করলে প্রাপ্ত যোগফলই হলো ঐ অণুর আপেক্ষিক আণবিক ভর। আপেক্ষিক পারমাণবিক ভরকে পারমাণবিক ভর এবং আপেক্ষিক আণবিক ভরকে সাধারণভাবে আণবিক ভর হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
যেমন H2 অণুতে হাইড্রোজেন (H) পরমাণুর আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর হলো— 1 এবং পরমাণুর সংখ্যা— 2 তাই H2 অণুর আপেক্ষিক আণবিক ভর হবে: 1 × 2 = 2
তেমনই H2SO4 অণুতে উপস্থিত হাইড্রোজেন (H) এর আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর 1 এবং পরমাণুসংখ্যা 2, সালফার (S) পরমাণুর আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর 32 এবং পরমাণুর সংখ্যা 1 এবং অক্সিজেন পরমাণুর আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর 16 এবং পরমাণুর সংখ্যা 4। অতএব, H2SO4 এর আপেক্ষিক আণবিক ভর হবে 1 x 2 + 32 × 1 + 16 x 4 = 98
মৌলের প্রতীক
কোনো মৌলের ইংরেজি বা ল্যাটিন নামের সংক্ষিপ্ত রূপকে প্রতীক বলে। প্রত্যেকটি মৌলকে সংক্ষেপে প্রকাশ করতে তাদের আলাদা আলাদা প্রতীক ব্যবহার করা হয়। মৌলের প্রতীক লিখতে কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে হয়।
a) মৌলের ইংরেজি নামের প্রথম অক্ষর দিয়ে প্রতীক লেখা হয় এবং তা ইংরেজি বর্ণমালার বড় হাতের অক্ষর দিয়ে প্রকাশ করা হয়।
(b) যদি দুই বা দুইয়ের অধিক মৌলের ইংরেজি নামের প্রথম অক্ষর একই হয় তবে একটি মৌলকে নামের প্রথম অক্ষর (ইংরেজি বর্ণমালার বড় হাতের) দিয়ে প্রকাশ করা হয়। অন্যগুলোর ক্ষেত্রে প্রতীকটি দুই অক্ষরে লেখা হয়। নামের প্রথম অক্ষরটি ইংরেজি বর্ণমালার বড় হাতের অক্ষর এবং নামের অন্য একটি অক্ষর ছোট হাতের অক্ষর দিয়ে লেখা হয়।
(c) কিছু মৌলের প্রতীক তাদের ল্যাটিন নাম থেকে নেওয়া হয়েছে।
পরমাণু হলো মৌলিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা যার মধ্যে মৌলের গুণাগুণ থাকে। যেমন— নাইট্রোজেনের পরমাণুতে নাইট্রোজেনের ধর্ম বিদ্যমান আর অক্সিজেনের পরমাণুতে অক্সিজেনের ধর্ম বিদ্যমান।
দুই বা দুইয়ের অধিক সংখ্যক পরমাণু পরস্পরের সাথে রাসায়নিক বন্ধন-এর মাধ্যমে যুক্ত থাকলে তাকে অণু বলে। রাসায়নিক বন্ধন সম্পর্কে তোমরা পঞ্চম অধ্যায়ে বিস্তারিত জানবে। দুটি অক্সিজেন পরমাণু (O) পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে অক্সিজেন অণু (O2) গঠিত হয়। আবার, একটি কার্বন পরমাণু (C) দুটি অক্সিজেন পরমাণুর (0) সাথে যুক্ত হয়ে একটি কার্বন ডাই-অক্সাইড অণু (CO2) গঠিত হয়। একই মৌলের একাধিক পরমাণু পরস্পরের সাথে যুক্ত হলে তাকে মৌলের অণু বলে। যেমন—O2। ভিন্ন ভিন্ন মৌলের পরমাণু পরস্পর যুক্ত হলে তাকে যৌগের অণু বলে। যেমন- CO2
সংকেত
হাইড্রোজেনের একটি অণুকে প্রকাশ করতে Ha ব্যবহার করা হয়। যার অর্থ হলো একটি হাইড্রোজেনের অণুতে দুটি হাইড্রোজেনের পরমাণু (H) আছে। আবার, পানির একটি অণুকে প্রকাশ করতে H2O ব্যবহার করা হয়। এর অর্থ হচ্ছে পানির একটি অণুতে দুটি হাইড্রোজেন (H) এবং একটি অক্সিজেন পরমাণু (O) থাকে। নিচে সাধারণ কয়েকটি অপুর সংকেত দেখানো হলো
যৌগমূলক কাকে বলে। কিভাবে যৌগমূলকের যোজনী বের করা যায়।
যৌগমূলকঃ একাধিক মৌলের একাধিক পরমাণুর সমন্বয়ে গঠিত একটি পরমাণু গুচ্ছ যা একটি আয়নের ন্যায় আচরণ করে এবং বিক্রিয়া শেষে অপরিবর্তিত থাকে, সেসব পরমাণু গুচ্ছকে যৌগমূলক বলে।
যেমনঃ সালফেট (SO₄² - ) যৌগমূলক। কারণ এখানে সালফার ও অক্সিজেন এই দুটি মৌলের পাঁচটি পরমাণু যুক্ত হয়ে একটি পরমাণু গুচ্ছ গঠন করে যার নির্দিষ্ট আধান -2 আছে।
যৌগমূলকের যে চার্জ বা আধান থাকে সেই চার্জ বা আধান থেকে ধনাত্মক বা ঋণাত্মক চিহ্ন বাদ দিলে যে সংখ্যাটি থাকে তাই ঐ যৌগমূলকের যোজনী নির্দেশ করে।
যেমনঃ কার্বনেট (CO₃² -) যৌগমূলকের আধান বা চার্জ -2. এখান থেকে ঋণাত্মক (-) চিহ্ন টি বাদ দিলে দুই (2) থাকে। এই দুই হচ্ছে কার্বনেট যৌগমূলকের যোজনী।
নিচে কিছু যৌগমূলকের নাম, সংকেত, যোজনী, জারণ সংখ্যা যথাক্রমে দেওয়া হল ঃ
হাইড্রোক্সিল, OH-, 1, -1.
নাইট্রেট. NO₃ - 1, -1.
নাইট্রাইট NO₂ - 1, -1.
বাই সালফেট HSO₄ - 1, -1.
বাই কার্বনেট HCO₃ - 1, -1.
সালফেট SO₄² - 2, -2
সালফাইট SO₃ ² - 2, -2.
কার্বনেট CO₃ ² - 2, -2.
বাই ফসফেট HPO₄² - 2, -2
ফসফেট PO₄ ³ - 3, -3. অ্যামোনিয়াম NH₄+ 1, +1 ফসফোনিয়াম. PH₄+ 1, +1.
ইন্দিরা গান্ধী
বেগম খালেদা জিয়া
আংসান সুকী
মার্গারেট থ্যাচার
মৌলিক পদার্থের যে ক্ষুদ্রতম কণার মধ্যে মৌলটির সমস্ত ধর্ম উপস্থিত থাকে এবং যা রাসয়ানিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে তাকে মৌলিক পদার্থটির পরমাণু বলে। সমস্ত কঠিন, তরল, গ্যাস এবং আয়ন -এর গঠনের মূলে রয়েছে নিস্তরিত বা আধানগ্রস্ত পরমাণু। পরমাণুর আকার খুবই ক্ষুদ্র; সাধারনত এরা দৈর্ঘ্যে ১০০ পিকোমিটার (১ মিটারের ১০,০০০,০০০,০০০ ভাগের ১ ভাগ)।
পরমাণুর মাত্রা এই ক্ষুদ্রাকার হওয়ার কারণেই এর আচরনের বৈশিষ্টতা প্রথাগত পদার্থবিদ্যার সূত্র দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না।
কণা পদার্থবিজ্ঞানে মৌলিক কণা বা প্রাথমিক কণা হল সেসব কণা , যাদের ক্ষুদ্রতর কোন ভিত্তি বা গাঠনিক একক নেই অর্থাৎ এরা অন্য কোনো ক্ষুদ্রতর কণার সন্নিবেশে গঠিত হয়নি । যদি কোন মৌলিক কণার প্রকৃতপক্ষেই কোন ক্ষুদ্রতর একক না থাকে তবে তাকে মহাবিশ্বের গাঠনিক একক হিসাবে বিবেচনা করা হয় , যা থেকে অন্য সব কণা তৈরি হয়েছে । আদর্শ মডেল অনুযায়ী কোয়ার্ক , লেপটন এবং গেজ বোসনকে মৌলিক কণিকা হিসাবে বিবেচনা করা হয় ঐতিহাসিকভাবে , হ্যাড্রন , মেসন এবং বেরিয়ন (যেমন: প্রোটন এবং নিউট্রন) এমনকি পুরো পরমাণুই একসময় মৌলিক কণিকা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে । মৌলিক কণা তত্ত্বের একটি ভিত্তিসূচক ধারণা হল ২০ শতাব্দীর সূচণাভাগের "কোয়ান্টার" ধারণা , যা তড়িৎ-চৌম্বকীয় বিকিরণ সংক্রান্ত অধ্যয়নে নতুন যুগের সূচণা করেছে এবং কোয়ান্টাম বলবিদ্যার সূত্রপাত ঘটিয়েছে । গাণিতিক প্রয়োজনে মৌলিক কণাদিকে বিন্দু কণা হিসেবে বিবেচনা করা হয় , যদিও কিছু কণা তত্ত্ব যেমন স্ট্রিং তত্ত্বে এর ভৌত মাত্রার ধারণা দেয়া হয়েছে
পরমাণুর গঠন
সম্পাদনা
পরমানুর গঠন কেমন হতে পারে, তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা অনেক গবেষণা করেছেন । এর মধ্যে অন্যতম হলো ডাল্টনের পরমাণুবাদ । আধুনিক রসায়ন এর ভিত্তি বলে পরিচিত ডাল্টনের পরমাণুবাদে পরমাণুকে অবিভাজ্য ধরা হয়েছে। কিন্তু এ তত্ত্ব এখন অচল। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে প্রমাণিত হয় যে, পরমাণুর তিনটি উপাদান। যেসব সূক্ষ কণিকা দিয়ে পরমাণু গঠিত, তাদেরকে মৌলিক কণিকা বলে । এরা হচ্ছে ইলেকট্রন, প্রোটন এবং নিউট্রন । এ তিনটি কণিকা বিভিন্ন সংখ্যায় একত্রিত হয়ে ভিন্ন ভিন্ন পরমাণু গঠন করে । ধনাত্মক আধানযুক্ত প্রোটন এবং আধানহীন নিউট্রন একত্রিত হয়ে নিউক্লিয়াস গঠন করে আর এদেরকে ঘিরে ঋণাত্মক আধানের ইলেকট্রন ঘুরছে ।
কোন পরমাণুর নির্দিষ্ট সংখ্যক ইলেক্ট্রন ঐ পরমাণুর বিভিন্ন শক্তিস্তরের অন্তর্ভুক্ত নির্দিষ্ট উপশক্তিস্তরের বিভিন্ন অরবিটালে নির্দিষ্ট নিয়মে সজ্জিত থাকে, ইলেক্ট্রনের এই সজ্জাকে পরমাণুর ইলেক্ট্রন বিন্যাস বলে। ইলেক্ট্রন বিন্যাস পলির বর্জন নীতি, আউফবাউ নীতি ও হুন্ডের নিয়ম দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায়।
পলির বর্জন নীতি
সম্পাদনা
একটি পরামাণুতে দুটি ইলেক্ট্রনের (সাধারণভাবে দুটি ফার্মিয়ন এর) চারটি কোয়ান্টাম সংখ্যার মান কখনও একই হতে পারে না। অন্ততপক্ষে একটির মান দুটি ইলেক্ট্রনের বেলায় ভিন্ন হতে হয়।
আউফবাউ নীতি
সম্পাদনা
পরমাণুতে ইলেক্ট্রনসমূহ বিভিন্ন শক্তিস্তর দখলের সময় প্রথমে সবচেয়ে কম শক্তিসম্পন্ন স্তরে অবস্থান গ্রহণ করবে, নিম্ন শক্তিস্তর পূর্ণ হওয়ার পর পরবর্তী অপেক্ষাকৃত উচ্চতর শক্তি সম্পন্ন স্তরে গমন করবে। কোন স্তরের শক্তির মান নির্ভর করবে (n+l) এর মানের উপর।যেখানে n হলো কক্ষপথ নম্বর এবং l হলো অরবিটালের সহকারী কোয়ান্টাম সংখ্যা।
হুন্ডের নীতি
সম্পাদনা
“সমশক্তিসম্পন্ন অরবিটালগুলোতে ইলেকট্রনের প্রবেশের সময় যতক্ষণ পর্যন্ত অরবিটাল খালি থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত ইলেকট্রনগুলো অযুগ্মভাবে অরবিটালে প্রবেশ করবে এবং এ অযুগ্ম ইলেকট্রগুলোর স্পিন একমুখী হবে। ”
পারমাণবিক সংখ্যা: রসায়ন ও পদার্থ বিদ্যায় কোনো পরমাণুর কেন্দ্রে প্রোটনের সংখ্যাকে পারমাণবিক সংখ্যা বলে। আধান নিরপেক্ষ পরমাণুতে ইলেকট্রন-এর সংখ্যাও পারমাণবিক সংখ্যার সমান। পারমাণবিক সংখ্যা অনন্যভাবে একটি মৌলিক পদার্থকে চিহ্নিত করে। নিউক্লিয়াসের ধনাত্মক চার্জের সংখ্যা এবং পারমাণবিক সংখ্যা সমান থাকে। প্রোটনের ভর ও নিউট্রনের ভর প্রায় সমান বলে তাদের সমষ্টি অর্থাৎ পরমাণুর ভর সংখ্যাকেই পারমাণবিক ভর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ভর সংখ্যা হল নিউক্লিয়াসে প্রোটন ও নিউট্রনের মোট সংখ্যা যাকে A দিয়ে প্রকাশ করা হয়। পারমাণবিক সংখ্যাকে Z দ্বারা প্রকাশ করা হয় ।
ভর সংখ্যা (Mass Number) : কোনো মৌলের একটি পরমাণুর নিউক্লিয়াসের মধ্যে অবস্থিত প্রোটন এবং নিউট্রনের মোট সংখ্যাকে ওই মৌলের বা পরমাণুর ভরসংখ্যা বলে । অর্থাৎ ভরসংখ্যা = প্রোটন সংখ্যা + নিউট্রন সংখ্যা । ভরসংখ্যাকে 'A' অক্ষর দিয়ে প্রকাশ করা হয় ।
• ভর সংখ্যা এবং পারমাণবিক সংখ্যার মধ্যে সম্পর্ক : কোনো মৌলের পরমাণুতে যদি P -সংখ্যক প্রোটন এবং N -সংখ্যক নিউট্রন থাকে, তাহলে
পরমাণুটির ভরসংখ্যা (A) = প্রোটন-সংখ্যা (P) + নিউট্রন-সংখ্যা (N)
যেহেতু, প্রোটন-সংখ্যা (P) = পারমাণবিক-সংখ্যা (Z)
অতএব, ভরসংখ্যা (A) = পারমাণবিক-সংখ্যা (Z) + নিউট্রন-সংখ্যা (N) বা Z = A - N
অক্সিজেনের পারমাণবিক সংখ্যা (Z) = 8 এবং ভর-সংখ্যা (A) = 16 ; সুতরাং অক্সিজেনকে 8O16 লিখে প্রকাশ করা হয় ।
পর্যায় সারণি হচ্ছে বিভিন্ন মৌলিক পদার্থকে একত্রে উপস্থাপনের একটি আন্তর্জাতিক ভাবে গৃহীত ছক। আজ পর্যন্ত আবিষ্কৃত মৌলসমূহকে তাদের ইলেকট্রন বিন্যাসের উপর ভিত্তি করে, ধর্মাবলী বিবেচনায় নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণীতে ও পর্যায়ে বিভক্ত করে মৌলসমূহের পারমাণবিক সংখ্যার ক্রমানুসারে পর্যায় সারণিতে সাজানো হয়েছে। পর্যায় সারণিতে মোট ১১৮টি মৌল রয়েছে।এতে ২০টি অধাতু ও ৯১টি ধাতু এবং ৭টি অপধাতু রয়েছে।বিশেষ দ্রষ্টব্য
সম্পাদনা
অ্যাক্টিনাইড ও ল্যান্থানাইড সিরিজের মৌলসমূহকে একত্রে "বিরল মৃত্তিকা ধাতু" নামে অভিহিত করা হয়। এই মৌলগুলোর শ্রেণী সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্যের জন্য এখানে ক্লিক করুন।
ক্ষার ধাতু, মৃৎক্ষার ধাতু, অবস্থান্তর মৌল, অন্তঃঅবস্থান্তর মৌল, ল্যান্থানাইড, অ্যাক্টিনাইড এবং দুর্বল ধাতু এই সবগুলোকে একত্রে ধাতু বলা হয়।
হ্যালোজেন ও নিষ্ক্রিয় গ্যসসমূহও অধাতু।
অবস্থা
সম্পাদনা
আদর্শ তাপমাত্রা ও চাপ (0°সে. এবং ১ atm) ধর্তব্য
যে সমস্ত মৌলের ব্লক red রংয়ের সেগুলো বায়বীয়।
যে সমস্ত মৌলের ব্লক green রংয়ের সেগুলো তরল।
যে সমস্ত মৌলের ব্লক black রংয়ের সেগুলো তরল।
প্রকৃতিগত সাংগঠনিক বৈশিষ্ট্যসমূহ
সম্পাদনা
যে মৌলগুলোর ব্লকে অবিচ্ছিন্ন সীমারেখা আছে সেগুলো আদিম মৌল, অর্থাৎ তাদের যেকোন একটি স্থিতিশীল আইসোটোপের বয়স পৃথিবীর বয়সের চেয়ে বেশি।
যে মৌলগুলোর ব্লকে ড্যাশ আকারের সীমারেখা আছে সেগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে অন্যান্য মৌলের তেজস্ক্রিয় ভাঙনের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় এবং এগুলোর এমন কোন স্থিতিশীল আইসোটোপ নেই যেটির বয়স পৃথিবীর বয়সের চেয়ে বেশি। তবে এগুলোর মধ্যে কয়েকটিকে কিছু তেজস্ক্রিয় আকরিকের মধ্যে খুব সামান্য পরিমাণে পাওয়া যায়।
যে সমস্ত মৌলের ব্লকে ডট আকারের সীমারেখা রয়েছে সেগুলো কৃত্রিম মৌল হিসেবে পরিচিত, অর্থাৎ এগুলো প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি হয়না।
দ্রষ্টব্য: ক্যালিফোর্নিয়াম (Cf) নামক মৌলটি যদিও পৃথিবীতে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি হয়না, তথাপি ক্যালিফোর্নিয়াম এবং এর তেজস্ক্রিয় ভাঙনের মাধ্যমে সৃষ্ট অন্যান্য কিছু মৌল মহাবিশ্বের অন্যান্য স্থানে পাওয়া যায়। বিভিন্ন সুপারনোভা থেকে প্রাপ্ত * বর্ণালীতে এ মৌলসমূহের তড়িৎচৌম্বক বিকিরণ রেখার অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
যে মৌলগুলোর ব্লকে কোন সীমারেখা নেই সেগুলো প্রকৃতিতেও পাওয়া যায় না এবং কৃত্রিমভাবেও সেগুলোকে এখন পর্যন্ত তৈরি করা সম্ভব হয়নি।
মৌলের অবস্থান চিহ্নিতকরণ
সম্পাদনা
উপশক্তিস্তর: s p d f g
পর্যায়
১ 1s
২ 2s 2p
৩ 3s 3p
৪ 4s 4p 3d
৫ 5s 5p 4d
৬ 6s 6p 5d 4f
৭ 7s 7p 6d 5f
৮ 8s 8p 7d 6f 5g
৯ 9s 9p 8d 7f 6g
ভর সংখ্যা (Mass Number) : কোনো মৌলের একটি পরমাণুর নিউক্লিয়াসের মধ্যে অবস্থিত প্রোটন এবং নিউট্রনের মোট সংখ্যাকে ওই মৌলের বা পরমাণুর ভরসংখ্যা বলে । অর্থাৎ ভরসংখ্যা = প্রোটন সংখ্যা + নিউট্রন সংখ্যা । ভরসংখ্যাকে 'A' অক্ষর দিয়ে প্রকাশ করা হয় ।
• ভর সংখ্যা এবং পারমাণবিক সংখ্যার মধ্যে সম্পর্ক : কোনো মৌলের পরমাণুতে যদি P -সংখ্যক প্রোটন এবং N -সংখ্যক নিউট্রন থাকে, তাহলে
পরমাণুটির ভরসংখ্যা (A) = প্রোটন-সংখ্যা (P) + নিউট্রন-সংখ্যা (N)
যেহেতু, প্রোটন-সংখ্যা (P) = পারমাণবিক-সংখ্যা (Z)
অতএব, ভরসংখ্যা (A) = পারমাণবিক-সংখ্যা (Z) + নিউট্রন-সংখ্যা (N) বা Z = A - N
অক্সিজেনের পারমাণবিক সংখ্যা (Z) = 8 এবং ভর-সংখ্যা (A) = 16 ; সুতরাং অক্সিজেনকে 8O16 লিখে প্রকাশ করা হয় ।
পর্যায় সারণি হচ্ছে বিভিন্ন মৌলিক পদার্থকে একত্রে উপস্থাপনের একটি আন্তর্জাতিক ভাবে গৃহীত ছক। আজ পর্যন্ত আবিষ্কৃত মৌলসমূহকে তাদের ইলেকট্রন বিন্যাসের উপর ভিত্তি করে, ধর্মাবলী বিবেচনায় নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণীতে ও পর্যায়ে বিভক্ত করে মৌলসমূহের পারমাণবিক সংখ্যার ক্রমানুসারে পর্যায় সারণিতে সাজানো হয়েছে। পর্যায় সারণিতে মোট ১১৮টি মৌল রয়েছে।এতে ২০টি অধাতু ও ৯১টি ধাতু এবং ৭টি অপধাতু রয়েছে।বিশেষ দ্রষ্টব্য
সম্পাদনা
অ্যাক্টিনাইড ও ল্যান্থানাইড সিরিজের মৌলসমূহকে একত্রে "বিরল মৃত্তিকা ধাতু" নামে অভিহিত করা হয়। এই মৌলগুলোর শ্রেণী সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্যের জন্য এখানে ক্লিক করুন।
ক্ষার ধাতু, মৃৎক্ষার ধাতু, অবস্থান্তর মৌল, অন্তঃঅবস্থান্তর মৌল, ল্যান্থানাইড, অ্যাক্টিনাইড এবং দুর্বল ধাতু এই সবগুলোকে একত্রে ধাতু বলা হয়।
হ্যালোজেন ও নিষ্ক্রিয় গ্যসসমূহও অধাতু।
অবস্থা
সম্পাদনা
আদর্শ তাপমাত্রা ও চাপ (0°সে. এবং ১ atm) ধর্তব্য
যে সমস্ত মৌলের ব্লক red রংয়ের সেগুলো বায়বীয়।
যে সমস্ত মৌলের ব্লক green রংয়ের সেগুলো তরল।
যে সমস্ত মৌলের ব্লক black রংয়ের সেগুলো তরল।
প্রকৃতিগত সাংগঠনিক বৈশিষ্ট্যসমূহ
সম্পাদনা
যে মৌলগুলোর ব্লকে অবিচ্ছিন্ন সীমারেখা আছে সেগুলো আদিম মৌল, অর্থাৎ তাদের যেকোন একটি স্থিতিশীল আইসোটোপের বয়স পৃথিবীর বয়সের চেয়ে বেশি।
যে মৌলগুলোর ব্লকে ড্যাশ আকারের সীমারেখা আছে সেগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে অন্যান্য মৌলের তেজস্ক্রিয় ভাঙনের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় এবং এগুলোর এমন কোন স্থিতিশীল আইসোটোপ নেই যেটির বয়স পৃথিবীর বয়সের চেয়ে বেশি। তবে এগুলোর মধ্যে কয়েকটিকে কিছু তেজস্ক্রিয় আকরিকের মধ্যে খুব সামান্য পরিমাণে পাওয়া যায়।
যে সমস্ত মৌলের ব্লকে ডট আকারের সীমারেখা রয়েছে সেগুলো কৃত্রিম মৌল হিসেবে পরিচিত, অর্থাৎ এগুলো প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি হয়না।
দ্রষ্টব্য: ক্যালিফোর্নিয়াম (Cf) নামক মৌলটি যদিও পৃথিবীতে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি হয়না, তথাপি ক্যালিফোর্নিয়াম এবং এর তেজস্ক্রিয় ভাঙনের মাধ্যমে সৃষ্ট অন্যান্য কিছু মৌল মহাবিশ্বের অন্যান্য স্থানে পাওয়া যায়। বিভিন্ন সুপারনোভা থেকে প্রাপ্ত * বর্ণালীতে এ মৌলসমূহের তড়িৎচৌম্বক বিকিরণ রেখার অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
যে মৌলগুলোর ব্লকে কোন সীমারেখা নেই সেগুলো প্রকৃতিতেও পাওয়া যায় না এবং কৃত্রিমভাবেও সেগুলোকে এখন পর্যন্ত তৈরি করা সম্ভব হয়নি।
মৌলের অবস্থান চিহ্নিতকরণ
সম্পাদনা
উপশক্তিস্তর: s p d f g
পর্যায়
১ 1s
২ 2s 2p
৩ 3s 3p
৪ 4s 4p 3d
৫ 5s 5p 4d
৬ 6s 6p 5d 4f
৭ 7s 7p 6d 5f
৮ 8s 8p 7d 6f 5g
৯ 9s 9p 8d 7f 6g
সমস্থানিক বা আইসোটোপ হল একই উপাদানের স্বতন্ত্র পারমাণবিক প্রজাতি (বা নিউক্লাইডস, প্রযুক্তিগত শব্দ হিসাবে)।[১] তাদের একই পারমাণবিক সংখ্যা (তাদের নিউক্লিয়াসে প্রোটনের সংখ্যা) এবং পর্যায় সারণী[২]তে অবস্থান (এবং তাই একই রাসায়নিক উপাদানের অন্তর্গত), কিন্তু তাদের নিউক্লিয়াসে নিউট্রনের বিভিন্ন সংখ্যার কারণে নিউক্লিয়ন সংখ্যায় (ভর সংখ্যা) পার্থক্য রয়েছে। যদিও একটি প্রদত্ত উপাদানের সমস্ত আইসোটোপের প্রায় একই রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, তাদের বিভিন্ন পারমাণবিক ভর এবং ভৌত বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আইসোটোপ শব্দটি গ্রীক মূল আইসোস (ἴσος "সমান") এবং টোপোস (τόπος "স্থান") থেকে গঠিত, যার অর্থ "একই জায়গা"; এইভাবে, নামের পিছনে অর্থ হল যে একটি একক মৌলের বিভিন্ন আইসোটোপ পর্যায় সারণীতে একই অবস্থান দখল করে।[৩] 1913 সালে স্কটিশ ডাক্তার এবং লেখক মার্গারেট টড ব্রিটিশ রসায়নবিদ ফ্রেডেরিক সডির[৪] পরামর্শে এটি তৈরি করেছিলেন।[৫] পরমাণুর নিউক্লিয়াসের মধ্যে থাকা প্রোটনের সংখ্যাকে এর পারমাণবিক সংখ্যা বলা হয় এবং এটি নিস্তরিত (অ-আয়নিত) পরমাণুর ইলেকট্রনের সংখ্যার সমান। প্রতিটি পারমাণবিক সংখ্যা একটি নির্দিষ্ট উপাদান সনাক্ত করে, কিন্তু আইসোটোপ নয়; একটি প্রদত্ত উপাদানের একটি পরমাণুর নিউট্রনের সংখ্যা বিস্তৃত হতে পারে। নিউক্লিয়াসে নিউক্লিয়নের সংখ্যা (উভয় প্রোটন এবং নিউট্রন) হল পরমাণুর ভর সংখ্যা এবং প্রদত্ত উপাদানের প্রতিটি আইসোটোপের একটি আলাদা ভর সংখ্যা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, কার্বন-12, কার্বন-13 এবং কার্বন-14 হল কার্বনের তিনটি আইসোটোপ যার ভর সংখ্যা যথাক্রমে 12, 13 এবং 14।[৬] কার্বনের পারমাণবিক সংখ্যা 6, যার মানে প্রতিটি কার্বন পরমাণুতে 6 টি প্রোটন থাকে যাতে এই আইসোটোপের নিউট্রন সংখ্যা যথাক্রমে 6, 7 এবং 8 হয়।
প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া হাইড্রোজেনের তিনটি আইসোটোপ। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় এই যে হাইড্রোজেনের প্রতিটি আইসোটোপের একটি করে প্রোটন রয়েছে। হাইড্রোজেনের আইসোটোপগুলোকে নিউক্লিয়াসে থাকা নিউট্রনের সংখ্যার ভিত্তিতে সনাক্ত করা হয়। বাম দিকের আইসোটোপকে প্রোটিয়াম (1H) বলা হয়, এতে কোন নিউট্রন নেই; মাঝখানের আইসোটোপকে ডিউটেরিয়াম (2H) বলা হয়, এতে একটি নিউট্রন রয়েছে এবং ডানপাশের আইসোটোপটি হল ট্রিটিয়াম (3H), এতে দুটি নিউট্রন রয়েছে৷
যেসব পরমাণুর নিউট্রন সংখ্যা সমান কিন্তু প্রোটন সংখ্যা ও ভর সংখ্যা ভিন্ন হয়, তাদেরকে পরস্পরের আইসোটোন বলা হয়।[১] যেমন: 36S, 37Cl, 38Ar, 39K এরা পরস্পরের আইসোটোন। কারণ এদের প্রত্যেকের ক্ষেত্রে নিউট্রন সংখ্যা ২০ কিন্তু এদের ভর সংখ্যা তথা প্রোটন সংখ্যা অসমান
যেসব মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা এবং প্রোটন সংখ্যা ভিন্ন তবে, ভর সংখ্যা একই হয়ে থাকে তাদেরকে পরষ্পরের আইসোবার বলা হয়।
***আইসোবার= ভর সমান, প্রোটন ভিন্ন; পৃথক মৌল।***
যেমনঃ
Cu (কপার) এর পারমাণবিক সংখ্যা 29, এবং
Zn (জিংক) এর পারমাণবিক সংখ্যা 30
তবে উভয় মৌলের ভরসংখ্যা 65। ফলে এরা পরষ্পরের আইসোবার।
একইভাবে, K(পটাসিয়াম), Ca(ক্যালসিয়াম) একে অপরের আইসোবার।
সোডিয়াম (Na)
বাতাস সোডিয়াম এর নাথে ক্ষ তাপমাত্রায় বিক্রিয়া করে না। তবে আর্দ্র বাতাসের সংস্পর্শে সোডিয়াম বায়ুর জলীয বাষ্প এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইডের সাথে বিক্রিয়া করে ধীরে ধীরে সোডিয়াম কার্বনেটে পরিণত হয়। এজন্য সোডিয়ামকে পেট্রোল বা কেরোসিনের নিচে রাখা হয়।
ক্যালসিয়াম (Ca)
চক
ক্যালসিয়াম কার্বনেট (CaCO3)
চুন
ক্যালসিয়াম অক্সাইড (CaO)
কলিচুন বা স্ল্যাকেড লাইম
ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড (Ca(OH)2
সোডা লাইম
ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড ও সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড এর মিশ্রণ (CaHNaO2)
প্লাস্টার অফ প্যারিস
আংশিক অনার্দ্র ক্যালসিয়াম সালফেট 2(CaSO4).H2O
ব্লিচিং পাউডার
ক্যালসিয়াম ক্লোরাহাইপোক্লোরাইট (Ca(OCl)Cl
জিঙ্ক বা দস্তা (Zn)
জিঙ্ক সবচেয়ে তাড়াতাড়ি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। [*] তুঁতে বিষাক্ত। এটি ছত্রানাশক এবং কীটনাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
ভিট্রিওল
ধাতব যৌগ
সংকেত
সাদা ভিট্রিয়ল
আর্দ্র জিঙ্ক সালফেট (ZnSO4.7H2O)
গ্রিন ভিট্রিয়ল
আর্দ্র ফেরাস সালফেট (FeSO4.7H2O)
ব্লু ভিট্রিয়ল বা তুঁতে [*]
আর্দ্র কপার সালফেট (CuSO4.5H2O)
লোহা বা আয়রন (Fe)
সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ লোহা ধাতুরূপে বিশেষ কাজে লাগে না। যে রৈাহা ধাতু রূপে ব্যবহৃত হয় তাহার মধ্যে কার্বন ও অন্যান্য ধাতু মিশ্রিত থাকে। লোহার মধ্যে কার্বন ও অন্যান্য ধাতুর পরিমাণ অনুযায়ী লোহাকে প্রধানত তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়
পারদ (Mercury)
পারদ (Hg) সর্বাপেক্ষা নিম্ন গলনাঙ্কবিশিষ্ট ধাতু। এটি স্বাভাবিক তাপমাত্রায় তরল অবস্থায় থাকে। পারদ ব্যতীত সিজিয়ামই একমাত্র ধাতু যা সাধারণ তাপমাত্রায় তরল। তরল পদার্থগুলোর মধ্যে পারদ সর্বাপেক্ষা ভারী। থার্মোমিটারে পারদ বহুলভাবে ব্যবহৃত হয় কারণ অল্প তাপে বহুলভাবে ব্যবহৃত হয় কারণ অল্প তাপে পারদের আয়তন অনেক বেশি বৃদ্ধি পায়। ফলে তাপমাত্রা সহজে সূক্ষভাবে মাপা যায়।
প্রফুল্ল চন্দ্র রায় (১৮৬১-১৯৬৪৪ খ্রি.)
প্রফুল্ল চন্দ্র রায় (সংক্ষেপে পি.সি.রায়) একজন প্রখ্যাত বাঙ্গালি রসায়নবিদ। তিনি বেঙ্গল কেমিক্যাল (ভারতের প্রথম ঔষধ কোম্পানি) এর প্রতিষ্ঠাতা এবং মারকিউরাস নাইট্রাইট এর আবিষ্কারক।
সংকর ধাতু (Alloy)
দুই ততোধিক ধাতু পরস্পরের সাথে মিশে যে সমসত্ব বা অসমসত্ব মিশ্রণ উৎপন্ন করে, সেই কঠিন ধাতব পদার্থকে সংকর ধাতু বলে। যেমন: কাঁসা হলো কপার ও টিনের সংকর ধাতু।
সংকর ধাতু
রাসায়নিক সংযুক্তি
ব্রোঞ্জ (Bronze)
৯০% তামা + ১০% টিন
পিতল (Brass)
তামা ৮০% + দস্তা (জিঙ্ক)-২০%
গান মেটাল
তামা ৮৮% + ১০% টিন + দস্তা (জিঙ্ক)-২%
ডুরালামিন
অ্যালুমিনিয়ামের সাথে মেশানো হয় কপার, ম্যাগনেসিয়াম এবং ম্যাঙ্গানিজ।
টাইপ মেটাল
সীসা ৭৫% + অ্যানিাটমনি ২০% + টিন ৫%
কার্বন (বহুমুখী ব্যবহার):
কার্বন অধাতু এবং বিজারক। কার্বনের দানাদার রূপভেদ হলো গ্রাফাইট ও হীরক, অদানাদার রূপভেদ হলো কোক কার্বন, চারকোল, কয়লা ও কার্বন ব্ল্যাক। প্রকৃতিতে প্রাপ্ত সবচেয়ে কঠিন পদার্থ হীরক। হীরক কাচ কাটতে ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন গ্রেডের (2B,HB) উড পেন্সিলের ‘সীস’ হিসেবে গ্রাফাইট ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও সোডিয়াম ধাতুর নিষ্কাশনে গ্রাফাইট অ্যানোড হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2):
কার্বন ডাই অক্সাইড এসিড ধর্মী বা অম্লধর্মী গ্রাস, এটি পানিতে দ্রবীভূত CO2 + H2O = H2CO3 (কার্বনিক এসিড) হয়ে দুর্বল কার্বনিক এসিড তৈরি করে; ফলে এ গ্যাসের দ্রবণ নীল লিটমাসকে লাল করে। পানিতে কার্বন ডাই অক্সাইডের দ্রবণকে সোডা ওয়াটার বা কার্বোনেট ওয়াটার (H2CO3) বলে। কার্বন ডাই অক্সাইডের দ্রবণকে সোডা ওয়াটার তৈরি করা হয় যা কোমল পানীয় (যেমন; কোকাকোলা, পেপসিকোলা) তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। তরল কার্বন ডাই অক্সাইডকে দ্রুত বাষ্পায়িত করতে গেলে এর কিছু অংশ জমে কঠিন অবস্থা প্রাপ্ত হয়। একে শুষ্ক রবফ (Dry Ice) বলা হয়। রাসায়নিক অগ্নি নির্বাপক অগ্নিতে অক্সিজেন সরবরাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। কার্বন ডাই অক্সাইড নিজে জ্বলেনা আবার অন্যকেও জ্বলতে সাহায্য করে না। এজন্য অগ্নি নির্বাপক সিলিন্ডারে তরল কার্বন ডাই অক্সাইড ব্যবহার করা হয়।
অক্সিজেন (O)
১৭৭৪ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ রসায়নবিদ জোসেফ প্রিস্টলে অক্সিজেন (অম্লজান) আবিষ্কার করেন। অক্সিজেন কথাটির অর্থ অম্ল উৎপাদক। অষ্টাদশ শতাব্দীতে বিজ্ঞানী অ্যান্টনি ল্যাভয়সিয়ের ‘অম্লজান’ নামটি নির্দিষ্ট করেন, কারণ তখন মনে করা হতো সকল অম্লের মধ্যে অক্সিজেন বিদ্যমান থাকে যা ভুল ছিল। সকল প্রাণীর শ্বসনের জন্য অক্সিজেন অত্যাবশ্যক। হাসপাতালে ব্যবহৃত অক্সিজেন সিলিন্ডারে ৯৩% অক্সিজেন থাকে।
যে পানিতে কঠিন বস্তু (লবণ) বেশি দ্রবীভূত থাকে সে পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ কম। যেমন: সমুদ্রের পানিতে কঠিন বস্তু (লবণ) দ্রবীভূত থাকে কিন্তু নদীর পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ বেশি থাকে।
মস্তিষ্ক
রক্ত
হৃৎপিন্ড
ফুসফুস
নাইট্রোজেন (N)
আকাশে বিদ্যুৎ ক্ষরণের ফলে নাইট্রোজেনের অক্সাইডসমূহ তৈরি হয়, যা পানির সাথে মিশে নাইট্রিক এসিড উৎপন্ন করে। এ নাইট্রিক এসিড বৃষ্টির পানির সাথে মিশে মাটিতে পতিত হয় এবং জমির ক্ষারীয় উপাদানের সাথে বিক্রিয়া করে নাইট্রেট লবণ উৎপন্ন করে। উদ্ভিদ এ নাইট্রেট গ্রহণ করে তাকে প্রোটিনে রূপান্তরিত করে, যা প্রাণিসকল গ্রহণ করে। উদ্ভিদ ও প্রাণির জীবন অবসানের পর পচন ক্রিয়ায় প্রোটিনের কিছু অংশ নাইট্রোজেন গ্যাসে পরিণত হয়। এভাবে প্রকৃতিতে “নাইট্রোজেন চক্র” চলে।
নাইট্রোজেন অক্সাইড:
নাইট্রাস অক্সাইড (N2O) এর মৃদু মিষ্টি গন্ধ আছে। নিশ্বাসের সাথে এটি অল্প পরিমাণ গ্রহণ করলে হাসির উদ্রেক করে। এজন্য একে লাফিং গ্যাস বলে। মৃদু চেতনা নাশকরূপে N2O ব্যবহার করা হয়।
ফসফরাস (P): ফসফরাসের দুটি রূপভেদ আছে। যথা- লোহিত ফসফরাস ও শ্বেত ফসফরাস। শ্বেত ফসফরাস বেশি সক্রিয়। শ্বেত ফসফরাসের গন্ধ রসুনের মত। দিয়াশলাইয়ের কাঠির মাথায় রৈাহিত ফসফরাস ব্যবহৃত হয়। দিয়াশলাইয়ের বক্সের দু-ধারে কাগজের উপর যে বারুদ থাকে তা আসলে কাচচূর্ণ মিশ্রিত ফসফরাস। ফসফরাস পেন্টাক্সাইড (P2O5) নিরুদক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। গ্যাস মাক্সের প্রধান উপাদান ফসফরাস পেন্টাক্সাইড।
ফসফরাস (P): ফসফরাসের দুটি রূপভেদ আছে। যথা- লোহিত ফসফরাস ও শ্বেত ফসফরাস। শ্বেত ফসফরাস বেশি সক্রিয়। শ্বেত ফসফরাসের গন্ধ রসুনের মত। দিয়াশলাইয়ের কাঠির মাথায় রৈাহিত ফসফরাস ব্যবহৃত হয়। দিয়াশলাইয়ের বক্সের দু-ধারে কাগজের উপর যে বারুদ থাকে তা আসলে কাচচূর্ণ মিশ্রিত ফসফরাস। ফসফরাস পেন্টাক্সাইড (P2O5) নিরুদক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। গ্যাস মাক্সের প্রধান উপাদান ফসফরাস পেন্টাক্সাইড।
হ্যালোজেন (Halogen): হ্যালোজেন শব্দের অর্থ ‘সামুদ্রিক লবণ উৎপাদক’। হ্যালোজেন বলতে ফ্লোরিন (F2), ক্লোরিন (Cl2), ব্রোমিন (Br2) এবং আয়োডিন (I2) এ চারটি মৌলকেই বোঝায়। সামুদ্রিক শৈবালে আয়োডিন পাওয়া যায়। পান করা পানির সাথে ক্লোরিন মিশানো হয় কারণ ক্লোরিন পানিতে থাকা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। হ্যালোজেন এসিড শক্তির ক্রম: Hl ˃HBr ˃HCl ˃HF। পর্যায় সারণিতে হ্যালোজেনগুলোর VllA গ্রুপে অবস্থান করে।
নিষ্ক্রিয় গ্যাস (Noble Gas): পর্যায় সারণির শূন্য গ্রুপের মৌলসমূহ রাসায়নিকভাবে নিষ্ক্রিয় এবং কক্ষ তাপমাত্রায় গ্যাসীয়। এদের নিষ্ক্রিয় গ্যাস বলে। নিষ্ক্রিয় গ্যাস ৬টি যথা- হিলিয়াম (He), নিয়ন (Ne), আর্গন (Ar), ক্রিপ্টন (Kr), জেনন (Xe) এবং রেডন (Rn)। নিষ্ক্রিয় গ্যাসমূহের সর্ববহিঃস্থ স্তরে ৮টি ইলেকট্রন থাকে। ব্যতিক্রম হিলিয়াম। হিলিয়ামের সর্ববহিঃস্থ স্তরে ২টি ইলেকট্রন থাকে। সূর্যে মৌলিক পদার্থের মধ্যে হিলিয়াম (He) এর পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। রেডন তেজষ্ক্রিয় মৌল। বিজ্ঞানী ডর্ন ১৯০০ সালে রেডিয়ামের তেজষ্ক্রিয় বিভাজন হতে রেডন আবিষ্কার করেন।
এক নজরে ৬টি নিষ্ক্রিয় গ্যাস
2 4 ,00260-He-Helium
10-20,179-Ne-Neon
18-39,948-Ar-Argon
36-83,80-Kr-Krypton
54-131,30-Xe-Xenon
86-222,00-Rn-Radon
ব্যবহার
(১) হাইড্রোজেন হিলিয়াম অপেক্ষা হালকা হলেও হাইড্রোজেন দাহ্য পক্ষান্তরে হিলিয়াম নিষ্ক্রিয়। এজন্য বেলুনে এবং ডুবুরিদের জন্য হাইড্রোজেনের পরিবর্তে হিলিয়াম ব্যবহার করা হয়।
(২) ফটোগ্রাফিক ফ্লাশ লাইটে জেনন গ্যাস ব্যবহৃত হয়।
এসিড, ক্ষার ও লবণ
Acid, Alkali & Salt
এসিড (Acid)
যদি কোনো যৌগের অণুতে এক বা একাধিক প্রতিস্থাপিনীয় হাইড্রোজেন পরমাণু থাকে এবং ১ প্রতিস্থাপনীয় হাইড্রোজেন পরমাণু কোনো ধাতু বা ধাতুর ন্যায় ক্রিয়াশীল কোনো যৌগমূল দাস আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে প্রতিস্থাপিত করা যায় এবং যা ক্ষারকের সাথে বিক্রিয়া করে লবণ ও পানি উৎপন্ন করে, তাকে অম্ল বলে। অন্যভাবে বলা যায়, যে যৌগ বা আয়ন অন্য পদার্থকে প্রোটন দান করতে পারে, তাকে অম্ল বলে। উদাহরণ: সালফিউরিক এসিড (H2SO4), নাইট্রিক এসিড (HNO3) ইত্যাদি। এসিড সাধারণত টকস্বাদযুক্ত হয়ে থাকে।
ক্ষারক ও ক্ষার (Base & Alkali)
ধাতুর অক্সাইড ও হাইড্রোক্সাইডকে ক্ষারক বলে। অন্যভাবে বলা যায়, যে যৌগ বা আয়ন অম্ল হতে প্রোটন গ্রহণ করতে পারে, তাই ক্ষারক। উদাহরণ: সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড (NaOH), ক্যালসিয়াম অক্সাইড ((CaO), ম্যাগনেসিয়াম হাইড্রোক্সাইড (MgOH) প্রভৃতি। অধিকাংশ ক্ষারকই পানিতে দ্রবীভূত হয় না। যে সকল ক্ষারক পানিতে দ্রবীভূত হয়, তাকে ক্ষার বলে। উদাহরণ: সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড (NaOH), পটাসিয়াম হাইড্রোক্সাইড (KOH) ইত্যাদি।
লবণ (Salt)
এসিড ও ক্ষারের বিক্রিয়ায় যে নিরপেক্ষ পদার্থ উৎপন্ন হয়, তাকে লবণ বলে। যেমন; সোডিয়াম কোরাইড (NaCl), পটাসিয়াম নাইট্রেট (KNO,) প্রভৃতি।
HNO3 (এসিড) + KOH (ক্ষার) = KNO3 (লবণ) + H2O (পানি
সাইট্রিক এসিড
অক্সালিক এসিড
ম্যালিক এসিড
অ্যাসিটিক এসিড
আমলকিতে পাওয়া যায়
কমলালেবুতে পাওয়া যায়
আঙ্গুরে পাওয়া যায়
টমেটোতে পাওয়া যায়
এসিড (Acid)
যদি কোনো যৌগের অণুতে এক বা একাধিক প্রতিস্থাপিনীয় হাইড্রোজেন পরমাণু থাকে এবং ১ প্রতিস্থাপনীয় হাইড্রোজেন পরমাণু কোনো ধাতু বা ধাতুর ন্যায় ক্রিয়াশীল কোনো যৌগমূল দাস আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে প্রতিস্থাপিত করা যায় এবং যা ক্ষারকের সাথে বিক্রিয়া করে লবণ ও পানি উৎপন্ন করে, তাকে অম্ল বলে। অন্যভাবে বলা যায়, যে যৌগ বা আয়ন অন্য পদার্থকে প্রোটন দান করতে পারে, তাকে অম্ল বলে। উদাহরণ: সালফিউরিক এসিড (H2SO4), নাইট্রিক এসিড (HNO3) ইত্যাদি। এসিড সাধারণত টকস্বাদযুক্ত হয়ে থাকে।
আমলকিতে পাওয়া যায়
কমলালেবুতে পাওয়া যায়
আঙ্গুরে পাওয়া যায়
টমেটোতে পাওয়া যায়
ক্ষারক ও ক্ষার (Base & Alkali)
ধাতুর অক্সাইড ও হাইড্রোক্সাইডকে ক্ষারক বলে। অন্যভাবে বলা যায়, যে যৌগ বা আয়ন অম্ল হতে প্রোটন গ্রহণ করতে পারে, তাই ক্ষারক। উদাহরণ: সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড (NaOH), ক্যালসিয়াম অক্সাইড ((CaO), ম্যাগনেসিয়াম হাইড্রোক্সাইড (MgOH) প্রভৃতি। অধিকাংশ ক্ষারকই পানিতে দ্রবীভূত হয় না। যে সকল ক্ষারক পানিতে দ্রবীভূত হয়, তাকে ক্ষার বলে। উদাহরণ: সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড (NaOH), পটাসিয়াম হাইড্রোক্সাইড (KOH) ইত্যাদি।
লবণ (Salt)
এসিড ও ক্ষারের বিক্রিয়ায় যে নিরপেক্ষ পদার্থ উৎপন্ন হয়, তাকে লবণ বলে। যেমন; সোডিয়াম কোরাইড (NaCl), পটাসিয়াম নাইট্রেট (KNO,) প্রভৃতি।
HNO3 (এসিড) + KOH (ক্ষার) = KNO3 (লবণ) + H2O (পানি
কৃত্রিম সার প্রয়োগ
পানি সেচ
মাটিতে নাইট্রোজেন ধরে রাখা
প্রাকৃতিক গ্যাস প্রয়োগ
পানির খরতা
খর পানি (Hard Water) : যে পানি সাবানের সাথে সহজে ফেনা উৎপন্ন করে না, অনেক সাবান খরচ করার পর ফেনা উৎপন্ন করে, তাকে খর পানি (Hard Water) বলে। খর পানিতে সাবান ফেনা না দিলেও ডিটারজেন্ট উত্তম ফেনা দেয়। পানির খরতা দুই প্রকার। যথা:
ক) অস্থায়ী খরতা: পানিতে ক্যালসিয়াম বা ম্যাগনেসিয়ামের বাইকার্বনেট (HCO3–) লবণ দ্রবীভূত থাকে।
খ) স্থায়ী খরতা: পানিতে ক্যালসিয়াম বা ম্যাগনেসিয়ামের সালফেট (SO4- -) বা ক্লোরাইড (Cl-)। লবণ দ্রবীভূত থাকে।
পানির ক্ষরতা দূরীকরণের উপায়
দূরীকরণ পদ্ধতি
বৈশিষ্ট্য
ফুটানো
শুধু অস্থায়ী খরতা দূর করা যায়।
পারমুটিট পদ্ধতি
স্থায়ী ও অস্থায়ী খরতা দূর করা যায়।
সোডা পদ্ধতি
স্থায়ী ও অস্থায়ী উভয় প্রকার খরতা কাপড় কাচা সোডা (Na,CO) এর সাহায্যে দূর করা যায়।
খর পানি ব্যবহার করলে কারখানার বয়লারে, মোটর গাড়ির শীতক প্রকোষ্ঠে ও কেতলীর তলায় অদ্রবণীয় ও তাপ অপরিবাহী ক্যালসিয়াম কার্বনেট (Ca2CO3), ক্যালসিয়াম সালফেট (CaSO4) প্রভৃতি লবণের আবরণ পড়ে। বয়লারের গায়ে অদ্রবণীয় লবণের স্তর পড়ার কারণে বয়লারের তাপ পরিবাহিতা কমে যায়। ফলে জ্বালানি অপচয় ঘটে।
রাসায়নিক ক্রিয়া
Chemical Actions
উচ্চ তাপ ও চাপের প্রভাবে একই যৌগের অসংখ্য অণু পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বৃহৎ আনবিক ভরবিশিষ্ট নতুন যৌগের অণু গঠন করে। যেসব ক্ষুদ্র অণু যুক্ত হয়, তাদের প্রত্যেককে মানোমার এবং যে বৃহৎ নতুন অণু উৎপন্ন হয়, তাকে পলিমার বলে। যে বিক্রিয়ায় অসংখ্য মনোমার থেকে পলিমার উৎপন্ন হয় তাকে পলিমারকরণ বিক্রিয়া বলে। যেমন: ইথিনের অসংখ্য অণু পলিমার চেইন বিক্রিয়ার মাধ্যমে একত্রিত হয়ে পলিথিন উৎপন্ন হয় ।
বিক্রিয়াটি-
n (CH2 = CH2)
→
ইথিলিন
n [- CH2 - CH2-]
পলিথিন
জারণ ও বিজারণ (Oxidation & Reduction)
জারণ: যে বিক্রিয়ায় কোনো মৌল বা যৌগে তড়িৎ ঋণাত্মক পরমাণু বা মূলক সংযুক্ত হয় বা তাদের অনুপাত বৃদ্ধি পায় অথবা কোনো তড়িৎ ধনাত্মক পরমাণু বা মূলকের অপসারণ হয় বা তাদের অনুপাত হ্রাস পায়, সেই বিক্রিয়াকে জারণ বলে।
ইলেকট্রনীয় ধারণা: যে বিক্রিয়ায় কোনো রাসায়নিক সত্তা (অণু, পরমাণু, মূলক বা আয়ন) ইলেকট্রন প্রদান করে, ফলে সংশ্লিষ্ট রাসায়নিক সত্তার ধনাত্মক চার্জ বৃদ্ধি পায়, তাকে জারণ বলে। যেমন: Na → Na+ + e- (ইলেকট্রন দান বা জারণ)
বিজারণ: যে বিক্রিয়ায় কোনো মৌল বা যৌগে তড়িৎ ধনাত্মক পরমাণু বা মূলক সংযুক্ত হয় বা অনুপাত বৃদ্ধি পায় অথবা কোনো তড়িৎ ঋণাত্মক পরমাণু বা মূলকের অপসারণ হয় বা তাদের হ্রাস পায়, সেই বিক্রিয়াকে বিজারণ বলে।
ইলেকট্রনীয় ধারণা: যে বিক্রিয়ায় কোন রাসায়নিক সত্তা (অণু, পরমাণু, মূলক বা আয়ন) ইলেকট্রন গ্রহণ করে, ফলে সংশ্লিষ্ট রাসায়নিক সত্তার ঋণাত্মক চার্জ বৃদ্ধি বা ধনাত্মক চার্জ হ্রাস পায় তাকে বিজারণ বলে। যেমন: Cl + e- → Cl- (ইলেকট্রন গ্রহণ বা বিজারণ)
যে বস্তু অন্য কোনো বস্তুর বিজারণ ঘটায় এবং নিজে জারিত হয়, তাকে বিজারক বলে। যেমন: সকল ধাতু, হাইড্রোজেন, কার্বন প্রভৃতি। বিজারক পদার্থ ইলেকট্রন বর্জন করে।
যে বস্তু অন্য কোনো বস্তুর জারণ ঘটায় এবং নিজে বিজারিত হয়, তাকে জারক বলা হয়। যেমন: অক্সিজেন, ফ্লোরিন, ক্লোরিন, ব্রোমিন, আয়েডিন, পটাসিয়াম ডাইক্রোমেট, পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট, HNO3, উত্তপ্ত গাঢ় H2SO4 পার অক্সাইডসমূহ, পার অক্সি এসিডসমূহ এবং তাদের লবণসমূহ। জারক পদার্থসমূহ ইলেকট্রন গ্রহণ করে।
তড়িৎ কোষ (Electric Cell)
যে যন্ত্রের সাহায্যে রাসায়নিক শক্তি থেকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে তড়িৎ শক্তি পাওয়া যায় তাকে তড়িৎ কোষ বলে। প্রতিটি বৈদ্যুতিক কোষের দুটি প্রান্ত তাকে। একটি হলো পজেটিভ বা ক্যাথোড (Cathode) এবং অন্যটি নেগেটিভ বা অ্যানোড (Anode)। বৈদ্যুতিক কোষ সর্বপ্রথম ১৮০০ সালে আবিষ্কার সবন ইটালির বিজ্ঞানী আলেকসান্দ্রো ভোল্টা। তড়িৎ কোষ দুই প্রকার। যথা-
তড়িৎ কোষ
তড়িৎ রাসায়নিক কোষ
তড়িৎ বিশ্লেষ্য কোষ
তড়িৎ রাসায়নিক কোষ বা গ্যালভানিক সেল: যে তড়িৎ কোষে রাসায়নিক শক্তি বৈদ্যুতিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয় তাকে তড়িৎ রাসায়নিক কোষ বলে। একে ভোল্টার কোষও বলা হয়।
তড়িৎ বিশ্লেষ্য কোষ: যখন কোন তড়িৎ-বিশ্লেষ্য পদার্থের দ্রাবকে দ্রবীভূত বা বিগলিত অবস্থার মধ্যে দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ চালনা করা হয়, তখন ঐ তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থের রাসায়নিক বিয়োজন ঘটে এবং নতুন রাসায়নিক ধর্মবিশিষ্ট পদার্থ উৎপন্ন হয়, এই পদ্ধতিকে তড়িৎ বিশ্লেষণ (Electrolysis) বলে। যে পাত্রে তড়িৎ বিশ্লেষণ চালানো হয়, তাকে তড়িৎ বিশ্লেষ্য কোষ বলা হয়। তড়িৎ বিশ্লেষণ পদ্ধতি খনিজ পদার্থ থেকে বিভিন্ন ধাতু উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়। হামফ্রে লেভি তড়িৎ বিশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় সর্বপ্রথম অনেকগুলো মৌলিক পদার্থ আলাদা করতে সক্ষম হন। তন্মধ্যে সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, বেরিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, স্ট্রনসিয়াম, আয়োডিন উল্লেখযোগ্য। ১৮৩৩ সালে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী মাইকেল ফ্যারাডে তড়িৎ বিশ্লেষণের দুটি সূত্র প্রণয়ন করেন।
শুষ্ক কোষ (Dry Cell)
শুষ্ক কোষ একটি প্রাথমিক কোষ বা প্রাইমারি সেল। সাধারণ ড্রাইসেলে ইলেকট্রোড হিসাবে কার্বন দণ্ড (+) এবং দস্তার কৌটা ( ) ব্যবহৃত হয়। শুষ্ক কোষে কার্বন দণ্ড ইলেকট্রন দান করে। কার্বন দণ্ডের চারপার্শ্বে কঠিন ম্যাঙ্গানিজ ডাইঅক্সাইড (MnO2) এবং কার্বন গুড়ার মিশ্রণ থাকে। এর চারপার্শ্বে অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইডের (NH4Cl) এর পেস্ট থাকে। NH4Cl বিদ্যুৎ উত্তেজক হিসাবে এবং MnO2 ছদন নিবারক হিসাবে কাজ করে। বাজারে এটি ব্যাটারি নামে পরিচিত। শুষ্ক কোষ একমুখী (DC) তড়িৎ প্রবাহ করে। এর তড়িচ্চালক বল ১.৫ ভোল্ট। ১৮৬৪ সালে ফরাসি বিজ্ঞানী জর্জেস লেকল্যান্স সর্বপ্রথম শুষ্ক কোষ আবিষ্কার করেন।
স্টোরেজ ব্যাটারি (Storage Battery)
স্টোরেজ ব্যাটারী এক বা একাধিক তড়িৎ রাসায়নিক কোষ দ্বারা গঠিত যা এক প্রকার শক্তি সঞ্চয়ক গাড়িতে ব্যবহৃত এ সকল ব্যাটারিতে সীসার ইলেকট্রোডের সঙ্গে তড়িৎ বিশ্লেষ্য রূপে সালফিউরিক এসিড (H2SO4) ব্যবহৃত হয়।
জৈব রসায়ন
Organic Chemistry
কার্বণ শিকল দ্বারা গঠিত বিভিন্ন যৌগের রসায়নকে জৈব রসায়ন বলে । অন্যভাবে বলা যায় যে, রসায়নের যে শাখায় হাইড্রোকার্বন ও হাইড্রোকার্বনের বিভিন্ন জাতক সমন্ধে আলোচনা করা হয়, তাকে জৈব রসায়ন বলে। হাইড্রোজেন ও কার্বন দ্বারা গঠিত দ্বিমৌল যৌগসমূহকে হাইড্রোকার্বন বলে । জৈব যৌগ বলতে হাইড্রোকার্বন এবং হাইড্রোকার্বন থেকে উদ্ভুত যৌগসমূহকে বুঝায় । ফেডারিক উহলারকে জৈব রসায়নের জনক বলা হয় । জৈব যৌগে কার্বন মৗলটি অবশ্যই থাকবে। জৈব বস্তুর সম্পূর্ণ দহনে কার্বন-ডাই-অক্সাইড এবং অসম্পূর্ণ দহনে কার্বন মনোক্সাইড উৎপন্ন হয়। কার্বন শিকলের প্রকতি অনুযায়ী জৈব যৌগসমূহকে প্রধানত দুইটি ভাগে ভাগ করা যায় । যথা-অ্যালিফেটিক যৌগ এবং অ্যারোমেটিক যৌগ।
অপরিশোধিত তেল
ক্লিংকার
এমোনিয়া
মিথেন গ্যাস
নাইট্রোজেন
হিলিয়াম
নিয়ন
অক্সিজেন
জৈব রসায়ন
Organic Chemistry
কার্বণ শিকল দ্বারা গঠিত বিভিন্ন যৌগের রসায়নকে জৈব রসায়ন বলে । অন্যভাবে বলা যায় যে, রসায়নের যে শাখায় হাইড্রোকার্বন ও হাইড্রোকার্বনের বিভিন্ন জাতক সমন্ধে আলোচনা করা হয়, তাকে জৈব রসায়ন বলে। হাইড্রোজেন ও কার্বন দ্বারা গঠিত দ্বিমৌল যৌগসমূহকে হাইড্রোকার্বন বলে । জৈব যৌগ বলতে হাইড্রোকার্বন এবং হাইড্রোকার্বন থেকে উদ্ভুত যৌগসমূহকে বুঝায় । ফেডারিক উহলারকে জৈব রসায়নের জনক বলা হয় । জৈব যৌগে কার্বন মৗলটি অবশ্যই থাকবে। জৈব বস্তুর সম্পূর্ণ দহনে কার্বন-ডাই-অক্সাইড এবং অসম্পূর্ণ দহনে কার্বন মনোক্সাইড উৎপন্ন হয়। কার্বন শিকলের প্রকতি অনুযায়ী জৈব যৌগসমূহকে প্রধানত দুইটি ভাগে ভাগ করা যায় । যথা-অ্যালিফেটিক যৌগ এবং অ্যারোমেটিক যৌগ।
অ্যালিফেটিক যৌগসমূহকে তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায় যথা-
ক) অ্যালকেন: হাইড্রোজেন ও কার্বন পরমাণু দ্বারা গঠিত একক বন্ধনে আবদ্ধ যৌগসমূহকে অ্যালকেন বলে। অ্যালকেনের সাধারণ সংকেত CnH2n+2। যেমন- মিথেন (CH4), ইথেন (CH3-CH3), প্রোপেন (CH3-CH2- CH3) ইত্যাদি।
খ) অ্যালকিন: হাইড্রোজেন ও কার্বন পরমাণু দ্বারা গঠিত দ্বি বন্ধনে আবদ্ধ যৌগসমূহকে অ্যালকিন বলে। অ্যালকেনসমূহের সাধারণ সংকেত CnH2n। যেমন- ইথিন (CH2=CH2), প্রোপিন (CH2= CH- CH2) ইত্যাদি।
গ) অ্যালকাইন: হাইড্রোজেন ও কার্বন পরমাণু দ্বারা গঠিত ত্রি বন্ধনে আবদ্ধ যৌগসমূহকে অ্যালকাইন বলে। অ্যালকাইনসমূহের সাধারণ সংকেত CnH2n+2। যেমন- ইথাইন (CH = CH), প্রোপাইন (CH = C-CH3) ইত্যাদি।
বিভিন্ন খাদ্যে উপস্থিত জৈব এসিড।
প্রাত্যহিক জীবনে রসায়ন
আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সকল ক্ষেত্রে রসায়ন এর ব্যাপক প্রভাব রয়েছে | আমরা প্রতিদিন যে খাবার খাই তাতে রসায়ন রয়েছে, যে বাতাসে আমরা নিশ্বাস নিই তাতে রসায়ন রয়েছে, আমাদের সাবান, আমাদের আবেগ এক কথায় যে সমস্ত বস্তু আমরা দেখতে ও স্পর্শ করতে পারি সকল কিছুতেই রসায়ন বিদ্যমান। আজ আমি আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে কিসু মজার রসায়ন নিয়ে আলোচনা করব।
মানব দেহের উপাদান: মানব দেহের বেশির ভাগ হচ্ছে পানি । যেসমস্ত উপাদান দ্বারা তৈরী সেগুলো নিম্নরূপ:
১. অক্সিজেন (৬৫% )
২. কার্বন (১৮%)
৩. হাইধ্রজেন (১০%)
৪. নাইট্রজেন (৩%)
৫. কালসিয়াম (১.৫%)
৬. ফসফরাস (১.০%)
৭. পটাসিয়াম (০.৩৫%)
৮. সালফার (০.2৫%)
৯. সোডিয়াম (০.১৫%)
১০. ম্যাগনেসিয়াম (০.০৫%)
১১. কপার, জিঙ্ক, সেলেনিয়াম, মলিবডেনাম, ফ্লুরিন, ক্লোরিন, আয়োডিন, মান্গানিজ, কোবাল্ট, এবং আইরন (০.৭০%)
১২. লিথিয়াম, সট্রনিয়াম, এলুমিনিয়াম, সিলিকন, লীড ভানাদিয়াম, আর্সেনিক, ব্রোমিন,
নাইট্রোজেন
হিলিয়াম
নিয়ন
অক্সিজেন
নির্মাণ সামগ্রী
নির্মাণ সামগ্রী হিসেবে ইট এবং সিমেন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বালি ও পানির সাথে সিমেন্ট মিশিয়ে ‘মর্টার’ এবং ইট বা পাথরের টুকরা, সিমেন্ট, বালি ও পানি মিশিয়ে কংক্রিট তৈরি করা হয়।
সিমেন্ট (Cement): সিমেন্টের মূল উপাদানগুলি হলো চুনাপাথর, সিলিকা (বালি), আয়রন অক্সাইড ইত্যাদি। এই উপাদানগুলোকে দুইভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
ক) চুন জাতীয় পদার্থ (চক, চুনাপাথর প্রভৃতি)।
খ) মাটি জাতীয় পদার্থ (সিলিকা, আয়রন অক্সাইড, অ্যালুমিনা প্রভৃতি)।
সিমেন্টে জিপসাম যোগ করা হয় যাতে সিমেন্ট জমাট বাঁধতে দেরি হয় এবং কাজ করার জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায়।
সিমেন্ট
ঔদক (hydraulic)
অনৌদক (Non-hydraulic)
পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট
নন-পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট
পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। চুনাপাথর (Limestone) এর সাথে। সামান্য কাদা বা এ্যালুমিনো সিলিকেট (Al2SiO5) মিশিয়ে বিশেষায়িত চুল্লীর মাধ্যমে ক্লিঙ্কার তৈরি করা হয়। ক্লিঙ্কার চূর্ণ (>= ৯৭%) করে তার সাথে সামান্য জিপসাম (=<৩%) মিশিয়ে আধুনিক পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট তৈরি করা হয়।
ইট (Brick): তৈরির পদ্ধতি অনুসারে ইটকে তিনভাগে ভাগ করা যায়। বাংলা ইট, সিরামিক ইট এবং কংক্রিটের তৈরি ইট। সাধারণ ইটকে বাংলা ইট বলে। মেশিনে বানানো ইটকে সিরামিক ইট বলে। সিরামিক ইটে সিলিকা (৫৫%), অ্যালুমিনা (৩০%), লৌহ অক্সাইড (৮%), ম্যাগনেসিয়া (৫%), জৈব পদার্থ (১%) থাকতে পারে।
কাঁচ (Glass): কাঁচ রাসায়নিকভাবে অত্যন্ত নিষ্ক্রিয়। কাঁচ বহুদিন রোদে বা পানিতে থাকলে নষ্ট, ক্ষয় বা বৃদ্ধি হয় না। কাচ তৈরির প্রধান কাঁচামাল হলো বালি। বালির প্রধান উপাদান হলো সিলিকা। সিলিকার রাসায়নিক নাম সিলিকন ডাই অক্সাইড (SiO2)। সিলিকার বিশুদ্ধ রূপ কোয়ার্টজ।
সারিন (Sarin): সারিন (C4H10FO2P) অত্যন্ত বিষাক্ত এক ধরনের বর্ণ ও গন্ধহীন তরল পদার্থ যা রাসায়নিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রমণ করে অকার্যকর করে দেয়।
নাইট্রোগ্লিসারিন (Nitroglycerin): নাইট্রোগ্লিসারিন বিস্ফোরক পদার্থটি সালফিউরিক এসিড ও নাইট্রিক এসিডের সংমিশ্রণে প্রস্তুত করা হয়। পাহাড় ভাঙ্গা, টানেল তৈরি ও খনিজ শিল্পে ব্যবহৃত বিস্ফোরক পদার্থ ডিনামাইট প্রস্তুতিতে নাইট্রোগ্লিসারিন ব্যবহৃত হয়।
টি.এন.টি (TNT): 2, 4, 6 ট্রাই নাইট্রো টলুইনকে সংক্ষেপে টি.এন.টি বলে। এটি প্রধানত বিস্ফোরক পদার্থ হিসেবে বিভিন্ন ধরনের বোমায় ব্যবহৃত হয়।
পিকরিক এসিড (Picric Acid): পিকরিক এসিডে রাসায়নিক নাম ২,৪,৬ এটাইনাইট্রোফেনল। এটি বিস্ফোরক যৌগ প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া পোড়া ক্ষতের জ্বালা ও পচন নিবারণে
ডিডিটি (DDT): ডিডিটি এর রাসায়নিক নাম প্যারা প্যারা ডাইক্লোরো ডাই ফিনাইল ট্রাই ক্লোরো ইথেন। শক্তিশালী জীবাণুনাশক ও কীটনাশক হিসেবে ডি.ডি.টি প্রচুর ব্যবহৃত হয়।
গ্যামেক্সিন বা লিনডেন: গ্যামেক্সিন পাউডার বা লিনডেন এর রাসায়নিক নাম বেনজিন হেক্সাক্লোরাইড (C6H6Cl6)। এটি শক্তিশালী জীবাণুনাশক ও কীটনাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
ভৌত বিজ্ঞানের বিকাশ
The Development of Physical Science
যন্ত্রের ব্যবহার
যন্ত্রের নাম প্রয়োগ
জাইরোকম্পাস - জাহাজের দিক নির্ণায়ক
অডিওমিটার - শব্দের তীব্রতা নির্ণায়ক
অডিও ফোন - কানে দিয়ে শোনার যন্ত্র
রেইনগেজ - বৃষ্টি পরিমাপক
স্প্রিডোমিটার - দ্রুতি পরিমাপক
অ্যাক্সিলারোমিটার - ত্বরণ পরিমাপক
ভেলাটোমিটার - বেগ পরিমাপক
অ্যানিমোমিটার - বাতাসের গতিবেগ ও শক্তি পরিমাপক
ওডোমিটার - মোটর গাড়ির গতি নির্ণায়ক
ট্যাকোমিটার - উড়োজাহাজের গতি নির্ণায়ক
অলটিমিটার - উচ্চতা নির্ণায়ক
ফ্যাদোমিটার-সমুদ্রের গভীরতা নির্ণায়ক
এনোমোমিটার--বায়ুর গতিবেগ পরিমাপক
হাইগ্রোমিটার--বায়ুতে আর্দ্রতা (Humidity) পরিমাপক
হাইড্রোমিটার--তরলের আপেক্ষিক গুরুত্ব (Specific gravity) বা ঘনত্ব নির্ণায়ক
হাইড্রোফোন - পানির তলায় শব্দ নিরূপক
ল্যাক্টোমিটার -দুধের বিশুদ্ধতা নির্ণায়ক
ক্যালরিমিটার - তাপ পরিমাপক
থার্মোমিটারউ -উষ্ণতা পরিমাপক
বোলোমিটার--বিকিরণ (মূলত অবলোহিত রশ্মি) পরিমাপক যন্ত্র। এক ধরনের সূক্ষ্ম যার বৈদ্যুতিক রোধ তাপমাত্রার সাথে পরিবর্তিত হয়।
পাইরোমিটার তাতারকাসমূহের (সূর্যের) উত্তাপ নির্ণায়ক
টেনসিওমিটার তরলের পৃষ্ঠটান পরিমাপক
এর প্রোগ্রাম বা কর্ম পরিকল্পনার কৌশল
তথ্য দেয়া ও তথ্য নেয়ার অংশ বিশেষ
যেসব অংশ মুদ্রায়িত অবস্থায় থাকে
কম্পিউটার তৈরির নকশা
পরিমাপ
Measurement
কোন কিছু পরিমান নির্ণয় করাকে পরিমাপ বলে। পরিমাপের আদর্শ পরিমানকে পরিমাপের একক বলা হয়। যেমন: সময়ের পরিমাপ হচ্ছে সেকেন্ড, দৈর্ঘ্য পরিমাপের একক হচ্ছে মিটার ইত্যাদি।
রাশি
ভৌতজগতে যা কিছু পরিমাপ যায় তাকে রাশি বলে। রাশি দুই প্রকার। যথা- মৌলিক রাশি এবং লব্ধ রাশি ।
পরিমাপের যন্ত্রাদি (Measuring Instruments)
মিটার স্কেল (Metre Scale): পরীক্ষাগারে দৈর্ঘ্য পরিমাপের সবচেয়ে সরল যন্ত্র হলো মিটার স্কেল। একে মিটার স্কেল বলা হয় কারণ এর দৈর্ঘ্য ১ মিটার বা ১০০ সে.মি.। এই স্কেলের সাহায্যে মিলিমিটার পর্যন্ত দৈর্ঘ্য সঠিকভাবে মাপা যায়।
ভার্নিয়ার স্কেল (Vernier Scale): মূল বা প্রধান স্কেলের ক্ষুদ্রতম ভাগের ভগ্নাংশের নির্ভুল পরিমাপের জন্য মূল স্কেলের পাশে যে ছোট আর একটি স্কেল ব্যবহার করা হয় তার নাম ভার্নিয়ার স্কেল। ভার্নিয়ার স্কেলকে মিটার স্কেলের সাথে ব্যবহার করে মিলিমিটারের ভগ্নাংশ (যেমন- ০.২ মি.মি., ০.৬ মি.মি ইত্যাদি) সঠিকভাবে নির্ণয় করা যায়। গণিত শাস্ত্রবিদ পিয়েরে ভার্নিয়ার এ স্কেল আবিষ্কার করেন। তাঁর নামানুসারে এ স্কেলের নাম ভার্নিয়ার স্কেল।
স্লাইড ক্যালিপার্স (Slide Callipers): স্লাইড ক্যালিপার্স যন্ত্রের সাহায্যে কোন বস্তুর দু প্রাতে মধ্যবর্তী দূরত্ব নির্ণয় করা যায়। এ যন্ত্রের সাহায্যে পরিমাপ করতে ভার্নিয়ার পদ্ধতি ব্যবহার করা বলে একে ভার্নিয়ার ক্যালিপার্সও বলা হয়। বস্তুর দৈর্ঘ্য, চোঙ বা বেলনের উচ্চতা, সিলিন্ডার বা বেলনের আয়তন নির্ণয়, ফাঁপা নলের অন্তঃব্যাস ও বহির্ব্যাস, গোলকের ব্যাস নির্ণয় ইত্যাদি পরিমাপে স্লাইড ক্যালিপার্স ব্যবহৃত হয়।
স্ক্রু গজ (The Screw Gauge): স্ক্রু গজ যন্ত্রের অপর নাম মাইক্রোমিটার স্ক্রু গজ। এ যন্ত্রের সাহায্যে তারের ব্যাসার্ধ, সরু চোঙের ব্যাসার্ধ ও ছোট দৈর্ঘ্য পরিমাপ করা যায়।।
তুলা যন্ত্র: বস্তু বা পদার্থের পরিমাণ যত কম হবে তার ভর পরিমাপের নিক্তি হতে হবে তত সূক্ষ্ম। এরকম একটি সূক্ষ্ম নিক্তি হলো তুলা যন্ত্র বা তুলা। পদার্থবিদ্যা ও রসায়নবিদ্যার ল্যাবরেটরীতে খুব অল্প পরিমাণ জিনিসের ভর সূক্ষ্মভাবে পরিমাপের জন্য এই যন্ত্র ব্যবহৃত হয়।
স্প্রিং নিক্তি (Spring Balance): স্প্রিং নিক্তি একটি বিশেষ ধরনের নিক্তি বলা হয় কারণ এতে একটি ইস্পাতের পেচানো স্প্রিং থাকে। এই স্প্রিং এর এক প্রান্তে একটি রিং বা আংটা লাগানো থাকে এবং অপর প্রান্তে একটি ধাতুর শলাকার সাহায্যে একটি হুক লাগানো থাকে। যে বস্তুকে ওজন করতে হবে তা নিচের হুকে ঝুলানো হয়। স্প্রিং নিক্তির সাহায্যে সহজে যে কোনো স্থানে কোনো বস্তুর ওজন নির্ণয় ও বল পরিমাপ করা যায়।
বলবিদ্যা
Mechanics
সরণ (Displacement)
নির্দিষ্ট দিকে পরিপার্শ্বিকের সাপেক্ষে বস্তুর অবস্থানের পরিবর্তনকে সরণ বলে। সরণের একক হল। দৈর্ঘ্যের একক অর্থাৎ মিটার।
দ্রুতি (Speed)
সময়ের সাথে কোন বস্তুর অবস্থানের পরিবর্তনের হারকে দ্রুতি বলে। দ্রুতির একক মি./সে.।
বেগ (Velocity)
সময়ের সাথে কোন বস্তুর সরণের হারকে বেগ বলে অর্থাৎ বস্তু নির্দিষ্ট দিকে একক সময়ে যে দূরত্ব অতিক্রম করে তাই বেগ। বেগের একক মিটার/সেকেন্ড বা (ms-1) ।
ত্বরণ (Acceleration)
সময়ের সাথে বস্তুর অসম বেগের পরিবর্তনের হারকে ত্বরণ বলা হয়। একটি বস্তু সুষম বেগে না চলে এর বেগের বা মানের যে পরিবর্তন হয় তাই ত্বরণ। ত্বরণ একটি ভেক্টর রাশি। ত্বরণের একক মিটার/সেকেন্ড২(m/s2) বা (ms-2)। কৌণিক ত্বরণের একক রেডিয়ান/সেকেন্ড২ (rd/s2) বা (rds-2)।
নিউটনের গতি বিষয়ক সূত্র (Newton's Law of Motion)
১৬৮৭ সালে বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটন তাঁর অমর গ্রন্থ “ফিলোসোফিয়া ন্যাচারালিস প্রিন্সিপিয়া ম্যাথমেটিকা’তে বস্তুর ভর, গতি ও বলের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে তিনটি সূত্র প্রকাশ করেন। এ তিনটি সূত্র নিউটনের ‘গতি বিষয়ক সূত্র’ নামে পরিচিত।
প্রথম সূত্র: বাহ্যিক কোনো বল প্রয়োগ না করলে স্থির বস্তু চিরকাল স্থিরই। থাকবে এবং গতিশীল বস্তু সুষম দ্রুতিতে সরলপথে চলতে থাকবে। (Every body continues in its state of rest, or of uniform motion in a straight line until an external force is applied to the body).
দ্বিতীয় সূত্র: বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার এর উপর প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক এবং বল যেদিকে ক্রিয়া করে বক্সর ভরবেগের পরিবর্তনও সেদিকে ঘটে। (The rate of change of momentum of a body is proportional to the applied force and takes place in the direction of the straight line along which the force acts).
তৃতীয় সূত্র: প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। (To every action there is an equal and opposite reaction)।
ক) প্রথম সূত্র থেকে জড়তা ও বলের ধারণা পাওয়া যায়।
খ) দ্বিতীয় সূত্র হতে পাই, বল = ভর ´ ত্বরণ (F = ma)
গ) নিউটনের গতির তৃতীয় সূত্রের প্রয়োগ: - মহাকাশযান (রকেট) উৎক্ষেপণ গতির তৃতীয় সূত্রের একটি ব্যবহারিক প্রয়োগ। রকেটে জ্বালানি পুড়িয়ে প্রচুর গ্যাস উৎপন্ন করা হয়। রকেটের পিছনের অংশ থেকে গ্যাস প্রচণ্ড বেগে নির্গত হওয়ায় গতির বিপরীত ক্রিয়ায় রকেটকে বিপরীত দিকে ধাক্কা দেয়। ফলে রকেট প্রচণ্ড বেগে উপরের দিকে এগিয়ে যায়।
- ফুলানো বেলুনের মুখ ছেড়ে দিলে বাতাস বেরিয়ে যাবার সঙ্গে সঙ্গে বেলুনটি ছুটে যায়। রকেট ইঞ্জিনের নীতির সঙ্গে এর মিল আছে।
- জেট ইঞ্জিন রি-অ্যাকশন ইঞ্জিন।
- বিমান ও রকেট চলার মধ্যে মূল পার্থক্য হলো রকেট চলার জন্য বাতাসের দরকার হয় না কিন্তু বিমান সম্পূর্ণভাবে বাতাস নির্ভর।।
- একজন মাঝি নৌকা চালানো গতির তৃতীয় সূত্রের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা যায়।
রাস্তার ব্যাংকিং (Banking of Roads)
বক্রপথে মোটর বা রেলগাড়ি চলার সময় একটি কেন্দ্রমুখী বলের প্রয়োজন হয়। কেন্দ্রমুখী বলের অভাবে গতি জড়তার কারণে যানবাহন উল্টে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই জড়তাকে প্রশমিত করার জন্য বক্রপথে বাইরের রাস্তা ভিতরের দিকের চেয়ে কিছুটা উচু করে কেন্দ্রমুখী বল সৃষ্টি করা হয়। এ ব্যবস্থাকে রাস্তার ব্যাংকিং বলে।
ভরবেগ (Momentum)
বস্তুর ভর ও বেগের গুণফলকে ভরবেগ বলে। ভরবেগের একক কেজি-মি./সে. এবং মাত্রা সমীকরণ MLT1। ভরবেগ = ভর ´ বেগ।
ভরবেগের সংরক্ষণ সূত্র: “একাধিক বস্তুর মধ্যে শুধু ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া ছাড়া অন্য কোনো বল কাজ না করলে কোন নির্দিষ্ট দিকে তাদের মোট ভরবেগের কোন পরিবর্তন হয় না”।
উদাহরণ: বন্দুক থেকেগুলি ছোড়া হলে বন্দুক পেছনের দিকে আসে।কারণ গুলি ও বন্দুকের ভরবেগ সমান কিন্তু বিপরীতমুখী। বন্দুকের ভর বেশি বলে বেগ কম হয় কিন্তু গুলির ভর কম বলে বেগ বেশি হয়।
- নৌকা থেকে আরোহীরা নামার সময় নৌকা পেছনের দিকে আসে কারণ নৌকা ও আরোহীর ভরবেগ পরস্পর সমান কিন্তু বিপরীতমুখী।
স্থিতিস্থাপকতা (Elasticity)
বস্তুর যে ধর্ম উহার উপর প্রযুক্ত বলের ক্রিয়ায় তার আকার বা আয়তন বা উভয়েরই পরিবর্তনের প্রচেষ্টাকে বাধা দেয় এবং প্রযুক্ত বল অপসারণ করলে তার পূর্বের আকার বা আয়তন ফেরত পায় তাকে স্থিতিস্থাপকতা বলে।
বাহ্যিক বলের বিরুদ্ধে যে বস্তুর বাধা প্রদানের ক্ষমতা বেশি সেই বস্তুর স্থিতিস্থাপকতা বেশি। আমরা অনেকে রাবারের তারকে খুব সহজেই টেনে লম্বা করতে পারি কিন্তু ইস্পাতের তারকে টেনে লম্বা করতে হলে বেশি বল প্রয়োগ করতে হয়। ইস্পাতের স্থিতিস্থাপকতা তাই রাবারের চেয়ে অনেক বেশি। রাবার শক্ত ও স্থিতিস্থাপক বলে গাড়ির টায়ার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
মহাকর্ষ ও অভিকর্ষ।
Gravitation & Gravity
মহাকর্ষ ও অভিকর্ষ (Gravitation & Gravity)
এই মহাবিশ্বের প্রত্যেকটি বস্তু কণা একে অপরকে নিজের দিকে আকর্ষণ করে। মহাবিশ্বের যে কোন দুটি বস্তুর মধ্যে যে আকর্ষণ তাকে মহাকর্ষ বলে। দুটি বস্তুর একটি যদি পৃথিবী হয় তবে তাকে অভিকর্ষ বা মাধ্যাকর্ষণ বলে অর্থাৎ কোনো বস্তুর উপর পৃথিবীর আকর্ষণকে অভিকর্ষ বা মাধ্যাকর্ষণ বলে। অভিকর্ষও এক ধরনের মহাকর্ষ। অভিকর্ষ বল একটি কেন্দ্রমুখী বল। মাধ্যাকর্ষণ বল বা অভিকর্ষের জন্য পৃথিবীর ঘূর্ণনের ফলে আমরা ছিটকিয়ে পড়ি না। পৃথিবীর কেন্দ্রীয় আকর্ষণে আকৃষ্ট হয়ে বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর সঙ্গে আবর্তিত হচ্ছে।
নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র (Newton's Law of Gravitation)
বিজ্ঞানী নিউটন মহাকর্ষ সম্পর্কে একটি সূত্র প্রদান করেছেন। সূত্রটি হল “মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তুকণা একে অপরকে নিজ দিকে আকর্ষণ করে এবং এই আকর্ষণ বলের মান বস্তু কণাদ্বয়ের ভরের গুণফলের সমানুপাতিক এবং দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক এবং এই বল সংযোগ সরলরেখা বরাবর ক্রিয়া করে”। মহাকর্ষ বল শুধুমাত্র দুরত্ব এবং ভরের উপর নির্ভরশীল। G কে মহাকর্ষীয় ধ্রুবক বলে । এর একটি নির্দিষ্ট মান আছে। এই মান হল 6.673 ´ 10-11 Nm2Kg-2।
নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র (Newton's Law of Gravitation)
বিজ্ঞানী নিউটন মহাকর্ষ সম্পর্কে একটি সূত্র প্রদান করেছেন। সূত্রটি হল “মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তুকণা একে অপরকে নিজ দিকে আকর্ষণ করে এবং এই আকর্ষণ বলের মান বস্তু কণাদ্বয়ের ভরের গুণফলের সমানুপাতিক এবং দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক এবং এই বল সংযোগ সরলরেখা বরাবর ক্রিয়া করে”। মহাকর্ষ বল শুধুমাত্র দুরত্ব এবং ভরের উপর নির্ভরশীল। G কে মহাকর্ষীয় ধ্রুবক বলে । এর একটি নির্দিষ্ট মান আছে। এই মান হল 6.673 ´ 10-11 Nm2Kg-2
মধ্যাকর্ষণজনিত ত্বরণ বা অভিকর্ষ তরন (Acceleration due to Gravity)
অভিকর্ষ বলের প্রভাবে ভূপৃষ্ঠের মুক্তভাবে পড়ন্ত কোনো বস্তুর বেগ বৃদ্ধির হারকে অভিকর্ষজ ত্বরণ বলে। একে g দিয়ে প্রকাশ করা হয়। ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন স্থানে g এর মান বিভিন্ন। ভূ-পৃষ্ঠে মধ্যাকর্ষণজনিত ত্বরণ এর মান সর্বোচ্চ। 45⁰ অক্ষাংশের সমুদ্রের g সমতলে এর মান আদর্শ ধরা হয়। এর আদর্শ মান হচ্ছে 9.8 মিটার/সে২ বা (m/s2) বা (ms-2)। পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে উপরে উঠলে বা ভিতরে গেলে মাধ্যাকর্ষণ বল কমে যায়, অর্থাৎ এর g মান কমতে থাকে। পৃথিবীর কেন্দ্রে g এর মান শূন্য।
পড়ন্ত বস্তুর সূত্র (Laws of falling bodies)
পড়ন্ত বস্তু সম্পর্কে গ্যালিলিও তিনটি সূত্র প্রদান করেন। এগুলোকে পড়ন্ত বস্তুর সূত্র বলে। সূত্রগুলো একমাত্র অবস্থান থেকে বিনা বাধায় পড়ন্ত বস্তুর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
১) স্থির অবস্থান থেকে এবং একই উচ্চতা থেকে বিনা বাধায় পড়ন্ত সকল বস্তু সমান সমান সমান পথ অতিক্রম করে।
২) স্থির অবস্থান থেকে বিনা বাধায় পড়ন্ত বস্তুর নির্দিষ্ট সময়ে প্রাপ্ত ব্যক্তি সময়ের সমানুপাতিক।
৩) স্থির অবস্থান থেকে বিনা বাধায় পড়ন্ত বস্তুর নির্দিষ্ট সময়ে যে দূরত্ব অতিক্রম করে তা ওই সময়ের বর্গের সমানুপাতিক। স্থির অবস্থান এবং একই উচ্চতা হতে একটি পালক ও একটি হাতুড়ি একই সাথে ফেলে দিলে তা একই সাথে মাটিতে পড়বে কিন্তু বাতাসের বাধার কারণে এমনটি হয় না। তবে বাতাসের বাধা না থাকলে পালকো হাতুড়ি একই সাথে মাটিতে পড়বে।
পড়ন্ত বস্তুর সূত্র (Laws of falling bodies)
পড়ন্ত বস্তু সম্পর্কে গ্যালিলিও তিনটি সূত্র প্রদান করেন। এগুলোকে পড়ন্ত বস্তুর সূত্র বলে। সূত্রগুলো একমাত্র অবস্থান থেকে বিনা বাধায় পড়ন্ত বস্তুর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
১) স্থির অবস্থান থেকে এবং একই উচ্চতা থেকে বিনা বাধায় পড়ন্ত সকল বস্তু সমান সমান সমান পথ অতিক্রম করে।
২) স্থির অবস্থান থেকে বিনা বাধায় পড়ন্ত বস্তুর নির্দিষ্ট সময়ে প্রাপ্ত ব্যক্তি সময়ের সমানুপাতিক।
৩) স্থির অবস্থান থেকে বিনা বাধায় পড়ন্ত বস্তুর নির্দিষ্ট সময়ে যে দূরত্ব অতিক্রম করে তা ওই সময়ের বর্গের সমানুপাতিক। স্থির অবস্থান এবং একই উচ্চতা হতে একটি পালক ও একটি হাতুড়ি একই সাথে ফেলে দিলে তা একই সাথে মাটিতে পড়বে কিন্তু বাতাসের বাধার কারণে এমনটি হয় না। তবে বাতাসের বাধা না থাকলে পালকো হাতুড়ি একই সাথে মাটিতে পড়বে।
ওজন ও ভর (Weight and mass)
কোন বস্তুর মধ্যে পদার্থের মোট পরিমাণ কে ঐ বস্তুর ভর বলে। আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে ভরের একক কিলোগ্রাম (kg)। পৃথিবী পৃষ্ঠে কোন বস্তুর ভর ৪৯ কেজি হলে চন্দ্রপৃষ্ঠে ঐ বস্তুর ভর হবে ৪৯ কেজি। পৃথিবী পৃষ্ঠে কোন বস্তুর ভর ৫০ কেজি হলে ভূ-কেন্দ্র ওই বস্তুর ভর হবে ৫০ কেজি। কোন বস্তুকে পৃথিবী যে পরিমাণ বল দ্বারা তাকে দিকে আকর্ষণ করে তাকে ঐ বস্তুর ওজন বলে। ওজন এক ধরনের বল।তাই ওজনের একক নিউটন। বস্তুর ওজন (W) = বস্তুর ভর (m) ⤫ ঐ স্থানে অভিকর্ষজ ত্বরণ (g) অবস্থানের পরিবর্তনের সাথে সাথে বস্তুর ভরের কোন পরিবর্তন হয় না। এজন্য বস্তুর ওজন অভিকর্ষ ত্বরন উপর নির্ভরশীল। বিভিন্ন স্থানে অভিকর্ষজ ত্বরণের মান বিভিন্ন হওয়ায় স্থানভেদে বস্তুর ওজন পরিবর্তিত হয় এজন্য কোন বস্তুকে পৃথিবী থেকে চাঁদ বা অন্য কোন স্থানে নিলে বস্তুর ভর একই থাকে কিন্তু ওজন পরিবর্তিত হয়। এজন্য কোন বস্তুকে পৃথিবী থেকে চাঁদ বা অন্য কোন স্থানে নিলে বস্তুর ভর একই থাকে কিন্তু ওজন পরিবর্তিত হয়। যেমন; চাঁদের অভিকর্ষজ ত্বরণের মান পৃথিবীর অভিকর্ষজ ত্বরণের মানের ৬ ভাগের ১ ভাগ। এজন্য চাঁদের কোন বস্তুর ওজন পৃথিবীর ওই বস্তুর ওজনের ৬ ভাগের ১ ভাগ হবে।
বস্তুর অবস্থানের পরিবর্তনের সাথে সাথে অভিকর্ষজ ত্বরণের মান (মধ্যাকর্ষণ বল) ও ওজনের পরিবর্তন
বস্তুর অবস্থান
অভিকর্ষ ত্বরণের মান (মহাকর্ষণ) বল ও বস্তুর ওজন
মেরু অঞ্চল - সর্বোচ্চ
নিরক্ষীয় অঞ্চল - সর্বনিম্ন
চন্দ্রপৃষ্ঠ পৃথিবীর ৬ ভাগের ১ ভাগ
ভূপৃষ্ঠ থেকে উপরে - হ্রাস পায়
ভূপৃষ্ঠের অভ্যন্তরে - হ্রাস পায়
পৃথিবীর কেন্দ্র - শূন্য
৩.৫ মণ
৪ মণ
৪.৫ মণ
৫ মণ
লিফটে ও মহাশূন্যের ওজনের তারতম্য : ওজনহীনতা
Variation of weight in Lift and Space : Weightlessness
ব্যক্তির ভর m এবং ঐ স্থানে অভিকর্ষজ g ত্বরণ হলে, ব্যক্তির ওজন হবে, W = mg। এক ব্যক্তি লিফটে সমবেগে ওপরে উঠলেবা নিচে নামলে তার ওজন কোন পরিবর্তন হবে না। কিন্তু লিফটে a ত্বরণের উপর উঠলে ব্যক্তির ওজন অনুভব করবে, W = m (g+a) অর্থাৎ বেশি ওজন অনুভব করবে। আবার a ত্বরণে নিচে নামলে ব্যক্তির ওজন অনুভব করবে, W = m (g-a) অর্থাৎ কম ওজন অনুভব করবে। এক ব্যক্তি দালানের দশ তলা একটি লিফটে দাঁড়িয়ে আছে। তার কোন স্প্রিং নিস্কি থেকে ঝুলানো একটি বস্তু 10 নিউটনের ওজন নির্দেশ করেছে। হঠাৎ লিফটের তার ছিঁড়ে লিফটের মুক্তভাবে নিচে পড়তে থাকলে স্প্রিং নিস্কিতে ওজন 0 নিউটন নির্দেশ করবে। কারণ মুক্তভাবে পড়ন্ত লিফটের ত্বরণ হবে g এবং সে ক্ষেত্রে বস্তুর ত্বরণ হবে (g- g) = 0 নিউটন। সুতরাং বস্তর ওজন হবে W = m ⤫ 0 = 0 নিউটন। মহাশূন্যচারীর মহাশূন্যযানে পৃথিবীর প্রদক্ষিণরত থাকার সময় নিজেকে ওজনহীন মনে করেন কারণ মহাশূন্যচারীর মহাশূন্যযানের করে পৃথিবী কে একটি নির্দিষ্ট উচ্চতায় বৃত্তাকার কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করে থাকে। এই বৃত্তাকার গতির জন্য মহাশূন্যযানের পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে ঐ উচ্চতায় g এর মানের সমান মানের একটি ত্বরণ হয়। এই অবস্থায় মহাশূন্যযানের দেয়ালের সাপেক্ষে মহাশূন্যচারীর ত্বরণ (g - g) = 0 হয় এবং মহাশূন্যচারী মহাশূন্যযানের দেওয়াল বা মেঝেতে কোন বল প্রয়োগ করে না। ফলে তিনি তার ওজনের বিপরীত কোন প্রতিক্রিয়া বলও অনুভব করে না। তাই তিনি ওজনহীনতা অনুভব করেন।
সরল দোলক (Simple Pendulum)
একটি ভারী আয়তো হীন বস্তু কণাকে ওজনহীন, নমনীয় ও অপ্রসারণশীল সুতা দিয়ে ঝুলিয়ে দিলে এটি যদি ঘর্ষণ এড়িয়ে স্বাধীনভাবে দুলতে পারে, তবে তাকে সরল দোলক বলে। দোলকের দোলনকাল তার কার্যকরী দৈর্ঘ্য এবং ওই স্থানে অভিকর্ষজ ত্বরণের উপর নির্ভর করে।
ক) নির্দিষ্ট স্থানে কোন সরল দোলকের দোলনকাল (T) এর কার্যকারী দৈর্ঘ্যের (L) বর্গমূলের সমানুপাতিক পরিবর্তন হয়। T ∝ √L যখন g ধ্রুব।
সরল দোলকের সুতার দৈর্ঘ কমলে, দোলনকাল কমে। শীতকালে দোলক ঘড়ি কার্যকরী দৈর্ঘ্য কমে যায় বলে দোলনকাল হ্রাস পায়। ফলে ঘড়িটির দ্রুত চলে।গ্রী ষ্মকালে অধিক তাপমাত্রা কারণে দোলক ঘড়ির কার্যকরী দৈর্ঘ্য বাড়ে। হলে দোলনকাল বাড়ে এবং ঘড়িটি ধীরে চলে।
খ) সরল দোলকের কার্যকরী দৈর্ঘ্য অপরিবর্তিত থাকলে দোলনকা অভিকর্ষজ (T) ত্বরণের বর্গমূলের ব্যস্তানুপাতিক পরিবর্তিত হয়। T ∝√(1/g) যখন L ধ্রুব। অভিকর্ষজ ত্বরণের মান বাড়লে সরল দোলকের দোলনকাল কমে। বিষুবরেখা অপেক্ষায় মেরুতে অভিকর্ষজ ত্বরণের মান বেশি হয়। এজন্য একটি পেন্ডুলাম ঘড়ি বিষুবরেখা থেকে মেরুতে নিলে এর দোলনকাল হ্রাস পায়। ফলে ঘড়িটি দ্রুত চলে।
গ) দোলনকাল ববের ভরের উপর নির্ভরশীল নয়। যেমন- একজন বালিকা দোলনায় দোল খাচ্ছে। সে উঠে দাঁড়ালে দোলনকালের কোন পরিবর্তন হবে না।
সরল দোলকের দোলন কাল T, কার্যকরি দৈর্ঘ্য L এবং অভিকর্ষজ ত্বরণ g হলে- T=2π√(L/g)
কাজ (Work)
কোন বস্তুর ওপর বল প্রয়োগে যদি বস্তুরটির সরণ ঘটে, তাহলে বল এবং বলের দিকে বলের প্রয়োগ বিন্দু সরণের উপাংশের গুণফলকে কাজ বলে। কাজের মাত্রা সমীকরণ ML2T2।
কাজ = বল ⤫ বলের দিকে সরণের উপাংশ।
আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে কাজের একক জুল। সিজিএস পদ্ধতিতে কাজের একক আর্গ। 1 জুল= 107 আর্গ। পাহাড়ে ওঠা বা সিঁড়ি ভাঙ্গায় অভিকর্ষ বলের বিপরীতে কাজ করতে হয় বলে পরিশ্রম বেশি হয়। পক্ষান্তরে পাহাড় থেকে বা সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় অভিকর্ষ বলের দিকে কাজ করতে হয় বলে পরিশ্রম কম হয়। পাহাড়ে ওঠার সময় শরীরকে স্থির রাখার জন্য সামনের দিকে ঝুঁকতে হয়।
ক্ষমতা (Power)
কাজ সম্পাদনকারী কোন ব্যক্তি বা উৎস এর কাজ করার হারকে ক্ষমতা বলে। ক্ষমতা = কাজ/সময়। ক্ষমতার একক ওয়াট। এক সেকেন্ডে এক জুল কাজ করার ক্ষমতাকে এক ওয়াট বলে।
৬ ঘণ্টা
সাড়ে ৫ ঘণ্টা
সাড়ে ৬ ঘণ্টা
৫ ঘণ্টা
কাজ (Work)
কোন বস্তুর ওপর বল প্রয়োগে যদি বস্তুরটির সরণ ঘটে, তাহলে বল এবং বলের দিকে বলের প্রয়োগ বিন্দু সরণের উপাংশের গুণফলকে কাজ বলে। কাজের মাত্রা সমীকরণ ML2T2।
কাজ = বল ⤫ বলের দিকে সরণের উপাংশ।
আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে কাজের একক জুল। সিজিএস পদ্ধতিতে কাজের একক আর্গ। 1 জুল= 107 আর্গ। পাহাড়ে ওঠা বা সিঁড়ি ভাঙ্গায় অভিকর্ষ বলের বিপরীতে কাজ করতে হয় বলে পরিশ্রম বেশি হয়। পক্ষান্তরে পাহাড় থেকে বা সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় অভিকর্ষ বলের দিকে কাজ করতে হয় বলে পরিশ্রম কম হয়। পাহাড়ে ওঠার সময় শরীরকে স্থির রাখার জন্য সামনের দিকে ঝুঁকতে হয়।
৬ ঘণ্টা
সাড়ে ৫ ঘণ্টা
সাড়ে ৬ ঘণ্টা
৫ ঘণ্টা
ক্ষমতা (Power)
কাজ সম্পাদনকারী কোন ব্যক্তি বা উৎস এর কাজ করার হারকে ক্ষমতা বলে। ক্ষমতা = কাজ/সময়। ক্ষমতার একক ওয়াট। এক সেকেন্ডে এক জুল কাজ করার ক্ষমতাকে এক ওয়াট বলে।
কাজ পরিমাপের একক
শক্তি পরিমাপের একক
ক্ষমতা পরিমাপের একক
চাপ পরিমাপের একক
অশ্ব ক্ষমতা (Horse power)
ইঞ্জিনের ক্ষমতা কে প্রকাশ করার জন্য অশ্বক্ষমতা একক ব্যবহৃত হয়। ১ অশ্ব ক্ষমতা (H.P) = ৭৪৬ ওয়াট = ০.৭৪৬ কিলোওয়াট। অর্থাৎ প্রতি সেকেন্ডে ৭৪৬ জুল কাজ করার ক্ষমতাকে এক অশ্ব ক্ষমতা বলে।
কাজ পরিমাপের একক
শক্তি পরিমাপের একক
ক্ষমতা পরিমাপের একক
চাপ পরিমাপের একক
শক্তি (Energy)
কোন বস্তুর কাজ করার সামর্থ্যকে শক্তি বলে। শক্তির একক ও কাজের একক একই অর্থাৎ জুল। মোটামুটি ভাবে আমরা শক্তি নয়টি রূপ পর্যবেক্ষণ করি। যথা- যান্ত্রিক শক্তির, তাপশক্তি, শব্দ শক্ত, আলোক শক্তি, চৌম্বক শক্ত, বিদ্যুৎ শক্ত, রাসায়নিক শক্ত, নিউক্লিয় শক্তি ও সৌরশক্তি।
শক্তি রূপান্তর,
শক্তি রূপান্তর,এনার্জি রূপান্তর হিসাবেও পরিচিত, এক রূপ থেকে অন্য রূপে শক্তি পরিবর্তনের প্রক্রিয়া। পদার্থবিজ্ঞানে, শক্তি এমন একটি পরিমাণ যা কাজ সম্পাদনের সক্ষমতা সরবরাহ করে (উদাঃ কোনও বস্তু উত্তোলন) বা তাপ সরবরাহ করে। রূপান্তরযোগ্য হওয়ার পাশাপাশি শক্তি সংরক্ষণের আইন অনুসারে, শক্তি অন্য কোনও স্থান বা বস্তুতে স্থানান্তরিত হয় তবে এটি তৈরি বা ধ্বংস হতে পারে না।এর বেশিরভাগ রূপের শক্তি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াগুলিতে বা সমাজকে গরম করার জন্য, রেফ্রিজারেশন, আলোতে বা মেশিনগুলি চালনার জন্য যান্ত্রিক কাজ সম্পাদনের মতো কিছু পরিষেবা সরবরাহ করতে ব্যবহৃত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কোনও বাড়ি গরম করার জন্য চুল্লি জ্বালানী পোড়ায়, যার রাসায়নিক সম্ভাব্য শক্তি তাপ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়, যা তারপরে তাপমাত্রা বাড়াতে বাড়ির বাতাসে স্থানান্তরিত হয়
কর্মদক্ষতা (Efficiency)
ইঞ্জিনের যতটুকু শক্তি পাওয়া যায় তাকে কার্যকর শক্তি বলে। কোন যন্ত্রের কর্মদক্ষতা বলতে যন্ত্রের থেকে মোট কার্যকর শক্তি পাওয়া যায় এবং মোট শক্তি দেওয়া হয়েছে তার অনুপাতকে বুঝায়। কর্মদক্ষতা = কার্যকর শক্তি/মোট প্রদত্ত শক্তি।
কর্মদক্ষতাকে η (গ্রীটা এটা) দ্বারা প্রকাশ করা হয়। কর্মদক্ষতাকে সাধারণ শতকরা হিসেবে প্রকাশ করা হয়ে থাকে।কোন যন্ত্রের কর্মদক্ষতা 90% বলতে কি বুঝায়, এই যন্ত্রের 100J শক্তি দেয়া হলে যন্ত্র থেকে 90J কার্যকর শক্তি পাওয়া যাবে। বৈদ্যুতিক ইঞ্জিন সর্বাপেক্ষা বেশি দক্ষতাসম্পন্ন ইঞ্জিন।
ঘনত্ব (Density)
বস্তুর একক আয়তনের ভরকে তার উপাদানের ঘনত্ব বলে। কোন বস্তুর ঘনত্ব বস্তুর উপাদান ও তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে।
চাপ (Density)
কোন পৃষ্টের এর একক ক্ষেত্রফলের উপর লম্বভাবে প্রযুক্ত বলের মানকে চাপ বলে। চাপের একক প্যাসকেল।
1 বায়ুমন্ডলীয় চাপ = 101325 প্যাসকেল।
চাপ = বলক্ষেত্রফল
প্যাসকেলের সূত্র: “পাত্রের আবদ্ধ তরল ও বায়বীয় পদার্থের কোন অংশের উপর বাইরে থেকে চাপ প্রয়োগ করলে সেই চাপ কিছুমাত্র না কমে তরল বায়বীয় পদার্থের সবদিকে সমানভাবে সঞ্চালিত হয় এবং তরল বায়বীয় পদার্থের সংলগ্ন পাত্রের গায়ে লম্বভাবে কিয়া করে।” প্যাসকেলের সূত্রের উপর ভিত্তি করে হাইড্রোলিক প্রেস তৈরি করা হয়েছে।
কোন নির্দিষ্ট স্থানে কোন ব্যক্তির ওজন (বল) অপরিবর্তিত থাকে। শোয়া অবস্থায় শরীরের অধিকাংশ (ক্ষেত্রফল) পৃথিবীর সংস্পর্শে থাকে। ফলে বল অধিক ক্ষেত্রফল এর মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রযুক্ত হয়। এজন্য শোয়া অবস্থায় মানুষ সবচেয়ে কম চাপ দেয়। আবার দৌড়ানো অবস্থায় মানুষের একটি পা পৃথিবীর সংস্পর্শে থাকে। এখানে ব্যক্তির ওজন (বল) শুধু একটি পায়ের (স্বল্প ক্ষেত্রফল) এর মাধ্যমে পৃথিবীর প্রযুক্ত হয়।এজন্য দৌড়ানো অবস্থায় মানুষ পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি চাপ দেয়। বিভিন্ন অবস্থায় মানুষের চাপ প্রয়োগের ক্রোম- দৌড়ানো > দাঁড়ানো > বসা > শোয়া।
প্লবতা (Buoyancy)
কোন বস্তুর সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে কোন স্থির তরল বায়বীয় পদার্থের নিমজ্জিত করলে তরল বায়বীয় পদার্থের চাপের উপর দিকে যে লব্ধি বল অনুভব করে তাকে প্লাবতা বলে। লবণাক্ত পানি সুস্বাদু পানি অপেক্ষায় ভারী। এজন্য সাগরের পানির ঘনত্ব পুকুর, বিল, নদী বা সুইমিংপুলের পানির ঘনত্ব অপেক্ষায় বেশি হয় এবং সাগরের পানি অপেক্ষাকৃত অধিক ঊর্ধ্বমুখী চাপ দেয়। সাগরের পানির প্লবতা অপেক্ষাকৃত বেশি বলে-
১. সাগরে সাঁতার কাটা পুকুর, বিল, নদী বা সুইমিংপুলের অপেক্ষায় সহজ।
২. একটি জাহাজ সমুদ্র হতে নদীর প্রবেশ করলে যাদের দল আরো ডুববে।
প্লিমসল লাইন (Plimsoll line)
ফিলমস অনলাইন অতিরিক্ত মাল বোঝাই এড়ানোর জন্য জাহাজের গায়ে চিহ্নিত রেখাকে প্লিমসল লাইন বলে। একে ওয়াটার লাইনেও বলে।
পৃষ্ঠটান (Surface Tension)
তরল মাত্র একটি ধর্ম আছে- তরল পৃষ্ঠ সর্বদা সংকুচিত হয়ে সর্বনিম্ন ক্ষেত্রফল আসতে চায়। তরলের মধ্যে যে বলের প্রভাবে বিশেষ ধর্ম প্রকাশ পায় সেই বলকে পৃষ্ঠটান বলে। তাপমাত্রা বাড়লে তরলের পৃষ্ঠটান হ্রাস পায়। আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে পৃষ্ঠটানের একক নিউটন/মিটার। তলীয় টানের জন্য পানির ছোট ফোঁটা বৃষ্টির ফোটা গোলকৃতি হয়। পৃষ্ঠটানের জন্যই নদীর ব্রিজের উপর দিয়ে হেঁটে যাবার সাথে সাথে পদচিহ্ন মুছে যায়।
কৈশিক ক্রিয়া (Capillary action)
কৈশিক নল এর মধ্য দিয়ে তরলের উঠা বা নামা হল কৈশিক ক্রিয়া। কৌশিকী এর মাধ্যমে তরলের(যেমন পানি,তৈল ইত্যাদি) একটি অনুর উপর উঠে আসার সময় সংসক্তি বলের কারণে তার সাথে লেগে থাকা অন্য অনুটিয় উপরেও উঠে আসে। এ প্রক্রিয়ায় কুপি হতে সলিতায় তেল আসে।
সান্দ্রতা (Viscosity)
তরল পদার্থের অভ্যন্তরীণ ঘর্ষণের ফলে প্রবাহে (বয়ে যেতে) বাধা দেবার প্রবণতাকে সান্দ্রতা বলে। সান্দ্রতার একক Poise.
চৌম্বক এবং চুম্বকত্ত্ব (Magnetism and Magnetism)
যে বস্তুর চুম্বক ক্ষেত্রে সৃষ্টি করে ফলে অন্য একটি চুম্বক চুম্বক পদার্থের ওপর বল প্রয়োগ করে তাকে চুম্বক বলে। চুম্বকের দুটি বিশেষ ধর্ম রয়েছে। যথা-
১. আকর্ষণীয় ধর্ম (Property of attraction)
২. দিক নির্দেশক ধর্ম (Property of direction): চুম্বক মুক্ত অবস্থা সবসময় উত্তর-দক্ষিণ দিক বরাবর থাকে। চুম্বকীয় কম্পাসের সাহায্যে সহজে দিক নির্ণয় করা যায়।
চৌম্বক এবং চুম্বকত্ত্ব (Magnetism and Magnetism)
যে বস্তুর চুম্বক ক্ষেত্রে সৃষ্টি করে ফলে অন্য একটি চুম্বক চুম্বক পদার্থের ওপর বল প্রয়োগ করে তাকে চুম্বক বলে। চুম্বকের দুটি বিশেষ ধর্ম রয়েছে। যথা-
১. আকর্ষণীয় ধর্ম (Property of attraction)
২. দিক নির্দেশক ধর্ম (Property of direction): চুম্বক মুক্ত অবস্থা সবসময় উত্তর-দক্ষিণ দিক বরাবর থাকে। চুম্বকীয় কম্পাসের সাহায্যে সহজে দিক নির্ণয় করা যায়।
চৌম্বক পদার্থ (Magnetic material)
যে সকল পদ থেকে চুম্বক আকর্ষণ করে এবং যাদের চুম্বককে পরিণত করা যায় তাদেরকে চৌম্বক পদার্থ বলে। যেমন- লোহা, লোহার যৌগ, লোহার সংকর ধাতু (যেমন- ইস্পাত) নিকেল এবং কোবাল্ট ইত্যাদি। যে সকল পদার্থকে চুম্বক আকর্ষণ করে না এবং যাদের চুম্বকে পরিণত করা যায় না তাদেরকে অচৌম্বক পদার্থ বলে। লোহা ইস্পাত ও কোবাল্ট বাদে প্রায় সব অচৌম্বক পদার্থ। যেমন- সোনা, রূপা, তামা, পিতল, অ্যালুমিনিয়াম, দস্তা টিন ইত্যাদি। ক্যাসেট প্লেয়ারের টেপে চৌম্বক পদার্থ যেমন (CrO2) ব্যবহার করা হয়। ক্যাসেটের ফিতার শব্দ চৌম্বক ক্ষেত্র হিসেবে রক্ষিত থাকে।
চৌম্বক এবং চুম্বকত্ত্ব (Magnetism and Magnetism)
যে বস্তুর চুম্বক ক্ষেত্রে সৃষ্টি করে ফলে অন্য একটি চুম্বক চুম্বক পদার্থের ওপর বল প্রয়োগ করে তাকে চুম্বক বলে। চুম্বকের দুটি বিশেষ ধর্ম রয়েছে। যথা-
১. আকর্ষণীয় ধর্ম (Property of attraction)
২. দিক নির্দেশক ধর্ম (Property of direction): চুম্বক মুক্ত অবস্থা সবসময় উত্তর-দক্ষিণ দিক বরাবর থাকে। চুম্বকীয় কম্পাসের সাহায্যে সহজে দিক নির্ণয় করা যায়।
বিটা রশ্মি
আলফা রশ্মি
এক্সরে রশ্মি
গামা রশ্মি
চৌম্বক পদার্থ (Magnetic material)
যে সকল পদ থেকে চুম্বক আকর্ষণ করে এবং যাদের চুম্বককে পরিণত করা যায় তাদেরকে চৌম্বক পদার্থ বলে। যেমন- লোহা, লোহার যৌগ, লোহার সংকর ধাতু (যেমন- ইস্পাত) নিকেল এবং কোবাল্ট ইত্যাদি। যে সকল পদার্থকে চুম্বক আকর্ষণ করে না এবং যাদের চুম্বকে পরিণত করা যায় না তাদেরকে অচৌম্বক পদার্থ বলে। লোহা ইস্পাত ও কোবাল্ট বাদে প্রায় সব অচৌম্বক পদার্থ। যেমন- সোনা, রূপা, তামা, পিতল, অ্যালুমিনিয়াম, দস্তা টিন ইত্যাদি। ক্যাসেট প্লেয়ারের টেপে চৌম্বক পদার্থ যেমন (CrO2) ব্যবহার করা হয়। ক্যাসেটের ফিতার শব্দ চৌম্বক ক্ষেত্র হিসেবে রক্ষিত থাকে।
বিটা রশ্মি
আলফা রশ্মি
এক্সরে রশ্মি
গামা রশ্মি
চুম্বকের প্রকারভেদ (Types of magnets)
অস্থায়ী চুম্বক: চৌম্বক ক্ষেত্রে অপসারিত হওয়ার সাথে সাথে যে কৃত্রিম চুম্বক এর চুম্বকত্ব বিলুপ্ত হয় তাকে অস্থায়ী চুম্বক বলে। সাধারণত কাঁচা লোহার, নিকেল ও লোহার সংকর ধাতু পারমালয় অস্থায়ী চুম্বক তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। মোটর, জেনারেটর, ট্রান্সফর্মার ইত্যাদি তৈরিতে অস্থায়ী চুম্বক ব্যবহৃত হয়। কলিংবেলে নরম লোহা ব্যবহার করা হয় কারণ, বিদ্যুৎ প্রবাহের অনবদ্য অস্থায়ী চুম্বক এ পরিণত হতে পারে।
স্থায়ী চুম্বক: চৌম্বক ক্ষেত্রের অপসারিত হলেও যে কৃত্রিম চুম্বক চুম্বকত্ব সহজে বিলুপ্ত হয় না তাকে স্থায়ী চুম্বক বলে। স্থায়ী চুম্বক তৈরিতে ইস্পাত, এলনিকো সংকর বা ফেরাইট যৌগিক পদার্থ ব্যবহৃত হয়। টেপ রেকর্ডার এবং কম্পিউটারের স্মৃতির ফিতায় সিরামিক চুম্বক ব্যবহার হয়।
শব্দ
পদার্থবিজ্ঞানে শব্দ হলো একধরনের কম্পন যা গ্যাস, তরল বা কঠিন মাধ্যমের সাহায্যে শব্দ তরঙ্গ হিসাবে সঞ্চালিত হয়।মানব শারীরতত্ত্ব এবং মনোবিজ্ঞানে শব্দ হলো একধরনের তরঙ্গের শ্রবণ এবং মস্তিষ্ক কর্তৃক এগুলো উপলব্ধি করা।[১] যেসকল শব্দের কম্পাঙ্ক ২০ Hz থেকে ২০ kHz কম্পাঙ্ক সীমার মধ্যে অবস্থিত, কেবল সেই শব্দই মানুষের মধ্যে শ্রবণ অনুভূতি প্রকাশ করে। সাধারণ বায়ুমণ্ডলীয় চাপে ও বায়ু মাধ্যমে এই শব্দের তরঙ্গদৈর্ঘ্য ১৭ মিটার (৫৬ ফু) থেকে ১.৭ সেন্টিমিটার (০.৬৭ ইঞ্চি)। ২০ k Hz উপরের শব্দ তরঙ্গগুলি আল্ট্রাসাউন্ড বা শ্রবণাতীত শব্দ হিসাবে পরিচিত এবং এগুলো মানুষের কাছে শ্রবণীয় নয়। ২০ Hz নিচে শব্দ তরঙ্গগুলি ইনফ্রাসাউন্ড বা অবশ্রাব্য শব্দ হিসাবে পরিচিত। বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণির শ্রবণসীমা বিভিন্ন হয়ে থাকে
তরঙ্গ হচ্ছে - যে পর্যাবৃত্ত আন্দোলন বা আলোড়নের সঞ্চালনের ফলে শক্তি এক স্থান থেকে আরেক স্থানে স্থানান্তরিত হয়। কিছু তরঙ্গ আছে যেগুলি সঞ্চালনের জন্য মাধ্যমের প্রয়োজন। আবার কিছু তরঙ্গ আছে যেগুলি সঞ্চালনের জন্য মাধ্যমের প্রয়োজন হয়না। এমনি দুইটি উদাহরণ হচ্ছে - শব্দ ও সূর্য থেকে পৃথিবীতে আসা শক্তি। শব্দ চলাচলের জন্য মাধ্যমের প্রয়োজন হলেও সূর্য থেকে যে শক্তি পৃথিবীতে আসে তা মাধ্যম ছাড়াই সঞ্চালিত হতে পারে। কেননা সূর্য থেকে পৃথিবীতে আসার সময় এই শক্তিকে এক বিশাল মাধ্যমহীন পথ অতিক্রম করে আসতে হয়।
তরঙ্গ (Sound)
কোন স্থিতিস্থাপক জড় মাধ্যমে বিভিন্ন কোণের সমষ্টিগত পর্যায়বৃত্ত কম্পনের ফলে মাধ্যমে যে আলোড়ন সৃষ্টি হয় তাকে তরঙ্গ বলে। যথা- লম্বিক অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ এবং আড় অনুপ্রস্থ তরঙ্গ। শব্দ এক ধরনের দৈর্ঘ্য তরঙ্গ। তরঙ্গ বেগ (V) = তরঙ্গ দৈর্ঘ্য (V) ⤫ কম্পাঙ্ক (f)
চাঁদে বায়ুমন্ডল নেই। তাই যদি চন্দ্রপৃষ্ঠে কোনো প্রচন্ড বিস্ফোরণ ঘটে তা পৃথিবীতে কখনও শোনা যাবে না। ভ্যাকুয়াম বা শূন্যের মধ্য দিয়ে শব্দ সঞ্চালিত হতে পারে না।
শব্দ
পর্থবিজ্ঞানে শব্দ হলো একধরনের কম্পন যা গ্যাস, তরল বা কঠিন মাধ্যমের সাহায্যে শব্দ তরঙ্গ হিসাবে সঞ্চালিত হয়।মানব শারীরতত্ত্ব এবং মনোবিজ্ঞানে শব্দ হলো একধরনের তরঙ্গের শ্রবণ এবং মস্তিষ্ক কর্তৃক এগুলো উপলব্ধি করা।[১] যেসকল শব্দের কম্পাঙ্ক ২০ Hz থেকে ২০ kHz কম্পাঙ্ক সীমার মধ্যে অবস্থিত, কেবল সেই শব্দই মানুষের মধ্যে শ্রবণ অনুভূতি প্রকাশ করে। সাধারণ বায়ুমণ্ডলীয় চাপে ও বায়ু মাধ্যমে এই শব্দের তরঙ্গদৈর্ঘ্য ১৭ মিটার (৫৬ ফু) থেকে ১.৭ সেন্টিমিটার (০.৬৭ ইঞ্চি)। ২০ k Hz উপরের শব্দ তরঙ্গগুলি আল্ট্রাসাউন্ড বা শ্রবণাতীত শব্দ হিসাবে পরিচিত এবং এগুলো মানুষের কাছে শ্রবণীয় নয়। ২০ Hz নিচে শব্দ তরঙ্গগুলি ইনফ্রাসাউন্ড বা অবশ্রাব্য শব্দ হিসাবে পরিচিত। বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণির শ্রবণসীমা বিভিন্ন হয়ে থাকে
শব্দের দ্রুতি (Speed of Sound)
শব্দ প্রতি সেকেন্ডে যে দূরত্ব অতিক্রম করে তাকে শব্দের গতি বা দ্রুতি বলে। বাতাসে শব্দের দ্রুতি সেকেন্ডে ৩৩২ মিটার। কঠিন মাধ্যমে (যেমন- ইস্পাত, লোহা প্রভৃতি) শব্দ সবচেয়ে দ্রুত চলে, তরলের মাধ্যমে (যেমন- পানি) তার চেয়ে ধীরে চলে। বায়বীয় মাধ্যমে শব্দের দ্রুতি সবচেয়ে কম আর ভ্রাকুয়াম বা শূন্য শব্দের দ্রুতি শূন্য। বিভিন্ন মাধ্যমে শব্দের বেগে ক্রম কঠিন > তরল > বায়বীয়। লোহার মধ্য শব্দ বাতাসের চেয়ে ১৫ গুন দ্রুত চলে। পানির মধ্যে শব্দ বাতাসের চেয়ে চারগুণ দ্রুত চলে। তাই কেউ পানিতে ডুব দিয়ে হাততালি দিলে সেই তালি শব্দ ডুবন্ত অবস্থায় থাকা ব্যক্তির জোরে শুনতে পাবে। অনুরূপভাবে, সমুদ্রের তীরে একটা বিস্ফোরণ ঘটলে এক কিলোমিটার দূরে সমুদ্রের পানির নিচে অবস্থানকারী ব্যক্তি একই দূরত্ব সমুদ্রের ভূমিতে অবস্থানকারী ব্যক্তির অপেক্ষার আগে শুনতে পাবে।
মাধ্যম
শব্দের দ্রুতি
লোহা
৫২২১ ./সে.
৭৫৭ মাইল/ঘন্টা
পানি
১৪৫০ মি./সে.
শুষ্ক বায়ু
৩৩২ মি./সে.
প্রতিধ্বনি (Echo)
কোন উৎস থেকে সৃষ্টি শব্দ যতক্ষণ দূরবর্তী কোনো মাধ্যমের কাছে ফিরে আসে তখন মূল ধ্বনি যে পুনরাবৃত্তি হয় তাকে শব্দের প্রতিধ্বনি বলে। এককথায় প্রতিফলিত শব্দকে বলা হয় প্রতিধ্বনি। কোন শব্দ শোনার পর প্রায় ০.১ সেকেন্ড পর্যন্ত এর রেশ আমাদের মস্তিষ্কে থাকে। এই সময়কে শব্দানুভূতির স্থায়িত্বকাল বলে। শব্দের প্রতিধ্বনি শোনার জন্য উৎস ও প্রতিফলকের মধ্যবর্তী দূরত্ব নূন্যতম ১৬.৬ মিটার হওয়া প্রয়োজন। শব্দের প্রতিধ্বনি ব্যবহার করে সমুদ্র ও কুয়ার গভীরতা নির্ণয় করা হয়।
শ্রাব্যতার পাল্লা এবং শব্দোত্তর ও শব্দেতর তরঙ্গ
Audibility rang and Ultrasonic and Infrasonic waves
উৎসের কম্পাঙ্ক ২০ HZ থেকে ২০০০০ HZ এর মধ্যে সীমিত থাকলে কেবল মানুষ তা শুনতে পারে। একে শ্রাব্যতার পাল্লা বলে। যে তরঙ্গের কম্পাঙ্ক ২০০০০ HZ এর চেয়ে বেশি তাকে শ্রাব্যতার তরঙ্গ বলে। আর কম্পাঙ্ক ২০০০০ HZ এর চেয়ে কম তাকে শব্দেতর তরঙ্গ বলে। কোয়াটজ ক্টিস্টাল অসিলেটরের এর মাধ্যমে শব্দ তরঙ্গের উৎপন্ন করা যায়। কোন কোন জীবন্ত আল্ট্রাসনিক শব্দ শুনতে পায়। যেমন কুকুরের শ্রাব্যতার উচ্চসীমা প্রায় ৩৫০০০ HZ এবং বাদুড়ের প্রায় ১০০০০০ HZ। বাদুড় চোখে দেখে না। বাদুড় চলার সময় বিভিন্ন কম্পাঙ্কের শব্দেতর সৃষ্টি করে। বাদুড় তার সৃষ্টির শব্দোত্তর তরঙ্গের প্রতিধ্বনি শুনে প্রতিবন্ধক এর অবস্থান এবং প্রকৃতি সমন্বয় ধারণা লাভ করে এবং পথ চলার সময় সেই প্রতিবন্ধক পরিহার করে।
ডপলার ক্রিয়া বা প্রভাব (Doppler Effect)
শব্দের উৎস শ্রোতার মধ্যে আপেক্ষিক গতি বিদ্যমান থাকলে শ্রোতার নিকট উৎস হতে নিঃসৃত শব্দের তীক্ষ্ণতা বা কম্পাঙ্কের যে আপাত পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয় তাকে ডপলার ক্রিয়া বা প্রভাব বলে। ডপলার ক্রিয়ার ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত তিনটি বিষয় বিবেচনা করা হয়-
ক) উৎস গতিশীল কিন্তু শ্রোতা স্থির
- উৎস শ্রোতার দিকে অগ্রসর হলে শব্দের কম্পাঙ্ক প্রকৃত কম্পাঙ্কের চেয়ে বেশি হবে।
- উৎস শ্রোতার থেকে দূরে সরে গেলে শব্দের আপাত কম্পাঙ্ক প্রকৃত কম্পাঙ্কের চেয়ে কম হবে।
খ) উৎস স্থির কিন্তু শ্রোতা গতিশীল
- শ্রোতা উৎসের দিকে অগ্রসর হলে শব্দের আপাত কম্পাঙ্ক প্রকৃত কম্পাঙ্কের চেয়ে বেশি হবে।
- শ্রোতা উৎসের থেকে দূরে সরে গেলে শব্দের আপাত কম্পাঙ্ক প্রকৃত কম্পাঙ্কের চেয়ে কম হবে।
গ) উৎস ও শ্রোতা উভয়ই গতিশীল
উৎস ও শ্রোতার মধ্যে আপেক্ষিক গতিবেগ না থাকলে কম্পনের কোন
তাপ (Heat)
তাপ এক প্রকার শক্তি যা ঠান্ডা বা গরমের অনুভূতি জাগায়। অর্থাৎ, যে বাহ্যিক কারণে ঠাণ্ডা বা গরমের অনুভূতি হয় তাকে তাপ বরে।
একক: তাপ শক্তির একটি রুপ। তাই আন্তর্জাতিক (S.I) পদ্ধতিতে তাপের একক জুল (J)। সিজিএস পদ্ধতিতে তাপের একক ক্যালরি। এক গ্রাম পানির তাপমাত্রা 100 সেলসিয়াস বৃদ্ধির জন্য যে পরিমাণ তাপের প্রয়োজন, তাকে 1 ক্যালরি তাপ বলে।
1 ক্যালরি (cal) =4.2 জুল (j)
তাপ (Heat)
তাপ এক প্রকার শক্তি যা ঠান্ডা বা গরমের অনুভূতি জাগায়। অর্থাৎ, যে বাহ্যিক কারণে ঠাণ্ডা বা গরমের অনুভূতি হয় তাকে তাপ বরে।
একক: তাপ শক্তির একটি রুপ। তাই আন্তর্জাতিক (S.I) পদ্ধতিতে তাপের একক জুল (J)। সিজিএস পদ্ধতিতে তাপের একক ক্যালরি। এক গ্রাম পানির তাপমাত্রা 100 সেলসিয়াস বৃদ্ধির জন্য যে পরিমাণ তাপের প্রয়োজন, তাকে 1 ক্যালরি তাপ বলে।
1 ক্যালরি (cal) =4.2 জুল (j)
তাপমাত্রা বা উষ্ণতা ( Temperature)
তাপমাত্রা হচ্ছে কোন বস্তুর তাপীয় অবস্থা যা নির্ধারণ করে ঐ বস্তুটি অন্য বস্তুর তাপীয় সংস্পর্শে এসে বস্তুটি তাপ গ্রহণ করবে না বর্জন করবে।
একক: আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে (SI) তাপমাত্রার একক কেলভিন (K)। সিজিএস পদ্ধতিতে উষ্ণতার একক হচ্ছে ডিগ্রি সেলসিয়াস (C)।
সেলসিয়াস, ফারেনহাইট এবং কেলভিন স্কেলের মধ্য সম্পর্ক
C5=F-329=K-2735
সেন্টিগ্রেড স্কেলে তাপমাত্রা পরিবর্তন = কেলভিন স্কেলে তাপমাত্রার পরিবর্তন। উদাহরণ : সেন্টিগ্রেড স্কেলে তাপমাত্রা 150 পরিবর্তিত হলে কেলভিন স্কেলে 150 তাপমাত্রা পরিবর্তিত হয়।
পরম শূন্য তাপমাত্রা ( Absolute zero temperature)
যে তাপমাত্রায় কোনো গ্যাসের আয়তন শূন্য হয়ে যায়, তাকে পরম শূন্য তাপমাত্রা বলে। - ২৭৩∘ সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রাকে পরম শূন্য তাপমাত্রা বলা হয়। পরমশূন্য তাপমাত্রাকে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বা চরম শূন্য তাপমাত্রা বা চরম শীতলতাও বলা হয়।
00 কেলভিন = - 273.15 সেলসিয়াস = - 459.40 ফারেনহাইট
তাপমাত্রার কেলভিন স্কেলে ‘শূন্য’ ডিগ্রি সবচেয়ে বেশি ঠান্ডা।
প্রমাণ তাপমাত্রা এবং চাপ (Standrad Temperature and Pressure)
০০C তাপমপত্রা বা ২৭৩ K তাপমাত্রাকে প্রমাণ তাপমাত্রা বলে। ৭৬৯ মিলিমিটার বা ৭৬ সেন্টিমিটার পারদ চাপকে প্রমাণ চাপ বলে।
ক্লিনিক্যাল থার্মোমিটার (Clinical Thermometer)
যে থার্মোমিটারের সাহায্যে শরীরের তাপমাত্রা মাপা হয় তাকে ক্লিনিকাল থার্মোমিটার বলে। এই থার্মোমিটারে ফারেনহাইট (F) স্কেল ব্যবহার করা হয়। ক্লিনিক্যাল থার্মোমিটারে 95 - 1100 ফা. পর্যন্ত দাগ কাঁটা থাকে। মানব দেহের স্বাভাবিক উষ্ণতা 98.40 ফারেনহাইট বা 36.90 সেলসিয়াস।
পদার্থের তাপজনিত প্রসারণ (Thermal Exapantion of Material)
কছঠন পদার্থের প্রসারণ তিন প্রকার হয়; যথা – দৈঘ্য প্রসারণ, ক্ষেত্র প্রসারণ এবং আয়তন প্রসারণ। কিন্তু তরল এবং বায়বীয় পদার্থের প্রসারণ বলতে এদের আয়তন প্রসারণকে বুঝায়। সামান্য কিছূ ব্যতিক্রম ছাড়া সকল পদার্থই তাপ প্রয়োগে প্রসারিত এবং তাপ অপসারন করলে সংকুচিত হয়। গ্যাসীয় পদার্থের চেয়ে তরল পদার্থের প্রসারণ অপেক্ষাকৃত কম এবং কঠিন পদার্থের প্রসারণ হয় সবচেয়ে কম। তাপ প্রয়োগে পদার্থের প্রসারণ ক্রম : বায়বীয় পদার্থ > তরল পদার্থ > কঠিন পদার্থ
প্রসারণের কয়েকটি উদাহরণ-
১. মাঝখানে গোলাকার ছিদ্রবিশিষ্ট একটি প্লেটকে উত্তপ্ত করলে প্রসারণের ফলে মাঝখানের ছিদ্রটির ব্যাস কমবে।
২. পুরু কাচেঁর গ্লাসে গরম পানীয় ঢাললে গ্লাসটি ফেটে যায়। গ্লাসে গরম পানীয় ঢালার ফলে ঐ গ্লাসের ভিতরের অংশ গরম পানির সংস্পর্শে প্রসারিত হয়। কিন্তু কাচ তাপের কুপরিবাহক বলে। ঐ তাপ বাহিরের অংষশ সঞ্চালিত হতে পারেনা । তাই ভিতরের অংশ প্রসারিত হলেও বাহিরের অংশ প্রসারিত হতে পারে না। ফলে গ্লাসের ভিতরে ও বাহিরে অসম আয়তন প্রসারনের জন্য গ্লাসটি ফেঁটে যায়।
৩. সূর্যের তাপে বা যখন ট্রেন চলে তখনকার চাকার ঘর্ষনের ফলে উৎপন্ন তাপে রেললাইন প্রসারিত হয়। ফিসপ্লেট দ্বারা রেললাইনের দুইটি রেলকে সংযুক্ত করা হলেও দুটি রেলের ফাঁক রাখা হয়, যাতে রেল লাইনের প্রসারনের ফলে লাইন বেঁকে গিয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে।
৪. বিদ্যুৎ ও টেলিফোনের তার ঝুলিয়ে টানা হয়। কারণ তাপমাত্রা হ্রাস পেলে ধাতব তার সঙ্কুচিত হয়। তারগুলো যদি টান টান থাকে তাহলে শীতকালে সঙ্কচনের ফলে তার ছিড়েঁ যেতে বা পোস্ট ভেঙ্গে যেতে পারে, তাই তারগুলো ঢিলা রাখা হয় যেন ছিড়ে না যায়।
৫. একখন্ড পাথরকে উত্তপ্ত করলে পাথরের ভেতরের অংশ থেকে বাহিরের আবরাণ বেশি উত্তপ্ত ও প্রসারিত হয়, তাই ফেটে যায়।
পানির ব্যতিক্রমী প্রসারণ (Anomalous expansion of water)
তরল পদার্থের তাপ প্রয়োগ করলে তার আয়তন বাড়ে, তাপ অপসারণ করলে আয়তন কমে কিন্তু ০০ সে. তাপমাত্রার পানিতে উত্তপ্ত করলে এর আয়তন বাড়ে না বরং কমে। ৪০ সে.তাপমাত্রা পর্যন্ত এরূপ ঘটে। ৪০ সে.তাপমাত্রার পানিতে গরম বা ঠান্ডা যাই করা হোক না কেন তা প্রসারিত হয়। এটি তরল পদার্থের প্রসারণের সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রমী প্রসারণ বলে। ৪০ সেলসিয়াস উষ্ণতায় পানির ঘনত্ব তাই সবচেয়ে বেশি । পানির এই ব্যতীক্রমী প্রসারণের জন্য শীতপ্রধান দেশে পুকুর, নদী বা সাগরের জলজ জীবের বেঁচে থাকতে পারে। পানির ব্যতিক্রমী প্রসারণের জন্য পুকুর, নদী বা সাগরের সমস্ত পনি জমে বরফ হয়ে যায় না। উপরে বরফ জমে গেলেও নিচে ৪০ সে. তাপমাত্রার পানি থেকে যায় বলে জলজ জীবের পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব হয়।
গলনাঙ্কের উপর চাপের প্রভাব (Effect of pressure on Melting point)
অধিকাংশ পদার্থের কঠিন অবস্থা থেকে তরল অবস্থায় রূপান্তরের সময় আয়তন বৃদ্ধি পায়। পক্ষান্তরে তরল অবস্থা থেকে কঠিন অবস্থায় রূপান্তরের সময় আয়তন কমে যায়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমও দেখা যায়। যেমন: বরফ ( পানি), ঢালাই,লোহা,পিতল,বিসমাথ,অ্যান্টিমনি ইত্যাদি। এসব পদার্থ কঠিন থেকে তরল অবস্থায় রূপান্তরিত হলে আয়তন কমে যায় আর তরল অবস্থা থেকে কঠিন অবস্থায় রূপান্তরের সময় আয়তন বেড়ে যায়। কঠিন হতে তরলে রপান্তরের সময় যেসব পদার্থের আয়তন বৃদ্ধি পায়, চাপ বাড়লে ঐই সকল পদার্থ গলনাঙ্ক বেড়ে যায়। আর যেসব পদার্থ কঠিন হতে তরলে রূপান্তরের সময় আয়তন হ্রাস পায়,চাপ বাড়ালে ঐই সকল পদার্থ গলনাঙ্ক কমে যায়।
পুন:শিলীভবন (REGELATION)
দুই টুকরো বরফে একত্রে ধীরে চাপ দিলে ওরা জোড়া লেগে যায়। যখন বরফ টুকরো দুইটির উপর চাপ দেয়া হয়, তখন তাদের সংযোগস্থলে গলনাঙ্ক ০০ সে. এর নিচে নেমে আসে। কিন্তু সংযোগস্থলের তাপমাত্রা ০০ থাকায় ঐ জায়গায় বরফ গলে যায়। এখন যেই চাপ অসাধারণ করা হয়, তখন গলনাঙ্ক আবার ০০ সে. এ চলে আসে; ফলে সংযোগস্থলের বরফ গলা পানি জমাট বেধে টুকরো দুটিকে জুড়ে দেয়। এভাবে চাপ দিয়ে কঠিন বস্তকে তরলে পরিণত করে ও চাপ হ্রাস করে আবার কঠিন অবস্থায় আনাকে পুনঃশিলীভবন বলে।
স্ফুটনাঙ্কের উপর চাপের প্রভাব (Effect of pressure on Boiling point)
খোলা পাত্রে রাখা তরলের ওপরে কিছু বাষ্প থাকে । পাত্রটি যদি শূন্যস্থানে থাকত তাহলে তরলের উপরিস্থিতি বাষ্পকে ঠেকিয়ে রাখার মতো কোনো চাপ থাকত না, ফলে সমস্ত তরল বাষ্প হয়ে যেত। কিন্তু বাস্তবে বায়ুচাপ তরলের বাষ্প অনুগুলোকে ছড়িয়ে পড়তে দেয়না। কক্ষ তাপমাত্রা পানির বাষ্পচাপ বায়ুর চাপের তুলনায় কম হয়, এই কারণে পানির বাষ্প বায়ুর অনুগুলোকে সরিয়ে মুক্ত হতে পারে না কিন্তু তাপমাত্রা যতই বাড়ানো হয়, পানির গড়গতি শক্তি বৃদ্ধি পায় অর্থাৎ আরও বেশি সংখ্যক অনু বাষ্পে যেতে পারে। এইভাবে যতই তরলের বাষ্প মুক্ত হতে থাকে, তরলস্থিত বাতাসের অনুগুলোকে সরিয়ে মুক্ত হতে পারে। এইভাবে যতই তরলের বাষ্প মুক্ত হতে থাকে, তরলস্থিত অনুও একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায়। সেই তাপমাত্রাকে তরলের স্ফুটনাঙ্ক বলে। এজন্য চাপ বাড়ালে তরলের স্ফুটনাঙ্ক বেড়ে যায় এবং চাপ কমলে স্ফুটনাঙ্ক কমে যায়। স্বাভাবিক বায়ুমন্ডলীয় চাপে পানির স্ফুটনাঙ্ক ১০০০ সে.। কিন্তু বায়ুর চাপ কম থাকায় এভারেস্ট পর্বতের উপর পানির স্ফুটনাঙ্ক কম বলে কম তাপমাত্রায় পানি ফুটতে শুরু করে, কিন্তু মাছ,মাংস,ডিম প্রভৃতি দ্রুত সিদ্ধ হয়না। এজন্য সুউচ্চপাহাড় বা পরবর্তের চূড়ায় রান্না করা দূরহ হয়ে পড়ে। ঢাকনা দেয়া পাত্র বা প্রেসার কুকার ব্যবহার করে এই অসুবিধা কাটানো যায়। প্রেসার কুকার উচ্চটাপে পানি স্ফুটনাঙ্ক বৃদ্ধি পায়। ফলে রান্না তাড়াতাড়ি হয়। পৃথিবীপৃষ্ঠ হতে যত উপরে উঠা যায় তত বায়ুর চাপ কমতে থাকে । কাজেই উপরে উঠলে দেহের ভেতরের চাপ বাহিরের বায়ুর চাপ অপেক্ষা অধিক হলে দেহের রক্তনালীতে প্রচন্ড চাপ পড়ে। এ চাপে নাক – মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়ে আসে। এ জন্য পর্বত আরোহীকে আটসাট পোশাক পরিধান করতে হয়।
সমুদ্রতলে এবং ভূ-পৃষ্ঠ হতে ২ মাইল উঁচুতে (যেমন- পাহাড়ে) বায়ুতে অক্সিজেনের শতকরা সঙযুক্তি প্রায় সমান (২১%)। কিন্তু ভূ-পৃষ্ঠ হতে ২ মাইল বায়ুমন্ডলীয় চাপ সমুদ্রতলের বায়ুমন্ডলীয় চাপ অপেক্ষা ৩০% কম অর্থাৎ উঁচু স্থানে বায়ুর অণুসমূহ পরস্পর হতে দূরে অবস্থান করে চাপ কম হওয়ায় বায়ু হতে কম অক্সিজেন শরীরের রক্তনালীতে প্রবেশ করে। ফলে শ্বাস কষ্ট হয়। এজন্য পর্বত আরোহীরা উঁচু পর্বতে উঠতে গেলে সিলিন্ডারে করে অক্সিজেন নিয়ে যায়।
ঠিক থাকে
বেশি হয়
কম হয়
কোনোটিই নয়
বাষ্পীভবন (Vaporization)
কোনো পদার্থের তরল অবস্থা থেকে বায়বীয় অবস্থায় পরিবর্তনকে বাষ্পীভবন বলে। সাধারণত দুভাবে বাষ্পীভবন সংঘটিত হয়। যথা- (ক) স্বত:বাষ্পীভবন (Evaporation) (খ) স্ফুটন (Boiling)
বাষ্পীভবনের কয়েকটি উদাহরণ-
১. মাটির কলসীর গায়ে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র থাকে। এসব ছিদ্র দিয়ে পানি কলসীর উপরীতলে এসে পৌছে এবং পানি বাষ্পায়ন ঘটে। বাষ্পায়নের প্রয়োজনীয় সুপ্ততাপ কলসীর পানি হতে গৃহীত হয় । ফলে তাপ হারিয়ে কলসীর পানি শীতল হয়।
২. ফ্যান চালালে আমরা ঠান্ডা অনুভব করি কারণ ফ্যান শরীর থেকে বাষ্পীভবনের হার বাড়িয়ে দেয়।
৩. ভিজা কাপড় গায়ে রাখলে কাপড়েরর পানি ধীরে ধীরে বাষ্পীভূত হতে থাকে । এ বাষ্পীভবনের জন্য প্রয়োজনীয় সুপ্ততাপ শরীর হতে গৃহীত হয়। ফলে শরীরের তাপমাত্রা কমে যায়। বেশিক্ষন শরীরে বাষ্পূভবন হলে শরীর ঠান্ডা হয়ে যায় এবং সর্দি হওয়ার সম্বাবনা থাকে।
তাপ সঞ্চালন (Transmission of Heat)
তাপ সঞ্চালন হলে তাপের স্থান পরিবর্তন, যা সর্বদা উচ্চ তাপমাত্রা বিশিষ্ট স্থানে প্রবাহিত হয়। তাপ তিন পদ্ধতিতে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সঞ্চালিত হতে পারে যথা: পরিবহন,পরিচলন,এবঙ বিকিরণ।
তাপের শোষণ এবং বিকিরণ ( Heat absorption and radiation)
কালো রঙের বস্তুর তাপ বিকিরণ এবং শোষণ ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি। এজন্য গ্রীষ্মকালে কালো কাপড় পরিধান করা কষ্টদায়ক। কালো রঙ অধিক তাপ শোষণ করে বলে ছাতার কাপড়ের রঙ সাধারণত কালো হয়্ তাপ বিকিরণ ক্ষমতা অধিক বলে কালো রঙের কাপে চা তাড়াতাড়ি ঠান্ডা হয়। সাদা রঙের বস্তু রতাপ বিকিরণ এবং শোষণ ক্ষমতা সবচেয়ে কম। এজন্য গ্রীষ্মকালে সাদা কাপড় পরিধান করা আরামদায়ক। তাপের বিকিরণ থেকে বাঁচার জন্য শহরের রাষ্তায় ট্রাফিক পুলিশ সাধারণ সাদা ছাতা ও জামা ব্যবহার করে। তাপ বিকিরণ ক্ষমতা কম বলে সাদা রঙের কাপে চা বেশিক্ষণ গরম থাকে।
আপেক্ষিক তাপ (Specific Heat)
কোনো বস্তু 1 কেজি (Kg) ভরের তাপমাত্রা 1 কেলভিন (K) বাড়াতে যে তাপের প্রয়োজন হয়, তাকে ঐ বস্তুর উপাদানের আপেক্ষিক তাপ বলে। আপেক্ষিক তাপের একক জুল/কেজি-কেলভিন (JKg-1K-1) । যেমন : পানির আপেক্ষিক তাপ 4200 JKg-1K-1, দুধের আপেক্ষিক তাপ 3930 JKg-1K-1। অন্যান্য পদার্থের তুলনায় পানির আপেক্ষিক তাপ অনেক বেশি। অনেক তাপ শোষণ করলেও পানির উষ্ণতা অল্প বৃদ্ধি পায়। পানির উচ্চ আপেক্ষিক তাপের জন্যই মোটরগাড়ির ইঞ্জিনকে ঠাণ্ডা রাখার জন্য পানি ব্যবহৃত হয়।
তাপধারণ ক্ষমতা (Heat Capacity)
কোন বস্তুর তাপমাত্রা 1K বাড়াতে যে তাপের প্রয়োজন হয় তাকে ঐ বস্তুর তাপধারণ ক্ষমতা বলে। তাপধারণ ক্ষমতার একক জুল/কেলভিন। (JK-1)।
তাপধারণ ক্ষমতা = ভর × আপেক্ষিত তাপ।
তাপ ইঞ্চিন ( Heat Engine)
যে যন্ত্র শক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে রুপান্তরিত করে তাকে তাপ ইঞ্চিন বলে। যেমন : বাষ্পীয় ইঞ্জিন, পেট্রোল ইঞ্চিন, ডিজেল ইঞ্চিন ইত্যাদি।
এক নজরে তাপীয় ইঞ্চিনসমূহ
তাপ ইঞ্চিন
আবিষ্কারক দেশ সময়কাল
রাষ্পীয় ইঞ্চিন - জেমসওয়াট -স্কটল্যান্ড-১৭৮১
রেলওয়ে ইঞ্চিন-ষ্টিফেনসন-যুক্তরাজ্য-১৮২৫
পেট্রোল ইঞ্চিন-ড. অটো-জার্মানি-১৮৭৬
ডিজেল ইঞ্জিন-রুডলফ ডিজেল-জার্মানি-১৮৯২
স্টেপ -আপ ট্রান্সফরমারের সাহায্যে
স্টেপ -ডাউন ট্রান্সফরমারের সাহায্যে
অ্যাডাপটারের সাহায্যে
ট্রান্সমিটারের সাহায্যে
পেট্রোল ইঞ্চিন (Petrol Engine)
পেট্রোল ইঞ্জিনে কার্বুরেটর থাকে। কারবুরেটরে পেট্রোলকে বাষ্পে রুপান্তরিত করা হয়্ এই পেট্রোল বাষ্পকে যথাযথ অনুপাতে বায়ুর সাথে মিশিয়ে বিষ্ফোরক গ্যাসে পরিণত করা হয়্ এই মিশ্রণ ইঞ্জিনের জালিানি হিসেবে কাজ করে। পেট্রোল ইঞ্জিন একটি চতুর্ঘাত ইঞ্জিন। এ ইঞ্চিনে পিষ্টনের দু’বার সামনে এবং দু’বার পিছনে এই চারবার গতির সময়ে মাত্র একবার জ্বালানি সরবরাহ করা হয় বলে এই ইঞ্চিনটিকে চতুর্ঘাত ইঞ্চিন বলে। ১৮৭৬ সালে ড. অটো সর্বপ্রথম সফলতার সাথে এই ইঞ্চিন চালু করেন বলে চত্রের পরপর চারটি ঘাতের ক্রিয়াকে অটোচক্র বলে। পেট্রোল ইঞ্চিনের দক্ষতা প্রায় ৩০% ।মোটরগাড়ি, লঞ্চ, এরোপ্লেনে এ ধরণের ইঞ্চিন ব্যবহার করা হয়্ সি.এন. জি চালিত গাড়িগুলোর অটো চক্রো চলে।
রেফ্রিজারেটর বা হিমায়ক (Refrigerator)
রেফ্রিজারেটরে শীতলীকরণ প্রকোষ্ঠকে ঘিরে থাকে রাষ্পীভবন কুন্ডলী। এই কুল্ডলীতে থাকে উদ্বায়ী পদার্থ ফ্রেয়ন ( বা অ্যামেনিয়া)। বাষ্পীভবন কুন্ডলীতে নিম্নচাপে ফ্রেয়ন বাষ্পীভূত হয়। বাষ্পীভবনের জন্য প্রয়োজনীয় সুপ্তাতাপ ফ্রেয়ন শীতলীকরণ প্রকোষ্ট থেকে সংগ্রহ করে, ফলে শীতলীকরণ ঘটে। রাষ্পীভূত টেপ্রযনকে ঘনীভবন কুন্ডলীর ( Condenser) মধ্যে এনে কমপ্রেসরে সাহায্যে ফ্রেয়নকে ঘনীভূত করে। এ সময় ফ্রেয়ন গ্যাস সুপ্ততাপ বর্জন করে পুনরায় তরলে পরিণত করা হয়। ঘনীভবন পরিচলন এবং বিকিরণ প্রক্রিয়ায় তাপ পরিবেশে প্রক্রিয়ায় সঞ্চালিত হয় এবং সেখানে থেকে পরিচলন এবং বিকিরণ প্রক্রিয়ায় তাপ পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে। শীতলীকরণ ফ্রেয়নকে পুনরায় বাষপীভন কুন্ডলীর মধ্য দিয়ে চালনা করে সমস্ত প্রক্রিয়া পুনরাবৃত্তি করা হয়। ১৮৫১ খ্রিষ্টাব্দের ব্রিটিশ সাংবাগিক James Harison প্রথম ব্যবহারিক হিমায়ক যন্ত্র উদ্ভাবক করেন।
একটি বন্ধ ঘরে একটি চালু ফ্রিজের দরজা খুলে রাখলে ঘরের তাপমাত্রা অপরিবার্তিত থাকবে কারণ ঘরটি বন্ধ বলে ফ্রেয়ন সুপ্ততাপ ঘর থেকে গ্রহণ করবে আবার ঘরেই সুপ্ততাপ বর্জন করবে।
শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা (Air Conditioning)
শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা হচ্ছে অভ্যান্তরীণ বাতাসে (indoor air) আর্দ্রতার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে আরামদায়ক পরিবেশ তৈরী। বিশদ অর্থে শীতলীকরণ, তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বাতাসের গতি নিয়ন্ত্রণ ও বিশুদ্ধতা নিশ্চিতকরণই হলো শীততাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা।
থার্মোফ্লাষ্ক (Thermo Flask)
থার্মোফ্লাষ্ক দুই দেয়াল বিশিষ্ট কাচের পাত্র। এর দেয়াল কাচের তৈরী এবং মুখ কর্ক দিয়ে বন্ধ করা থাকে। তাই তাপ রিবহন হয় খুব কম। দুই দেয়ালের মধ্যবর্তী স্থান বায়ুশুন্য বলে তাপ পরিবহণ বা পরিচলন পদ্ধতিতে ভেতর থেকে বাহিরে বা বাহির থেকে ভিতরে যেতে পারে না। দুই দেয়ালই রুপার প্রলেপ দিয়ে চকচক করা থাকে বলে বিকিরণ পদ্ধতিতেও ভিতরের তাপ বাহিরে বা বাহিরের তাপ ভিতরে যেত পারে না।
আলো (Light)
আলো এক প্রকার শক্তি (energy) বা বাহ্যিক কারণ (external cause) যা যা চোখে প্রবেশ করে। চোর দর্শনের অনুভূতি জন্মায়।
আলোর প্রকৃতি (Nature of Light)
আলো কণা না তরঙ্গ সে বিষয়ে বিজ্ঞানীদের বিতর্কের অবসান এখনও হয় নি। এখন মনে করা হয় অবস্থা বিশেষ আলোক কণা অথবা তরঙ্গরূপে আচরণ করে। তবে কখনই একসঙ্গে কণা বা তরঙ্গ নয়। দীপ্তিমান বস্তু থেকে আলো কিভাবে আমাদের চোখে আসে তা ব্যাখ্যার জন্য বিজ্ঞানীরা এ পর্যন্ত চারটি তত্ত্ব প্রদান করেছেন। যথা-
তত্ত্ব প্রবক্তা
কণাতত্ত্ব স্যার আইজ্যাক নিউটন
তরঙ্গ তত্ত্ব হাইগেন
তাড়িত চৌম্বক তত্ত্ব ম্যাক্সওয়েল
কোয়ান্টাম তত্ত্ব ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক
আলোর কোয়ান্টাম তত্ত্ব (Quantum theory of light)
আলোকশক্তি কোন উৎস থেকে অবিচ্ছিন্ন তরঙ্গের আকারে না বেরিয়ে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গুচ্ছ বা প্যাকেট আকারে বের হয়। প্রত্যেক রং এর আলোর জন্য এই শক্তি প্যাকেটের শক্তির একটাম সর্বনিম্ন মান আছে। এই সর্ব নিম্নমানের শক্তি সম্পন্ন কণিকাকে কোয়ান্টাম বা ফোটন বলে। ফোটন ভরহীন ও তড়িৎ নিরপেক্ষ। এটি কণা এবং তরঙ্গ উভয় ধর্ম প্রদর্শন করতে পারে।
ফোটনের শক্তি = প্লাঙ্ক ধ্রুবক ´ আলোর কম্পাঙ্ক
এখানে, প্লাঙ্ক ধ্রুবক = ৬.৬৫ ´ ১০-২৭ আর্গ-সেকেন্ড।
কোন কোন ধাতর উপর আলো পড়লে তাৎক্ষণিক ইলেকট্রন নির্গত হয় একে ফটো তড়িৎ ক্রিয়া বলে। ফটো ১৯০৫ সালে বিজ্ঞানী আইনস্টাইন কোয়ান্টাম তত্ত্বের সাহায্যে ফটো তড়িৎ ক্রিয়া ব্যাখ্যা করেন, এর জন্য ১৯২১ সালে তিনি নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন।
তাড়িত চৌম্বক বর্ণালী (Electromagnetic Spectrum)
কোনো পদার্থের পরমাণুর মধ্যে ইলেকট্রনগুলো নির্দিষ্ট দূরত্বে বিভিন্ন খোলকে অবস্থান করে। পরমাণূতে কোনো শক্তি সরবরাহ করা হলে ইলেকট্রন এক খোলক থেকে লাফিয়ে অন্য খোলকে চলে যায় যখন ইলেকট্রনগুলো নিজ খোলকে ফিরে আসে তখন ইলেকট্রনের মধ্যে সঞ্চিত শক্তি বিকিরণ মন এই বিকিরিত শক্তিই আলো। শক্তি বিকিরণ তরঙ্গ আকারে ঘটে যা তাড়িতচৌম্বক তরঙ্গ। গামা রশ্মি, এক্সরে, দৃশ্যমান আলো, অবলোহিত রশ্মি এবং বেতার তরঙ্গ সবই তাড়িত চৌম্বক তরঙ্গ। সব তাড়িতচৌম্বক তরঙ্গের বেগ শূন্য মাধ্যমে একই এবং তা সেকেন্ডে প্রায় ৩ লক্ষ কিলোমিটার। সব তাড়িতচৌম্বক তরঙ্গের বেগ সমান হলেও এদের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বা কম্পাঙ্ক বিভিন্ন। আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য অ্যাংস্ট্রম এককে পরিমাপ করা হয়।
দৃশ্যমান আলো (Visible light)
তড়িৎ চুম্বকীয় বর্ণালির সেই অংশ যা মানুষের চোখে দৃশ্যমান অর্থ্যাৎ 4 ´ 10-7 m হতে 7 ´ 10-7 m পর্যন্ত তরঙ্গ দৈর্ঘ্য সীমার তড়িৎ চুম্বকীয় বিকিরণকে দৃশ্যমান আলো বলে। আলোকের বর্ণ নির্ধারণ করে তার তরঙ্গ দৈর্ঘ্য। দৃশ্যমান আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের উর্ধ্বক্রম-
Violet (বেগুনি) < Indigo (নীল) < Blue (আসমানী) < Green (সবুজ) < Yellow (হলুদ) < Orange (কমলা) < Red (লাল)
যে বর্ণের আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য যত বেশি, তার প্রতিসরণ বিচ্যুতি ও বিক্ষেপণ খুব কম হয়। লাল আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বেশি বলে এর প্রতিসরণ বিচ্যুতি ও বিক্ষেপণ তত কম। দৃশ্যমান আলোর মধ্যে লাল আলো সবচেয়ে বেশি দুর হতে দেখা যায়। তাই বিপদ সংকেতে লাল আলো ব্যবহার করা হয়। লাল আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য অধিক বলে সূর্যোদয় বা সূর্যাস্তের সময় আমরা সূর্যকে লাল দেখি।
আলোর প্রতিফলন (Reflection of light)
আলো যখন বায়ু বা অন্য স্বচ্ছ মাধ্যমের ভিতর দিয়ে যাওয়ার সময় অন্য কোন মাধ্যমে বাধা পায় তখন দুই মাধ্যমের বিভেদতল থেকে কিছু পরিমাণ আলো প্রথম মাধ্যমে আসে। একে আলোর প্রতিফলন বলে।
দর্পণ (Mirror)
যে মসৃণ তলে নিয়মিত প্রতিফলন ঘটে তাকে দর্পণ বলে। সাধারণত কাচের একদিকে ধাতুর (সাধারণত রূপা মার্কারির) প্রলেপ দিয়ে দর্পণ তৈরি করা হয়। কাচের উপর ধাতুর প্রলেপ দেওয়াকে পারা লাগান বা সিলভারিং বলে।
আলোর প্রতিসরণ (Refraction of Light)
আলোকরশ্মি এক স্বচ্ছ মাধ্যম থেকে অন্য স্বচ্ছ মাধ্যমে যাওয়ার সময় মাধ্যমদ্বয়ের বিভেদ তলে তীর্যকভাবে আপতিত আলোকরশ্মির দিক পরিবর্তন করার ঘটনাকে আলোর প্রতিসরণ বলে। আলোর প্রতিসরণ জন্য পানিতে নৌকার বৈঠা বাঁকা দেখা যায়। বায়ুমণ্ডলীয় আলোর প্রতিসরণের জন্য সূর্যোদয়ের খানিকটা পূর্বে ও পরে সূর্যকে দেখা যায়, চাঁদ দিগন্তের কাছে অনেক বড় দেখায়। এবং রাতের আকাশে তারাগুলো ঝিকমিক করে বলে মনে হয়।
প্রতিসরণাঙ্ক: আলোকরশ্মি যখন এক স্বচ্ছ মাধ্যম থেকে অন্য স্বচ্ছ মাধ্যমে তীর্যকভাবে প্রবেশ করে তখন নির্দিষ্ট রঙের আলোর জন্য আপতন কোণের সাইন ও প্রতিসরণ কোণের সাইন-এর অনুপাত যে ধ্রুব হয় তাকে প্রথম মাধ্যমের সাপেক্ষে দ্বিতীয় মাধ্যমের প্রতিসরণাঙ্ক বলে।
ক্রান্তি কোণ: আলোকরশ্মি ঘন মাধ্যম থেকে হালকা মাধ্যমে প্রতিসরিত হওয়ার সময় আপতন কোণের যে মানের জন্য প্রতিসরণ কোণের মান ৯০° হয়, অর্থাৎ প্রতিসরিত রশ্মি বিভেদ তল ঘেষে চলে যায় তাকে হালকা মাধ্যমের সাপেক্ষে ঘন মাধ্যমর ক্রান্তি কোণ বলে।
পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন (Total Internal Reflection)
আলোকরশ্মি যখন ঘন মাধ্যম থেকে হালকা মাধ্যমে ক্রান্তি কোণের চেয়ে বড় মানের কোণে আপতিত হয় তখন প্রতিসরণের পরিবর্তে আলোকরশ্মি সম্পূর্ণরূপে ঘন মাধ্যমের অভ্যন্তরে প্রতিফলনের সূত্রানুযায়ী প্রতিফলিত হয়। এই ঘটনাকে আলোর পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন বলে। আলোর এই ধর্মকে কাজে লাগিয়ে ফাইবার অপটিক ক্যাবল তৈরি করা হয়েছে।
আলোর পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলনের জন্য –
• হীরক উজ্জ্বল দেখায়।
• পদ্ম পাতার উপর বৃষ্টির ফোটা পড়লে চকচক করে।
• গ্রীষ্মের প্রখর রৌদ্রে উত্তপ্ত পিচঢালা মসৃন রাজপথকে বৃষ্টির অব্যবহিত পরবর্তী সময়ের মত ভেজা ও চকচকে মনে হয়।
• মরুভূমির মরীচিকার (Mirage) সৃষ্টি হয়।
লেন্স (Lens)
দুই গোলীয় পৃষ্ঠ দ্বারা সীমাবদ্ধ কোন স্বচ্ছ প্রতিসারক মাধ্যমকে লেন্স বলে। লেন্স প্রধানত দুই প্রকার। যথা- উত্তল লেন্স এবং অবতল লেন্স। লেন্সের ক্ষমতার প্রচলিত একক ডাইঅপ্টার। উত্তল লেন্সের ক্ষমতা ধনাত্মক এবং অবতল লেন্সের ক্ষমতা ঋনাত্মক।
উত্তল লেন্সের ব্যবহার
- আতশী কাচ হিসাবে এবং আগুন জ্বালানোর কাজে ব্যবহৃত হয়।
- চশমা, ক্যামেরা, বিবর্ধক কাচ, অণুবীক্ষণ যন্ত্র ইত্যাদি আলোক যন্ত্রে ব্যবহৃত হয়।
অবতল লেন্সের ব্যবহার
- প্রধানত চশমায় ব্যবহার করা হয়।
- গ্যালিলিওর দূরবীক্ষণ যন্ত্র এবং সিনেমাস্কোপ প্রজেক্টারে অবতল লেন্স ব্যবহার করা হয়।
প্রিজম (Prism)
দুইটি হেলানো সমতল পৃষ্ঠ দ্বারা সীমাবদ্ধ প্রতিসারক মাধ্যমকে প্রিজম বলা হয়। প্রিজমে পতিত আলো সাধারণত প্রতিসরিত হয়।
রঙধনু বা রামধনু (Rainbow)
রঙধনু একটি আলোকীয় ঘটনা। এক পশলা বৃষ্টির পর আবার যখন সূর্য উঠে তখন কখনও কখনও সূর্যের বিপরীত দিকে আকাশে উজ্জ্বল রঙের অর্ধবৃত্ত দেখা যায়। একে বলা হয় রঙধনু। রংধনু সৃষ্টির সময় পানির কণাগুলো প্রিজমের কাজ করে। রংধনুতে বর্নালীর ৭টি রঙ থাকে। সূর্যের বিপরীতে গঠিত হয় বলে সকালে পশ্চিমাকাশে এবং বিকালে পূর্বাকাশে রংধনু দেখা যায়।
আলোর বিচ্ছুরণ (Dispersion of light)
সূর্যের সাদা আলো যদি কোনো কাচের প্রিজমের মধ্যে দিয়ে যায় তাহলে তা সাতটি রঙে বিশ্লিষ্ট হয়। প্রিজম থেকে নির্গত আলোকরশ্মি যদি কোনো পর্দার উপর ফেলা হয়, তাহলে পর্দায় ৭টি রঙের পট্টি দেখা যায়। আলোর এই রঙিন পট্টিকে বর্ণালী (Spectrum) বলে। কোনো মাধ্যমে প্রতিসরণের তলে যৌগিক আলো থেকে মূল বর্ণের আলো পাওয়ার পদ্ধতিকে আলোর বিচ্ছুরণ বলে। বর্ণালীতে বেগুনি (Violet), নীল (Indigo), আসমানী (Blue), সবুজ (Green), হলুদ (Yellow), কমলা (Orange), ও লাল (Red) এ সাতটি রঙ পরস্পর দেখা যায়। রঙগুলোর নাম এবং এদের ক্রম মনে রাখার জন্য এদের নামের আদ্যক্ষর নিয়ে ইংরেজিতে VIBGYOR ও বাংলায় বেনীআসহকলা শব্দ গঠন করা হয়। বর্ণালীর লাল আলোর বিচ্যুতি সবচেয়ে কম এবং বেগুনি আলোর বিচ্যুতি সবচেয়ে বেলি। হলুদ রঙের আলোর বিচ্যুতি লাল ও বেগুনি আলোর মাঝামাঝি বলে এর বিচ্যুতিকে গড় বিচ্যুতি এবং হলুদ রশ্মির মধ্যরশ্মি বলে। বর্ণালীতে হলুদ রঙের পাশের দুটি রঙ হলো সবুজ ও কমলা। বিজ্ঞানী নিউটন প্রমাণ করেন যে, সাদা আলোর প্রকৃতি যৌগিক এবং এই সাদা আলো সাতটি মূল রঙের আলোর সমষ্টি।
মৌলিক বর্ণ (Primary Colour)
সাতটি মূল বর্ণের সমন্বয়ে বর্ণালী গঠিত হয়। তবে এই সাতটি রঙের মধ্যে তিনটি রঙ আছে যাদেরকে পরিমাণ মতো মিশিয়ে অপর যে কোন রঙ তৈরি করা যেতে পারে। এদেরকে মৌলিক বর্ণ বলে। এই তিনটি রঙ হচ্ছে - লাল (Red), সবুজ (Green), ও নীল (Blue)।
মনে রাখার সহজ উপায়ঃ ‘আসল রঙ - আঃ নীল (আসমানী), সঃ সবুজ, লঃ লাল। মৌলিক বর্ণগুলো মিশিয়ে বিভিন্ন বর্ণ তৈরি করা যায়।
যথা- লাল + নীল = বেগুনি, লাল + হলুদ = কমলা, নীল + হলুদ = সবুজ
আলোর প্রতিফলন (Reflection of light)
আলো যখন বায়ু বা অন্য স্বচ্ছ মাধ্যমের ভিতর দিয়ে যাওয়ার সময় অন্য কোন মাধ্যমে বাধা পায় তখন দুই মাধ্যমের বিভেদতল থেকে কিছু পরিমাণ আলো প্রথম মাধ্যমে আসে। একে আলোর প্রতিফলন বলে।
সাদা আলো সাতটি বিভিন্ন বর্ণের সমষ্টি। যদি এই সাতটি বর্ণের মধ্যে একটি বর্ণ বাদ দেওয়া হয় তাহলে ঐ বর্ণ আর সাদা থাকে না, রঙিন বলে মনে হয়। এখন যে বর্ণ বাদ দেওয়া হয়েছে এবং ঐ বর্ণ বাদ দেওয়ার ফলে যে বর্ণের সৃষ্টি হলো তাদেরকে যদি একত্রিত করা হয় তাহলে আবার সাদা আলো পাওয়া যায়। অর্থাৎ, যে দুটি বর্ণের মিশ্রণে সাদা বর্ণ সৃষ্টি হয়, তাদেরকে পরস্পরের পরিপূরক বর্ণ বলে। যে কোনো বর্ণের কাচকে উত্তপ্ত করলে কাচ থেকে তার পরিপূরক বর্ণের আলো বের হয়।। যেমন: একটি লাল কাচকে উত্তপ্ত করলে সবুজ রঙ বের হয়। আর সবুজ কাচকে উত্তপ্ত করলে লাল রঙ বের হয়। একটি নীল কাচকে উত্তপ্ত করলে হলুদ রঙ বের হয়। আর হলুদ কাচকে উত্তপ্ত করলে নীল রঙ বের হয়।
আলোর শোষণ, প্রতিফলন ও বস্তুর বর্ণ
Absorption and reflection of light and colour of a body
কোনো বস্তু তার নিজস্ব রঙে দেখা যায়, কারণ নির্দিষ্ট রঙের বস্তুটি নিজের রঙ ছাড়া সকল রঙ শোষণ করে এবং নিজের রঙ প্রতিফলিত করে। তাই বস্তু তার নিজের রঙে দেখা যায়। সাতটি রঙের সমন্বয়ে সাদা রঙ হয়, সব রঙের অনুপস্থিতির জন্য কালো রঙ হয়। যে বস্তু আলোর সব রঙ প্রতিফলিত করে তা সাদা দেখায়। কোনো বস্তু যখন সমস্ত আলো শোষণ করে তখন তাকে কালো দেখায়। যেমন - আলোর সকল বর্ণ প্রতিফলিত করে বলে বরফ সাদা দেখায়। আবার, দিনের বেলা সূর্যালোকে গাছের পাতা সবুজ দেখায় কিন্তু লাল আলোতে গাছের পাতা কালো বলে মনে হয়। দিনে গাছের সবুজ পাতা সূর্যালোকের সবুজ বাদে সাতটি বর্ণের সবকটিই শোষণ করে ফলে সবুজ দেখায়। কিন্তু সবুজ পাতা লাল আলোকে শোষণ করে নেয় বলে কোনো আলোই প্রতিফলিত হয় না তাই লাল আলোতে সবুজ পাতা কালো দেখায়। একইভাবে, লাল আলোতে নীল রঙের ফুল কালো দেখা যায়; সবুজ আলোতে একটি হলুদ রঙের বস্তু কালো দেখায়; সোডিয়াম লাইটের হলুদ আলোতে রাতে লাল কাপড় কালো দেখায়। নীল কাচের মধ্যে দিয়ে সাদা ফুল নীল দেখায় কারণ একটি সাদা ফুল সূর্যের সাতটি আলোই প্রতিফলিত করে বলে তা সাদা দেখায়। সাদা ফুল থেকে প্রতিফলিত আলোক রশ্মি যখন নীল কাচের মধ্যে দিয়ে আসে তখন ঐ কাচ নীল বাদে অন্য সব বর্ণের আলো শোষণ করে নেয় তাই আমাদের চোখে শুধু নীল আলো পৌছে। ফলে ফুলটি নীল দেখায়। নীল কাচের মধ্যে দিয়ে হলুদ ফুল কালো দেখায় কারণ হলুদ ফুল শুধু হলুদ বর্ণের আলো প্রতিফলিত করে বলে তা হলুদ দেখায়। কিন্তু হলুদ বর্ণের আলোক নীল কাচের মধ্যে দিয়ে আসার সময় শোষিত হয় তাই হলুদ ফুলকে নীল কাচের মধ্যে দিয়ে দেখলে কালো দেখায়।
দৃষ্টি (Astigmatism): চোখের এই ত্রুটির কারণে একই দূরত্বে অবস্থিত আনুভূমিক ও উলম্ব রেখাকে সমান স্পষ্টভাবে দেখা যায় না। বিষমদৃষ্টি ত্রুটি চিকিৎসায় সিলিড্রিক্যাল লেন্স ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে ‘টরিক কন্ট্যাক্ট লেন্স’ এর ব্যবহারও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সাধারণ কন্ট্যাক্ট লেন্সসমূহ Polyvinyl chloride (পলিভিনাইল ক্লোরাইড) দিয়ে তৈরি। কিন্তু টরিক কনট্যাক্ট লেন্স সিলিকন হাইড্রোজেল দিয়ে তৈরি।
ক্যামেরা (Camera)
ক্যামেরা এবং মানুষের চোখের গঠন এবং কার্যপ্রণালীর অনেক মিল আছে। ফটোগ্রাফিক প্লেটে সিলভার হ্যালাইড (AgBr বা AgI) এর আবরণ থাকে।
দৃষ্টি সহায়ক যন্ত্র (Vision Aid Instruments)
যে সকল যন্ত্র কোন বস্তু দেখার ব্যাপারে আমাদের চোখকে সাহায্য করে তাদেরকে দৃষ্টি সহায়ক বলে। যেমন: অণুবীক্ষণ যন্ত্র বা মাইক্রোস্কোপ, দূরবীক্ষণ যন্ত্র বা টেলিস্কোপ, বাইনোকুলার ইত্যাদি
তড়িৎ (Electricity)
তড়িৎ বা বিদ্যুৎ এক প্রকার শক্তি।
তড়িৎ
স্থির তড়িৎ
চল তড়িৎ
তড়িৎ (Electricity)
তড়িৎ বা বিদ্যুৎ এক প্রকার শক্তি।
তড়িৎ
স্থির তড়িৎ
চল তড়িৎ
তড়িৎ প্রবাহ (Electric Current)
কোন পরিবাহকের যে কোন প্রস্থচ্ছেদের মধ্যদিয়ে একক সময়ে যে পরিমাণ আধান প্রবাহিত হয়, তাকে তড়িৎ প্রবাহ বলে। তড়িৎ প্রবাহের একক অ্যাম্পিয়ার (ampere)। যে যন্ত্রের সাহায্যে বর্তনীর তড়িৎ প্রবাহ সরাসরি অ্যাম্পিয়ার এককে পরিমাপ করা যায়, তাকে অ্যামিটার বলে। গ্যালভানোমিটার হলো সেই যন্ত্র যার সাহায্যে বর্তনীতে তড়িৎ প্রবাহের অস্তিত্ব ও পরিমাণ নির্ণয় করা যায়।
পরিবাহকের মধ্য দিয়ে ইলেকট্রনের প্রবাহের ফলে চল তড়িৎ সৃষ্টি হয়। আবার চল তড়িৎ দুই প্রকার। যথা: সমপ্রবাহ এবং পর্যাবৃত্ত প্রবাহ।
ক) সমপ্রবাহ (Direct Current or D.C)
তড়িৎ প্রবাহ যদি সর্বদা একই দিকে প্রবাহিত হয় বা সময়ের সাথে তড়িৎ প্রবাহের দিকের কোনো পরিবর্তন না হয় তাহলে সেই প্রবাহকে সমপ্রবাহ বলে। যেমন, তড়িৎকোষ (ব্যাটারি) থেকে আমরা সমপ্রবাহ পাই।
খ) পর্যায়বৃত্ত প্রবাহ (Alternative Current or A.C
যে তড়িৎ প্রবাহ নির্দিষ্ট সময় পরপর দিক পরিবর্তন করে অর্থাৎ যে তড়িৎ প্রবাহের দিক পর্যাবৃত্তভাবে পরিবর্তিত হয় তাকে পর্যাবৃত্ত প্রবাহ বলে। পর্যাবৃত্ত প্রবাহের দিক পরিবর্তন দেশভেদে বিভিন্ন হয়। আমাদের দেশে বাসাবাড়িতে যে পর্যাবৃত্ত প্রবাহ ব্যবহার করা হয় তা প্রতি সেকেন্ডে ৫০ (পঞ্চাশ) বার দিক পরিবর্তন করে। আবার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই দিক পরিবর্তন হয় প্রতি সেকেন্ডে ৬০ (ষাট) বার।
নিউরন
নেফ্রন
পেসমেকার
হেপাটোসাইট
রোধ (Resistance)
পরিবাহকের যে ধর্মের জন্য এর মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ বিঘ্নিত হয়, তাকে রোধ (Resistance) বলে। রোধের একক ওহম (Ohm)।
ও’মের সূত্র (Law’s of Ohm): নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় কোনো পরিবাহীর মধ্য দিয়ে যে বিদ্যুৎ প্রবাহ চলে, তা ঐ পরিবাহীর দুই প্রান্তের বিভব পার্থক্যের সমানুপাতিক। অর্থাৎ, বিভব পার্থক্য (V) = রোধ (R) ⤫ বিদ্যুৎ প্রবাহ (I) কোনো পরিবাহকের রোধ চারটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যথা: পরিবাহকের দৈর্ঘ্য, পরিবাহকের প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল, পরিবাহকের উপাদান এবং পরিবাহকের তাপমাত্রা। একই উপাদানের তৈরি সুষম প্রস্থচ্ছেদের লম্বা তারের রোধ ছোট তার অপেক্ষা বেশি হয়। একই উপাদান এবং একই দৈর্ঘ্যের মোটা তারের চেয়ে চিকন তারের রোধ বেশি হয়।
১. বৈদ্যুতিক পাখার ঘূর্ণনের গতি রেগুলেটরের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। রেগুলেটরে থাকে পরিবর্তনশীল রোধ। রেগুরেটরের রোধ বাড়িয়ে দিলে বিদ্যুৎ প্রবাহ কমে যায়, ফলে পাখা ধীরে ঘোরে। কিন্তু এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয় না কারণ রেগুলেটরে সাশ্রয়কৃত বিদ্যুৎ তাপশক্তি হিসেবে অপচয় হয়।
২. সাধারণ বৈদ্যুতিক বাতির ফিলামেন্ট রোধের কারণে তাপ সৃষ্টি হয়। ফলে তাপশক্তি হিসেবে বিদ্যুতের অপচয় হয়।
তড়িৎ পরিবাহিতা (Electric Conductance)
তড়িৎ পরিবাহিতা তড়িৎ মাধ্যমের একটি ধর্ম যা এর মধ্য যে তড়িৎ প্রবাহিত করতে সহায়তা করে। তড়িৎ পরিবাহিতার একক সিমেন্স। তড়িৎ পরিবাহী ধর্মের উপর ভিত্তি করে পদার্থসমূহকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- পরিবাহী, অর্ধপরিবাহী এবং অন্তরক।
(ক) পরিবাহক (Conductor): যে সব বস্তুর ভিতর তড়িৎ আধান সহজে চলাচল করতে পারে, তাদের বিদ্যুৎ পরিবাহী বলে। সকল ধাতু, মানবদেহ, আর্দ্র বায়ু, পানি, মাটি প্রভৃতি বিদ্যুৎ পরিবর্তন করে। গ্রাফাইট অধাতু হলেও তড়িৎ পরিবাহী। রূপা সর্বোত্তম তড়িৎ পরিবাহক। আর্দ্র বায়ু বা মেঘযুক্ত তড়িৎ পরিবাহী বলে এর মধ্যে দিয়ে বিমান চালনা করা ঝুঁকিপূর্ণ।
(খ) অন্তরক বা অপরিবাহক (Insulator): যেসব বস্তুর ভিতর দিয়ে তড়িৎ আধান চলাচল করতে বা পরিবাহিত হতে পারে না তাদের বলা হয় অন্তরক। যেমন; অধাতু,প্লাস্টিক, কাঠ, কাঁচ, রাবার, চীনামাটি, রেশম, শুষ্ক বাতাস প্রভৃতি অন্তরক পদার্থ।
(গ) অর্ধপরিবাহী (Semiconductor): যেসব পদার্থের তড়িৎ পরিবাহীতা পরিবাহী পদার্থের চেয়ে অনেক কম, কিন্তু অন্তরক পদার্থের চেয়ে অনেক বেশী, তাদের অর্ধপরিবাহী বলে। যেমন : সিলিকন, জার্মেনিয়াম, ক্যাডমিয়াম সালফাইড, গ্যালিয়াম আর্সেনাইড, ইনডিয়াম এবং অ্যানটিমোনাইড। তাপমাত্রা বাড়লে প্রায় সকল পরিবাহকেরই পরিবাহিতা হ্রাস পায়। তবে এর ব্যতিক্রমও দেখা যায়। সিলিকন, জার্মেনিয়াম ইত্যাদি অর্ধপরিবাহী ধাতুর তাপমাত্রা বাড়লে এদের পরিবাহীতা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পায়। কার্বন অর্ধপরিবাহী না হলেও তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে এর পরিবাহিতা বৃদ্ধি পায়।
তড়িৎ ক্ষমতা (Electrical Power)
কোনো পরিবাহক বা তড়িৎ যন্ত্রের মধ্যে দিয়ে এক সেকেন্ড ধরে তড়িৎ প্রবাহের ফলে যে কাজ সম্পন্ন হয় বা যে পরিমাণ তড়িৎ শক্তি অন্য শত্তিতে (আলো, তাপ, যান্ত্রিক শক্তি ইত্যাদি) রূপান্তরিত হয়, তাকে তড়িৎ ক্ষমতা বা বৈদ্যুতিক ক্ষমতা বলে। বৈদ্যুতিক ক্ষমতাকে P দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
P = Vl = l2R = V2/R
১ ওয়াট = ১ ভোল্ট × ১ অ্যাম্পিয়ার।
তড়িৎ ক্ষমতার একক ওয়াট (watt)। তড়িৎ ক্ষমতাকে কিলোওয়াট এবং মেগাওয়াট এককেও প্রকাশ করা হয়।
১ কিলোওয়াট = ১০৩ ওয়াট
১ মেগাওয়াট = ১০৬ ওয়াট
একই বিভব পার্থক্যের কোনো বৈদ্যুতিক বাতির হোল্ডারে ৪০ ওয়াট, ৬০ ওয়াট এবং ১০০ ওয়াটের তিনটি বাতি পরপর সংযোগ করলে দেখা যাবে উজ্জ্বলতার পার্থক্যের সৃষ্টি হয়েছে। এক্ষেত্রে ১০০ ওয়াটের বাতির ক্ষমতা বেশি হওয়ার কারণে বাতিটি সবচেয়ে বেশি আলো বিকিরিত করবে।
তড়িৎ শক্তি (Electric Energy)
কাজ করার সামর্থকে শক্তি বলে। বিদ্যুৎ শক্তির বাণিজ্যিক একক ‘কিলোওয়াট-ঘন্টা’। এক কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কোনো বৈদ্যুতিক যন্ত্র এক ঘন্টা কাজ করলে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ শক্তি খরচ হয়, তাকে এক কিলোওয়াট-ঘন্টা বলে। সারা বিশ্বের বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী সংস্থাগুলো এই একক ব্যবহার করে বিদ্যুৎ বিল প্রণয়ন করে। এ একককে বোর্ড অব ট্রেড ইউনিট বা সংক্ষেপে শুধু ইউনিটও বলে। অর্থাৎ এক কিলোওয়াট ঘন্টাকে এক ইউনিট ধরা হয়।
১ ইউনিট = ১ কিলোওয়াট – ঘন্টা = ৩৬০০ কিলোজুল
= ১০০০ ওয়াট-ঘন্টা = ৩.৬ × ১০৬ জুল।
বৈদ্যুতিক বিল কিলোওয়াট-ঘন্টা (Kilowatt-hour) বা B.O.T এককে হিসাব করা হয়।
বাতিতে লেখা 220V – 60W এর অর্থ
220V বিভব পার্থক্যকে বাতিটি সংযুক্ত করলে বাতিটি সবচেয়ে বেশি আলো বিকিরণ করবে এবং প্রতি সেকেন্ডে 60 Joule হারে বৈদ্যুতিক শক্তি আলো ও তাপ রূপান্তরিত হবে।
প্রতি সেকেন্ডে বিদ্যুৎ প্রবাহ ৫০ বার বন্ধ হয়
প্রতি সেকেন্ডে বিদ্যুৎ প্রবাহ ৫০ বার একক দের্ঘ্য অতিক্রম করে
প্রতি সেকেন্ডে বিদ্যুৎ প্রবাহ ৫০ বার দিক বদলায়
প্রতি সেকেন্ডে বিদ্যুৎ প্রবাহ ৫০ বার উঠানামা করে
ফিউজ (Fuse)
বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিতে একটি নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ প্রবাহিত হলে তা নষ্ট হয়ে যায়। এ ধরণের বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা এড়াবার জন্য ফিউজ তার ব্যবহার করা হয়। ফিউজ হচ্ছে নিম্ন গলাঙ্কবিশিষ্ট ছোট সরু তার যা টিন (২৫%) ও সীসা (৭৫%) এর মিশ্রণে তৈরি একটি সংকর ধাতু।
সার্কিট ব্রেকার (Circuit Breaker)
সার্কিট ব্রেকার এক ধরণের ফিউজ যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বর্তনী ভেঙ্গে দেয় আবার জোড়া লাগায়। বর্তনীতে কোনো কারণে হঠাৎ প্রবাহ বেড়ে সার্কিট ব্রেকার অফ হয়ে যায়। আবার বিদ্যুৎ প্রবাহ স্বাভাবিক হলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে অন হয়ে যায়। এভাবে সার্কিট ব্রেকার অতিমাত্রায় বিদ্যুৎ প্রবাহজনিত দুর্ঘটনা পথকে উদ্দেশ্যে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিকে রক্ষা করে।
তাড়িত চৌম্বক আবেশ (Electromagnetic Induction)
কোন তার বা তার কুন্ডলীর কাছে আমরা যদি কোন চুম্বককে নাড়াচাড়া করি বা আনা নেওয়া করি বা কোন চুম্বকের নিকট কোন তার কুন্ডলীকে আনা নেওয়া করি, তাহলে তার কুন্ডলীতে তড়িৎপ্রবাহ উৎপন্ন করে। একে তাড়িতচৌম্বক আবেশ বলে। ব্রিটিশ বিজ্ঞানী মাইকেল ফ্যারাডেকে তাড়িতচৌম্বক আবেশের আবিষ্কর্তা বলা হয়।
দূর-দূরান্তে তড়িৎ প্রেরণ
পাওয়ার স্টেশনে তড়িৎ উৎপাদন করা হয়। তড়িৎকে পাওয়ার স্টেশন থেকে একটি প্রেরণ ব্যবস্থার মাধ্যমে সারাদেশে পাঠানো হয়। এই ব্যবস্থায় পাওয়ার স্টেশনগুলো পরস্পরের সাথে সংযুক্ত থাকে। এই ব্যবস্থার নাম জাতীয় গ্রীড। তড়িৎ প্রেরণ করা হয় তারের মাধ্যমে। এ সব তার উচু টাওয়ারের মাধ্যমে টানানো থাকে। প্রেরক তারে যে রোধ থাকে তা খুব সামান্য কিন্তু এই রোধ তাৎপর্যপূর্ণ রোধের কারণে তড়িৎ প্রবাহের সময় তড়িৎ শক্তি তাপ শক্তি হিসাবে অপচয় হয়। দূরত্ব যত বেশি হয়, অপচয়ও তত বেশি হয়। এজন্য অধিক দূরত্বে তড়িৎ প্রেরণের সময় অপচয় রোধকল্পে আরোহী বা স্টেপআপ ট্রান্সফর্মারের সাহায্যে তড়িৎ প্রবাহ কমিয়ে ভোল্টেজ বাড়ানো হয়। এজন্য টাওয়ারের তারে উচ্চভোল্টেজের তড়িৎ থাকে, কিন্তু তড়িৎ প্রবাহের মান কম থাকে।
উচ্চ ভোল্টেজ এবং কম মানের তড়িৎ প্রবাহ গ্রাহকের ব্যবহার উপযোগী নয়। তাই এই ভোল্টেজ আবার অনেকগুলো অবরোহী বা নিম্নধাপী ট্রান্সফর্মারের মধ্য দিয়ে চালনা করা হয়। এতে ভোল্টেজ কমে যায় এবং তড়িৎ প্রবাহের মান বৃদ্ধি পায়। ফলে তড়িৎ গ্রাহকের উপযোগী হয়। বাংলাদেশে উচ্চ ভোল্টেজকে কমিয়ে ২২০ V নিয়ে আসা হয়।
ইলেক্ট্রনিক্স
Electronics
P টাইপ ও n টাইপ অধৃপরিবাহী
সিলিকনের বহির্খোলকে থাকে চারটি ইলেকট্রন যা যোজন ইলেক্ট্রন রূপে কাজ করে। সিলিকনের সবচেয়ে স্থিত গঠনের জন্য এর চারটি ইলেক্ট্রন লাভ করা অর্থাৎ ভাগাভাগি বা শেয়ার করার প্রবণতা থাকে। বিশুদ্ধ সিলিকন পরমাণুর বহিঃস্থ যোজন ইলেকট্রন সহযোগী অনুবন্ধের মাধ্যমে সংযুক্ত হয়, ফলে সিলিকনে কোনো মুক্ত ইলেকট্রন থাকে না। বিশুদ্ধ সিলিকন তাই উত্তম অন্তরক। সামান্য তাপমাত্রা বৃদ্ধি করলে সিলিকনের কিছু কিছু অনুবন্ধ ভেঙ্গে যায় এবং ইলেকট্রন চলাচলের জন্য মুক্ত হতে থাকে, ফলে তড়িৎ প্রবাহের সৃষ্টি হয়। সিলিকনকে আরেক ভাবে তড়িৎ পরিবাহী করা যায়। এই কাজটি করা হয় বিশুদ্ধ সিলিকনের সাথে খুব সামান্য ভেজাল নিয়ন্ত্রিতভাবে মিশিয়ে। একে বলা হয় ডোপায়ন (Doping)। ডোপিত মৌলের প্রকৃতি থেকে নির্ধারিত হয় সিলিকন p-টাইপ (ধনাত্মক টাইপ) হবে না n-টাইপ (ঋণাত্মক টাইপ) হবে। যে সব মৌলের (যেমন: অ্যালুমিনিয়াম, বোরন, গ্যালিয়াম বা ইনডিয়াম) তিনটি যোজন ইলেকট্রন থাকে, তাদের ভেজাল হিসেবে ব্যবহার করা হলে সিলিকন বা জার্মেনিয়াম p-টাইপ বস্তুতে p-টাইপ অর্ধপরিবাহীতে পরিণত হয়। যে সকল মৌলের (যেমন; ফসফরাস, আর্সেনিক বা অ্যান্টিমনি) বহির্খোলকে পাঁচটি ইলেকট্রন থাকে, তাদের ভেজাল হিসেবে ব্যবহার করা হলে সিলিকন বা জার্মেনিয়াম n-টাইপ বস্তুতে বা n-টাইপ অর্ধপরিবাহীতে পরিণত হয়।
অর্ধপরিবাহী ডায়োড (Semiconductor Diode)
একটি p টাইপ অর্ধপরিবাহী ও একটি n টাইপ অর্ধপরিবাহী পাশাপাশি জোড়া লাগিয়ে p-n জংশন ডায়োড তৈরি করা হয়। এটি মূলত রেকটিফায়ার হিসেবে কাজ করে। রেকটিফায়ার এসি (পরিবর্তী) প্রবাহকে ডিসি (একমুখী) প্রবাহে রূপান্তর করে।
ক) সন্মুখী ঝোঁক (Forward Bias) অবস্থায় থাকলে p-n জংশন দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ চলবে।
খ) বিমুখী ঝোঁক (Reverse Bias) অবস্থায় থাকলে p-n জংশন দিয়ে কোন তড়িৎ প্রবাহ চলে না।
অর্ধপরিবাহী ডায়োড (Semiconductor Diode)
একটি p টাইপ অর্ধপরিবাহী ও একটি n টাইপ অর্ধপরিবাহী পাশাপাশি জোড়া লাগিয়ে p-n জংশন ডায়োড তৈরি করা হয়। এটি মূলত রেকটিফায়ার হিসেবে কাজ করে। রেকটিফায়ার এসি (পরিবর্তী) প্রবাহকে ডিসি (একমুখী) প্রবাহে রূপান্তর করে।
ক) সন্মুখী ঝোঁক (Forward Bias) অবস্থায় থাকলে p-n জংশন দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ চলবে।
খ) বিমুখী ঝোঁক (Reverse Bias) অবস্থায় থাকলে p-n জংশন দিয়ে কোন তড়িৎ প্রবাহ চলে না।
ভোল্টেজ
কারেন্ট
ইম্পিডেন্স
ক্যাপসিটেপ
অ্যাডাপ্টার (Adapter)
একটি বৈদ্যুতিক সিস্টেম বা ডিভাইসের জন্য বেমানান কোন বৈশিষ্ট্যকে এডাপ্টারের সাহায্যে সিস্টেমটির জন্য গ্রহণযোগ্য বৈশিষ্ট্যকে এডাপ্টারের সাহায্যে সিস্টেমটির জন্য গ্রহণযোগ্য বৈশিষ্টে রূপান্তর করা হয়। যেমন: মোবাইলের চার্জার এক ধরণের অ্যাডাপ্টার কারণ এটি বাসা-বাড়ীর বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের ২২০ ভোল্ট এসি প্রবাহ মোবাইলের জন্য গ্রহণযোগ্য নিম্ন ভোল্টেজ ডিসি প্রবাহে রূপান্তর করে।
ভোল্টেজ
কারেন্ট
ইম্পিডেন্স
ক্যাপসিটেপ
ট্রানজিস্টর
১৯৪৮ সালে তার ট্রানজিস্টর (Trasistor) আবিষ্কৃত হবার পর কম্পিউটারে ভাল্বের বদ্লে ট্রানজিস্ট্ররের ব্যবহার শুরু হয়। ট্রানজিস্টর ব্যবহৃত কম্পিউটার ছোট হয়ে যেতে শুরু করে। কম্পিউটার গুলো আগের কম্পিউটার অপেক্ষা উন্নত ছিল। দুটি অর্ধপরিবাহী ডায়োড কি পাশাপাশি যুক্ত করে একটি অর্ধপরিবাহী ট্রায়োড তৈরি করা হয়। একে ট্রানজিস্টর বলা হয়। আমেরিকার বেল ল্যাবরেটরিতে ১৯৪৮ সালে জন বারডিন (Jhon Bardeen), উইলিয়াম শকলে (William Shocley) এবং ওয়াল্টার ব্রাটেইন (Walter Brattain) ট্রানজিস্টর উদ্ভাবন করেন। ট্রানজিস্টর আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে ইলেকট্রনিক্স বিপ্লব শুরু হয়। ট্রানজিস্টর তৈরিতে অর্ধপরিবাহী (Semiconductor) এর প্রয়োজন হয়। এতে অর্ধপরিবাহী হিসাবে সিলিকন বা জার্মেনিয়াম ব্যবহৃত হয়।
অ্যামপ্লিফায়ার (Amplifier)
যে যন্ত্র এর অন্তর্গামীতে (Input) প্রদত্ত সংকেতকে বর্হিগামীতে বিবর্ধিত (Amplify) করে, তাকে অ্যামপ্লিফায়ার বলে। কার্যক্ষমতার উপর নির্ভর করে তিন শ্রেণীর অ্যামপ্লিফায়ার আছে। যথা- এ ম্রেণী, বি শ্রেণী, সি শ্রেণী। এ ক্লাস বা শ্রেণী অ্যামপ্লিফায়ার কার্যক্ষমতা সবচেয়ে বেশি, প্রায় ৯০%।
সমন্বিত বর্তনী (Integrated Circuit or I.C)
আধুনিক কম্টিউটারের দ্রুত অগ্রগতির মূলে রয়েছে ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট। ১৯৫৮ সালে জ্যাক কেলবি (Jack Kilby) নামক একজন বিজ্ঞানী Transistor, Registor এবং Capacitor সমন্বিত করে একটি সার্কিট তৈরি করেন যা IC নামে পরিচিতি লাভ করে। আইসি ব্যবহারের ফলে কম্পিউটারের আকার ছোট হয় এবং এর ক্ষমতা অনেক বেড়ে যায়- সঙ্গে সঙ্গে কমে আসে কম্পিউটারের মূল্য এবং হিসাব-নিকাশের সময়।
দৈনন্দিন জীবনে পদার্থবিজ্ঞান
Physics in Daily Life
ছাপাখানা (Printing Press)
একটি ছাপাখানা বা প্রিন্টিং প্রেস বলতে কোন লেখা ছবিকে যন্ত্রের মাধ্যমে কাগজে উপস্থাপন করাকে বুঝানো হয়। জার্মানির জোহানেস গুটেনবার্গ ১৪৪০ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম আধুনিক মানের ধাতব অক্ষরের ছাপাখানা আবিষ্কার করেন। আধুনিক মুদ্রণ ব্যবস্থায় ধাতু নির্মিত অক্ষর আর ব্যবহৃত হয় না। এর প্রধান কারণ হলো ফটোলিথোগ্রাফি। ফটোলিথোগ্রাফি হলো সমতল মুদ্রণ ফলকে তৈরি আলোকচিত্র।
গ্রামোফোন (Gramophone record)
গ্রামোফোন বা কলের গান একটি রেকর্ডকৃত গান শোনার যন্ত্র। এটি প্রকৃতপক্ষে ১৮৭৭ সালে টমাস আলভা এডিসন কর্তৃক আবিষ্কৃত ফনোগ্রাফ (Phonograph)- যা একটি শব্দ পুনরুৎপাদন বা কার্যত পূনঃশ্রবণ যন্ত্র। ফনোগ্রাফ দিয়ে চাকতিতে শব্দ ধারণ করা হতো। বিদ্যুৎ ছাড়াই এই চাকতি বা রেকর্ড কলের গানে বাজানো হতো।
বৈদ্যুতিক বাতি (Electric Bulb)
কোনো পরিবাহী তারের ভিতর দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করলে তারটি গরম হয়। তার যত সরু হয়, তত বেশি গরম হয়অ আর যত বেশি গরম হয়, তত বেশি লাল হয়ে শেষে সাদা ও উজ্জ্বল হয়ে যায়। ফলে তারটি থেকে আলো বের হয়। বৈদ্যুতিক বাল্বে এই ঘটনাই ঘটে। বৈদ্যুতিক বাল্বের ভিতরে খুব সরু তারের একটি কুন্ডলী থাকে। এ কুন্ডলীকে ফিলামেন্ট বলে। ফিলামেন্টটি টাংস্টেনের তার দিয়ে তৈরি। এর গলনাঙ্ক অত্যন্ত বেশি (প্রায় ৩৪১০০ সে.) ফলে অধিক তাপে এটি জারিত হয় না। বৈদ্যুতিক বাল্বটি সম্পূর্ণরূপে বায়ুশূন্য থাকে তবে সামান্য পরিমাণে নাইট্রোজেন বা নিষ্ক্রিয় গ্যাস (আর্গন) থাকে। নাইট্রোজেন গ্যাস সাধারণ বৈদ্যুতিক বাল্বের ভিতরে এবং নিয়ন, আর্গন প্রভৃতি নিষ্ক্রিয় গ্যাস টিউব লাইটে ব্যবহৃত হয়। মার্কিন বিজ্ঞানী টমাস এডিসন ১৮৭৯ সালে সর্বপ্রথম বৈদ্যুতিক বাতি আবিষ্কার করেন।
বৈদ্যুতিক ইস্ত্রি (Electric Iron)
বৈদ্যুতিক ইস্ত্রিতে একটি অভ্রের প্লেটের গায়ে সংকর ধাতু নাইক্রোমের (নিকেল-৬০% + আয়রন-২৫% + ক্রোমিয়াম-১৫%) সরুতার জড়ানো থাকে। এই প্লেটের উপরে ও নিচে দুটি অভ্রের পাত দিয়ে ঢেকে লোহার পাত দিয়ে চেপে রাখা হয়। অভ্র বিদ্যুৎ অপরিবাহী কিন্তু তাপ পরিবাহী। তাই তারের ভিতর দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করলে তা লোহাকে স্পর্শ করে না কিন্তু তার উত্তপ্ত হলে তা লোহাকে উত্তপ্ত করে। ইস্ত্রির বাহিরের আবরণটি স্টেইনলেস স্টীলের তৈরি, ত্রিভুজাকৃতি এবং ভারী। কুন্ডলীর ভিতর দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করলে বাহিরের আবরণটি উত্তপ্ত হয়।
বৈদ্যুতিক হিটার (Electric Heater)
এতে চীনামাটির তৈরি একটি গোল চাকতি থাকে। চাকতির মধ্যে প্যাঁচানো খাঁজ কাটা থাকে। একটি নাইক্রোমের সরু লম্বা তারকে কুন্ডলী করে এ খাঁজে বসানো থাকে। কুন্ডলীর মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করলে তা উত্তপ্ত হয়ে লাল হয়ে যায় এবং প্রচুর তাপ বিকিরণ করে। এ তাপে রান্না বান্না করা হয়।
ফটোকপি মেশিন (Photocopier)
অধিকাংশ ফটোকপি মেশিন পোলারয়েড পদ্ধতিতে কাজ করে থাকে। ফটোকপি মেশিনের ভেতরে একটি ড্রাম ও একটি টোনার থাকে। প্রথমে ড্রামটিকে আহিত বা চার্জিত করা হয়। চার্জিত হওয়ার পর এটি এক ধরণের আকর্ষণের মাধ্যমে টোনারের খণাকে আকর্ষণ করে। ফলে ফটোকপি মেশিন কোন কালো লেকার কাগজকে অবিকল কপি করে ফেলতে পারে। বর্তমানে ফটোস্ট্যাস্ট মেশিনে সেলেনিয়াম মৌলটি ব্যবহার করা হয়।
টেলিগ্রাফ (Telegraph)
টেলিগ্রাফি হচ্ছে দূর দূরান্তে লিখিত বার্তা বা পত্র প্রেরণের এমন একটি পদ্ধতি যা মূল লিখিত পত্রটিকে প্রেরণ না করে সাধারণত তারের মাধ্যমে প্রেরিত মোর্স কোডে লিখিত টেলিগ্রাফি বার্তাকে টেলিগ্রাম বলা হতো। মোর্স কোড কোন ভাষার বর্ণকে কোডে রূপান্তরের এক ধরণের পদ্ধতি। স্যামুয়েল মোর্স ১৮৪০ সালে এ কোড তৈরি করেন। মোর্স কোড কোন উপাদানের ‘সংক্ষিপ্ত এবং দীর্ঘ’ এ দুটি আবশ্যকীয় ্েুপাদান নিয়ে গঠিত। এতে ডট (.) ‘টরে’ এবং ড্যাশ (-) কে ‘টক্কা’ বলে।
টেলিফোন, টেলেক্স ও ফ্যাক্স (Telephone-Telex-Fax)
টেলিফোন বা দুরালাপনি একটি যোগাযোগের মাধ্যম। ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে স্কটিশ বিজ্ঞানী আলেকজান্ডার গ্রাহম বেল টেলিফোন আবিষ্কার করেন। টেলিফোনে যেমন নম্বর আছে, টেলেক্স এবং ফ্যাক্সে তেমন নম্বর আছে। টেলেক্স এক ধরণের টেলিপ্রিন্টার। এতে একটি টাইপরাইটার থাকে। যে তথ্য, সংবাদ বা চিঠি প্রেরণ করতে হবে তা এ টাইপ রাইটারে টাইপ করতে হয়। প্রেরিত শব্দ বা কথাবর্তা টেলিপ্রিন্টারের সাহায্যে টাইপ হয়ে প্রাপকের নিকট পৌঁছে যায়। ফ্যাক্স মেশিন একটি টেলিফোনের সাথে যুক্ত থাকে। যে তথ্য প্রেরণ করতে হবে তা একটি কাগজে টাইপ করে বা লিখে রাখতে হয়। যে নাম্বারে ফ্যাক্স প্রেরণ করতে হবে সেই নম্বর ডায়াল করে কাগজটি মেশিনে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। অপর প্রান্তে তার হুবহু নকল বেরিয়ে আসে।
রেডিও (Radio)
বেতার হল তার ব্যতীত যোগাযোগের একটি শক্তিশালী মাধ্যম। এতে তড়িৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ ব্যবহার করে তথ্য প্রেরণ বা গ্রহণ করা হয়। ১৮৯৬ সালে ইতালীয় প্রকৌশলী গুলিয়েলমো মার্কোনি বেতার যন্ত্রের সম্প্রচার পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। রেডিও, রেডিও টেলিস্কোপ ইত্যাদি তারবিহীন যে কোনো যোগাযোগের মূলনীতিই হলো বেতার। মার্কোনির আগেই স্যার জগদীশচন্দ্র বসু রেডিও আবিষ্কার করেছিলেন বলে বাঙালি মহলে একটি ধারণা প্রচলিত আছে। মার্কোনি আধুনিক ছোট বা শর্ট তরঙ্গ মাপের বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করে দূরে বেতার সংকেত পাঠাতে সফল হয়েছিলেন যার ফলশ্রুতি হলো রেডিও। কিন্তু জগদীশচন্দ্র কাজ করেছিলেন অতি ক্ষুদ্র তথা মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গ নিয়ে যার প্রয়োগ ঘটে আধুনিক টেলিভিশন, রাডার এবং মোবাইল যোগাযোগের ক্ষেত্রে।
টেলিভিশন (Television)
টেলিভিশন হলো এমন একটি যন্ত্র যার সাহায্যে আমরা দূরবর্তী কোনো স্থান থেকে শব্দ এবং ছবি দেখতে পাই। স্কটিশ বিজ্ঞানী জন লজি বেয়ার্ড (John Logie Baird) ১৯২৬ সালে টেলিভিশন আবিষ্কার করেন। টেলিভিশনে ছবি প্রেরণের সময় ছবিকে যে পদ্ধতিতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত করা হয়, তাকে স্ক্যানিং বলা হয়। বাংলাদেশে টিভি সম্প্রচারে বা বেতার কেন্দ্রগুলোর ক্ষেত্রে অডিও সিগন্যালের ফ্রিকুয়েন্সি মডুলেশন করে পাঠানো হয়।
রাডার (Radar)
RADAR (Radio Detection And Ranging) এমন একটি যন্ত্র যার সাহায্যে দূরবর্তী কোনো বস্তুর উপস্থিতি, দূরত্ব ও দিক নির্ণয় করা যায়। রাডার হল এমন একটি কৌশল বা ব্যবস্থা যার সাহায্যে রেডিও প্রতিধ্বনির মাধ্যমে কোন বস্তুর উপস্থিতি জানা যায়। যুদ্ধে শত্রু বিমানের উপস্থিতি ও গতিবিধি, বিমানের পথ নির্দেশ, ঝড়ের পূর্বাভাস ইত্যাদি কাজে এটি ব্যবহৃত হয়। ১৯২২ সালে এ এইট টেলর এবং লিও সি ইয়ং রাডার উদ্ভাবন করেন।
উড়োজাহাজ ও হেলিকপ্টার (Aeroplane & Helecopter)
রেনেসাঁ যুগে উন্নত উড্ডয়ন যন্ত্রের চিত্র অঙ্কন করেন শিল্পী লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি। তিনি সর্বপ্রথম আকাশে উড়ার একটি তাত্ত্বিক ধারণাও দেন। তাঁর ডিজাইন করা উড্ডয়ন যন্ত্রের নাম দিয়েছিলেন ‘ওরিনিথপ্টার’। ১৪৯৬ সালে তিনি এর পরীক্ষামূলক উড্ডয়নের চেষ্টা করলেও তা সফল হয় নি। প্রথম উড়োজাহাজ বা এরোপ্লেন বানিয়েছিলেন অরভিল রাইট এবং উইলবার রাইট ভ্রাতৃদ্বয়। যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলিনার কিল ডেভিল হিলস ১৯০৩ সালে ১৮ ডিসেম্বর তাঁরা Flyer-1 এর সফল উড্ডয়ন করান। কোন স্থানে খাড়া ভাবে উড়তে (take off) ও নামতে (landing) হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হয়। হেলিকপ্টারের জন্ম মানুষের ওড়াউড়ির প্রথম অর্ধশতাব্দীর মধ্যে হলেও ১৯৪২ সালে ইগর সিকোরস্কির তৈরি করা নকশার হেলিকপ্টারই প্রথম বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত হয়। কোন বিমান বিধ্বস্ত হলে দুর্ঘটনাটির কারণ উদঘাটনের জন্য বিমানের ব্ল্যাক বক্স খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিমান পরিবহন ব্যবস্থায় বিমানের উড্য়ন কালের যাবতীয় তথ্য রেকর্ডের ডিভাইস হলো flight data recorder এবং উড্ডয়নকালে ককপিটের সবরকম কথাবার্তা ও শব্দ রেকর্ডের ডিভাইস হচ্ছে cockpit voice recorder। এই ডিভাইসগুলোর আরেক নাম ব্ল্যাক বক্স। এই ব্ল্যাক বক্সগুলো সাধারণত লাল বা কমলা রংয়ের হয় যাতে বিমানের ধ্বংসাবশেষ থেকে বক্সগুলো সহজে সনাক্ত করা যায়। বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে black box একটি টেকনিক্যাল টার্ম, যার থেকে এই নামকরণ। ব্ল্যাক বক্সগুলো এমনভাবে প্রস্তুত করা হয় যে উচ্চমাত্রার তাপ ও চাপ এর কোন ক্ষতি করতে পারে না।
রকেট (Rocket)
রকেট সর্বপ্রথম আবিষ্কৃত হয় চীরে ১১০০ খ্রিষ্টাব্দে। এটি ছিল কঠিন জ্বালানি চালিত রকেট-যা মূলত অস্ত্র হিসেবে এবং আতশবাজিতে ব্যবহৃত হতো। ১৯২৬ সালের ১৬ মার্চ মার্কিন অধ্যাপক রবার্ট হাচিংস গডার্ড প্রথম তরল জ্বালানি চালিত রকেট উৎক্ষেপণ করেন।
রেলগাড়ি
১৮১৪ সালে ইংরেজ প্রকৌশলী জর্জ স্টিফেনসন বাষ্পীয় রেলইঞ্জিন (Steam Locomotive) উদ্ভাবন করেন। ১৮২৫ সালে যুক্তরাজ্যের স্টকটন-ডালিংটন রুটে বিশ্বের প্রথম পাবলিক রেল সার্ভিস চালু হয়-যার রূপকার ছিলেন জর্জ স্টিফেনসন।
পলিগ্রাফ (Polygraph)
মিথ্যা ধরার যন্ত্রকে পলিগ্রাফ বলে। ১৯২১ সালে জন এ লারসন পলিগ্রাফ আবিষ্কার করেন। মিথ্যা ধরার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হলো মিথ্যাবাদীর শরীর। একজন মানুষ যখন মিথ্যা কথা বলে তখন সাধারণত তার শ্বাস-প্রশ্বাস হার, হৃদস্পন্দন, রক্তচাপ, ঘাম প্রভৃতির কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। পলিগ্রাফ এই পরিবর্তনগুলোকেই পর্যালোচনা করে।
বৈদ্যুতিক বাতি (Electric Bulb)
কোনো পরিবাহী তারের ভিতর দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করলে তারটি গরম হয়। তার যত সরু হয়, তত বেশি গরম হয়অ আর যত বেশি গরম হয়, তত বেশি লাল হয়ে শেষে সাদা ও উজ্জ্বল হয়ে যায়। ফলে তারটি থেকে আলো বের হয়। বৈদ্যুতিক বাল্বে এই ঘটনাই ঘটে। বৈদ্যুতিক বাল্বের ভিতরে খুব সরু তারের একটি কুন্ডলী থাকে। এ কুন্ডলীকে ফিলামেন্ট বলে। ফিলামেন্টটি টাংস্টেনের তার দিয়ে তৈরি। এর গলনাঙ্ক অত্যন্ত বেশি (প্রায় ৩৪১০০ সে.) ফলে অধিক তাপে এটি জারিত হয় না। বৈদ্যুতিক বাল্বটি সম্পূর্ণরূপে বায়ুশূন্য থাকে তবে সামান্য পরিমাণে নাইট্রোজেন বা নিষ্ক্রিয় গ্যাস (আর্গন) থাকে। নাইট্রোজেন গ্যাস সাধারণ বৈদ্যুতিক বাল্বের ভিতরে এবং নিয়ন, আর্গন প্রভৃতি নিষ্ক্রিয় গ্যাস টিউব লাইটে ব্যবহৃত হয়। মার্কিন বিজ্ঞানী টমাস এডিসন ১৮৭৯ সালে সর্বপ্রথম বৈদ্যুতিক বাতি আবিষ্কার করেন।
বৈদ্যুতিক ইস্ত্রি (Electric Iron)
বৈদ্যুতিক ইস্ত্রিতে একটি অভ্রের প্লেটের গায়ে সংকর ধাতু নাইক্রোমের (নিকেল-৬০% + আয়রন-২৫% + ক্রোমিয়াম-১৫%) সরুতার জড়ানো থাকে। এই প্লেটের উপরে ও নিচে দুটি অভ্রের পাত দিয়ে ঢেকে লোহার পাত দিয়ে চেপে রাখা হয়। অভ্র বিদ্যুৎ অপরিবাহী কিন্তু তাপ পরিবাহী। তাই তারের ভিতর দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করলে তা লোহাকে স্পর্শ করে না কিন্তু তার উত্তপ্ত হলে তা লোহাকে উত্তপ্ত করে। ইস্ত্রির বাহিরের আবরণটি স্টেইনলেস স্টীলের তৈরি, ত্রিভুজাকৃতি এবং ভারী। কুন্ডলীর ভিতর দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করলে বাহিরের আবরণটি উত্তপ্ত হয়।
ফটোকপি মেশিন (Photocopier)
অধিকাংশ ফটোকপি মেশিন পোলারয়েড পদ্ধতিতে কাজ করে থাকে। ফটোকপি মেশিনের ভেতরে একটি ড্রাম ও একটি টোনার থাকে। প্রথমে ড্রামটিকে আহিত বা চার্জিত করা হয়। চার্জিত হওয়ার পর এটি এক ধরণের আকর্ষণের মাধ্যমে টোনারের খণাকে আকর্ষণ করে। ফলে ফটোকপি মেশিন কোন কালো লেকার কাগজকে অবিকল কপি করে ফেলতে পারে। বর্তমানে ফটোস্ট্যাস্ট মেশিনে সেলেনিয়াম মৌলটি ব্যবহার করা হয়।
অফসেট মুদ্রণ পদ্ধতিতে
পোলারয়েড ফটোগ্রাফি পদ্ধতিতে
ডিজিট্যাল ইমেজিং পদ্ধতিতে
স্থির বৈদ্যুতিক ইমেজিং পদ্ধতিতে
টেলিগ্রাফ (Telegraph)
টেলিগ্রাফি হচ্ছে দূর দূরান্তে লিখিত বার্তা বা পত্র প্রেরণের এমন একটি পদ্ধতি যা মূল লিখিত পত্রটিকে প্রেরণ না করে সাধারণত তারের মাধ্যমে প্রেরিত মোর্স কোডে লিখিত টেলিগ্রাফি বার্তাকে টেলিগ্রাম বলা হতো। মোর্স কোড কোন ভাষার বর্ণকে কোডে রূপান্তরের এক ধরণের পদ্ধতি। স্যামুয়েল মোর্স ১৮৪০ সালে এ কোড তৈরি করেন। মোর্স কোড কোন উপাদানের ‘সংক্ষিপ্ত এবং দীর্ঘ’ এ দুটি আবশ্যকীয় ্েুপাদান নিয়ে গঠিত। এতে ডট (.) ‘টরে’ এবং ড্যাশ (-) কে ‘টক্কা’ বলে।
টেলিফোন, টেলেক্স ও ফ্যাক্স (Telephone-Telex-Fax)
টেলিফোন বা দুরালাপনি একটি যোগাযোগের মাধ্যম। ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে স্কটিশ বিজ্ঞানী আলেকজান্ডার গ্রাহম বেল টেলিফোন আবিষ্কার করেন। টেলিফোনে যেমন নম্বর আছে, টেলেক্স এবং ফ্যাক্সে তেমন নম্বর আছে। টেলেক্স এক ধরণের টেলিপ্রিন্টার। এতে একটি টাইপরাইটার থাকে। যে তথ্য, সংবাদ বা চিঠি প্রেরণ করতে হবে তা এ টাইপ রাইটারে টাইপ করতে হয়। প্রেরিত শব্দ বা কথাবর্তা টেলিপ্রিন্টারের সাহায্যে টাইপ হয়ে প্রাপকের নিকট পৌঁছে যায়। ফ্যাক্স মেশিন একটি টেলিফোনের সাথে যুক্ত থাকে। যে তথ্য প্রেরণ করতে হবে তা একটি কাগজে টাইপ করে বা লিখে রাখতে হয়। যে নাম্বারে ফ্যাক্স প্রেরণ করতে হবে সেই নম্বর ডায়াল করে কাগজটি মেশিনে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। অপর প্রান্তে তার হুবহু নকল বেরিয়ে আসে।
টেলিফোন, টেলেক্স ও ফ্যাক্স (Telephone-Telex-Fax)
টেলিফোন বা দুরালাপনি একটি যোগাযোগের মাধ্যম। ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে স্কটিশ বিজ্ঞানী আলেকজান্ডার গ্রাহম বেল টেলিফোন আবিষ্কার করেন। টেলিফোনে যেমন নম্বর আছে, টেলেক্স এবং ফ্যাক্সে তেমন নম্বর আছে। টেলেক্স এক ধরণের টেলিপ্রিন্টার। এতে একটি টাইপরাইটার থাকে। যে তথ্য, সংবাদ বা চিঠি প্রেরণ করতে হবে তা এ টাইপ রাইটারে টাইপ করতে হয়। প্রেরিত শব্দ বা কথাবর্তা টেলিপ্রিন্টারের সাহায্যে টাইপ হয়ে প্রাপকের নিকট পৌঁছে যায়। ফ্যাক্স মেশিন একটি টেলিফোনের সাথে যুক্ত থাকে। যে তথ্য প্রেরণ করতে হবে তা একটি কাগজে টাইপ করে বা লিখে রাখতে হয়। যে নাম্বারে ফ্যাক্স প্রেরণ করতে হবে সেই নম্বর ডায়াল করে কাগজটি মেশিনে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। অপর প্রান্তে তার হুবহু নকল বেরিয়ে আসে।
রেডিও (Radio)
বেতার হল তার ব্যতীত যোগাযোগের একটি শক্তিশালী মাধ্যম। এতে তড়িৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ ব্যবহার করে তথ্য প্রেরণ বা গ্রহণ করা হয়। ১৮৯৬ সালে ইতালীয় প্রকৌশলী গুলিয়েলমো মার্কোনি বেতার যন্ত্রের সম্প্রচার পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। রেডিও, রেডিও টেলিস্কোপ ইত্যাদি তারবিহীন যে কোনো যোগাযোগের মূলনীতিই হলো বেতার। মার্কোনির আগেই স্যার জগদীশচন্দ্র বসু রেডিও আবিষ্কার করেছিলেন বলে বাঙালি মহলে একটি ধারণা প্রচলিত আছে। মার্কোনি আধুনিক ছোট বা শর্ট তরঙ্গ মাপের বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করে দূরে বেতার সংকেত পাঠাতে সফল হয়েছিলেন যার ফলশ্রুতি হলো রেডিও। কিন্তু জগদীশচন্দ্র কাজ করেছিলেন অতি ক্ষুদ্র তথা মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গ নিয়ে যার প্রয়োগ ঘটে আধুনিক টেলিভিশন, রাডার এবং মোবাইল যোগাযোগের ক্ষেত্রে।
টেলিভিশন (Television)
টেলিভিশন হলো এমন একটি যন্ত্র যার সাহায্যে আমরা দূরবর্তী কোনো স্থান থেকে শব্দ এবং ছবি দেখতে পাই। স্কটিশ বিজ্ঞানী জন লজি বেয়ার্ড (John Logie Baird) ১৯২৬ সালে টেলিভিশন আবিষ্কার করেন। টেলিভিশনে ছবি প্রেরণের সময় ছবিকে যে পদ্ধতিতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত করা হয়, তাকে স্ক্যানিং বলা হয়। বাংলাদেশে টিভি সম্প্রচারে বা বেতার কেন্দ্রগুলোর ক্ষেত্রে অডিও সিগন্যালের ফ্রিকুয়েন্সি মডুলেশন করে পাঠানো হয়।
রাডার (Radar)
RADAR (Radio Detection And Ranging) এমন একটি যন্ত্র যার সাহায্যে দূরবর্তী কোনো বস্তুর উপস্থিতি, দূরত্ব ও দিক নির্ণয় করা যায়। রাডার হল এমন একটি কৌশল বা ব্যবস্থা যার সাহায্যে রেডিও প্রতিধ্বনির মাধ্যমে কোন বস্তুর উপস্থিতি জানা যায়। যুদ্ধে শত্রু বিমানের উপস্থিতি ও গতিবিধি, বিমানের পথ নির্দেশ, ঝড়ের পূর্বাভাস ইত্যাদি কাজে এটি ব্যবহৃত হয়। ১৯২২ সালে এ এইট টেলর এবং লিও সি ইয়ং রাডার উদ্ভাবন করেন।
উড়োজাহাজ ও হেলিকপ্টার (Aeroplane & Helecopter)
রেনেসাঁ যুগে উন্নত উড্ডয়ন যন্ত্রের চিত্র অঙ্কন করেন শিল্পী লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি। তিনি সর্বপ্রথম আকাশে উড়ার একটি তাত্ত্বিক ধারণাও দেন। তাঁর ডিজাইন করা উড্ডয়ন যন্ত্রের নাম দিয়েছিলেন ‘ওরিনিথপ্টার’। ১৪৯৬ সালে তিনি এর পরীক্ষামূলক উড্ডয়নের চেষ্টা করলেও তা সফল হয় নি। প্রথম উড়োজাহাজ বা এরোপ্লেন বানিয়েছিলেন অরভিল রাইট এবং উইলবার রাইট ভ্রাতৃদ্বয়। যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলিনার কিল ডেভিল হিলস ১৯০৩ সালে ১৮ ডিসেম্বর তাঁরা Flyer-1 এর সফল উড্ডয়ন করান। কোন স্থানে খাড়া ভাবে উড়তে (take off) ও নামতে (landing) হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হয়। হেলিকপ্টারের জন্ম মানুষের ওড়াউড়ির প্রথম অর্ধশতাব্দীর মধ্যে হলেও ১৯৪২ সালে ইগর সিকোরস্কির তৈরি করা নকশার হেলিকপ্টারই প্রথম বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত হয়। কোন বিমান বিধ্বস্ত হলে দুর্ঘটনাটির কারণ উদঘাটনের জন্য বিমানের ব্ল্যাক বক্স খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিমান পরিবহন ব্যবস্থায় বিমানের উড্য়ন কালের যাবতীয় তথ্য রেকর্ডের ডিভাইস হলো flight data recorder এবং উড্ডয়নকালে ককপিটের সবরকম কথাবার্তা ও শব্দ রেকর্ডের ডিভাইস হচ্ছে cockpit voice recorder। এই ডিভাইসগুলোর আরেক নাম ব্ল্যাক বক্স। এই ব্ল্যাক বক্সগুলো সাধারণত লাল বা কমলা রংয়ের হয় যাতে বিমানের ধ্বংসাবশেষ থেকে বক্সগুলো সহজে সনাক্ত করা যায়। বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে black box একটি টেকনিক্যাল টার্ম, যার থেকে এই নামকরণ। ব্ল্যাক বক্সগুলো এমনভাবে প্রস্তুত করা হয় যে উচ্চমাত্রার তাপ ও চাপ এর কোন ক্ষতি করতে পারে না।
পলিগ্রাফ (Polygraph)
মিথ্যা ধরার যন্ত্রকে পলিগ্রাফ বলে। ১৯২১ সালে জন এ লারসন পলিগ্রাফ আবিষ্কার করেন। মিথ্যা ধরার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হলো মিথ্যাবাদীর শরীর। একজন মানুষ যখন মিথ্যা কথা বলে তখন সাধারণত তার শ্বাস-প্রশ্বাস হার, হৃদস্পন্দন, রক্তচাপ, ঘাম প্রভৃতির কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। পলিগ্রাফ এই পরিবর্তনগুলোকেই পর্যালোচনা করে।
আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান
Modern Physics
রঞ্জর রশ্মি বা অজানা রশ্মি (X-ray)
ক্যাথোড রশ্মি হচ্ছে এক রাশি ইলেকট্রন। ১৮৯৫ সালে জার্মান পদার্থবিজ্ঞানী উইলিয়াম রন্টজেন আবিষ্কার করেন যে, তড়িৎক্ষরণ নল থেকে যখন ক্যাথোড রশ্মি নলের দেয়ালে পড়ে তখন এক্সরে উৎপন্ন হয়। এক্সরে হলো ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্য বিশিষ্ট তাড়িত চৌম্বক বিকিরণ। এক্সরের একক রন্টজেন। এক্সরে উচ্চ ভেদন
ক্ষমতা সম্পন্ন। এক্সরে হীরকের ভিতর দিয়ে যেতে পারে-যা হীরক সনাক্তকরণে ব্যবহৃত হয়। স্থানচ্যুত হাড়, হাড়ে দাগ বা ফাটল, ভেঙ্গে যাওয়া হাড়, শরীরের ভিতরের কোনো বস্তুর বা ফুসফুসে কোনো ক্ষতের অবস্থান নির্ণয়ে, গোয়েন্দা বিভাগে যেমন: কাঠের বাক্স বা চামড়ার থলিতে বিস্ফোরক লুকিয়ে রাখলে তা খুঁজে বের করতে এক্স রশ্মি ব্যবহৃত হয়।
তেজষ্ক্রিয়তা (Radioactivity)
ফরাসি বিজ্ঞানী হেনরি বেকলের ১৮৯৬ সালে এক্সরে নিয়ে গবেষণার সময় লক্ষ্য করেন যে, ইউরেনিয়াম ধাতুর নিউক্লিয়াস থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অবিরত বিশেষ ভেদনশক্তি সম্পন্ন রশ্মি বা বিকিরণ নির্গত হয়। তাঁর নামানুসারে এই রশ্মির নাম দেওয়া হয় ‘বেকরেল রশ্মি’। পরবর্তীকালে মাদাম ক্যুরি এবং তার স্বামী পিয়ের ক্যুরি ব্যাপক গবেষণা চালিয়ে লক্ষ্য করেন যে, রেডিয়াম, পোলোনিয়াম, থোরিয়াম, অ্যাকটিনিয়াম প্রভৃতি ভারী মৌলের নিউক্লিয়াস থেকেও ‘বেকরেল রশ্মির’ মত একই ধরণের রশ্মি নির্গত হয়। এই রশ্মি এখন ‘তেজষ্ক্রিয় রশ্মি’ নামে পরিচিত। তেজষ্ক্রিয়তা নিয়ে গবেষণার জন্য তেজষ্ক্রিয়তার আবিষ্কারক হেনরি বেকরেল এবং মারি ক্যুরি ও তাঁর স্বামী পিয়ের ক্যুরি যৌথভাবে ১৯০৩ সালে নোবেল পুরস্কার পান। কৃত্রিম তেজষ্ক্রিয়তা আবিষ্কারের জন্য জুলিও ক্যুরি দম্পতি ১৯৩৫ সালে যৌথভাবে রসায়নে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন। ভারি মৌলিক পদার্থের নিউক্লিয়াস থেকে স্বতঃস্ফুর্তভাবে আলফা, বিটা ও গামা রশ্মি নির্গমনের প্রক্রিয়াকে তেজষ্ক্রিয়তা বলে। যে সকল মৌল হতে তেজষ্ক্রিয় রশ্মি নির্গত হয়, তাকে তেজষ্ক্রিয় মৌল বলে। যে সকল মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা ৮২ এর বেশি, সাধারণত সে সকল মৌল তেজষ্ক্রিয় হয়। যেমন: ইউরেনিয়াম (৯২), নেপচুনিয়াম (৯৩), প্লুচোনিয়াম (৯৪), রেডিয়াম (৮৮), থোরিয়াম (৯০), রেডন (৮৬) ইত্যাদি তেজষ্ক্রিয় পদার্থ। আন্তর্জাতিক (Sl) পদ্ধতিতে তেজষ্ক্রিয়তার একক পরিমাপের একক বেকরেল (Bq)। রেডিও অ্যাকটিভ মৌল সনাক্তকরণের জন্য গাইগার মুলার কাউন্টার বা গাইগার কাউন্টার ব্যবহৃত হয়।
তেজষ্ক্রিয় আইসোটোপ (Radioactive Isotopes)
অস্থিত আইসোটোপগুলো স্বতঃস্ফুর্তভাবে বিভিন্ন ধরণের রশ্মি বিকিরণ করে নিজের নিউক্লিয়াসে পরিবর্তন এনে মৌলের স্থিত আইসোটোপে পরিণত হয়, এই ধরণের আইসোটোপ গুলোকে তেজষ্ক্রিয় আইসোটোপ বলে। যেমন: কার্বন-১৪, ইউরেনিয়াম-২৩৬, আয়োডিন-১৩০ ইত্যাদি রেডিও আইসোটোপ। কার্বন-১৪ এর অর্ধায়ু ৫৭৩০ বছর। ইউরেনিয়াম-২৩৮ এর অর্ধায়ু ৪৫০ কোটি বছর। গলগন্ড রোগ নির্ণয়ে আইসোটোপ ব্যবহৃত হয়। রেডিও আইসোটোপ থেকে নির্গত গামা রশ্মি টিউমার, ক্যান্সার প্রভৃতি রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
আলফা, বিটা ও গামা রশ্মি (Alfa, Beta and Gamma rays)
আলফা (α): এটি একটি হিলিয়াম নিউক্লিয়াস বা দ্বি-আয়নিত হিলিয়াম পরমাণু। আলফা রশ্মি ধনাত্মক আধানযুক্ত। এই রশ্মি চৌম্বক ও তড়িৎ ক্ষেত্র দ্বারা বিচ্যুত হয়।
বিটা (β): এই রশ্মি অতি উচ্চ দ্রুতি সম্পন্ন ইলেকট্রনের প্রবাহ। বিটা রশ্মি ঋণাত্মক আধানযুক্ত। এই রশ্মি চৌম্বক ও তড়িৎ ক্ষেত্র দ্বারা বিক্ষিপ্ত হয়।
গামা (γ): গামা রশ্মি অত্যন্ত ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্যের তাড়িত চৌম্বক বিকিরণ। এর কোনো চার্জ বা ভর নেই এবং ইহা চৌম্বক ক্ষেত্র দ্বারা বিক্ষিপ্ত হয় না। এটি জীবজগতের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক। তবে টিউমার, ক্যান্সার প্রভৃতি রোগের চিকিৎসায় এ রশ্মি ব্যবহার করা হয়। ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহৃত গামা বিকিরণের উৎস হলো আইসোটোপ।
এলইডি
সিলিকন চিপ
এলসিডি
আইসি
রঞ্জর রশ্মি বা অজানা রশ্মি (X-ray)
ক্যাথোড রশ্মি হচ্ছে এক রাশি ইলেকট্রন। ১৮৯৫ সালে জার্মান পদার্থবিজ্ঞানী উইলিয়াম রন্টজেন আবিষ্কার করেন যে, তড়িৎক্ষরণ নল থেকে যখন ক্যাথোড রশ্মি নলের দেয়ালে পড়ে তখন এক্সরে উৎপন্ন হয়। এক্সরে হলো ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্য বিশিষ্ট তাড়িত চৌম্বক বিকিরণ। এক্সরের একক রন্টজেন। এক্সরে উচ্চ ভেদন
ক্ষমতা সম্পন্ন। এক্সরে হীরকের ভিতর দিয়ে যেতে পারে-যা হীরক সনাক্তকরণে ব্যবহৃত হয়। স্থানচ্যুত হাড়, হাড়ে দাগ বা ফাটল, ভেঙ্গে যাওয়া হাড়, শরীরের ভিতরের কোনো বস্তুর বা ফুসফুসে কোনো ক্ষতের অবস্থান নির্ণয়ে, গোয়েন্দা বিভাগে যেমন: কাঠের বাক্স বা চামড়ার থলিতে বিস্ফোরক লুকিয়ে রাখলে তা খুঁজে বের করতে এক্স রশ্মি ব্যবহৃত হয়।
তেজষ্ক্রিয়তা (Radioactivity)
ফরাসি বিজ্ঞানী হেনরি বেকলের ১৮৯৬ সালে এক্সরে নিয়ে গবেষণার সময় লক্ষ্য করেন যে, ইউরেনিয়াম ধাতুর নিউক্লিয়াস থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অবিরত বিশেষ ভেদনশক্তি সম্পন্ন রশ্মি বা বিকিরণ নির্গত হয়। তাঁর নামানুসারে এই রশ্মির নাম দেওয়া হয় ‘বেকরেল রশ্মি’। পরবর্তীকালে মাদাম ক্যুরি এবং তার স্বামী পিয়ের ক্যুরি ব্যাপক গবেষণা চালিয়ে লক্ষ্য করেন যে, রেডিয়াম, পোলোনিয়াম, থোরিয়াম, অ্যাকটিনিয়াম প্রভৃতি ভারী মৌলের নিউক্লিয়াস থেকেও ‘বেকরেল রশ্মির’ মত একই ধরণের রশ্মি নির্গত হয়। এই রশ্মি এখন ‘তেজষ্ক্রিয় রশ্মি’ নামে পরিচিত। তেজষ্ক্রিয়তা নিয়ে গবেষণার জন্য তেজষ্ক্রিয়তার আবিষ্কারক হেনরি বেকরেল এবং মারি ক্যুরি ও তাঁর স্বামী পিয়ের ক্যুরি যৌথভাবে ১৯০৩ সালে নোবেল পুরস্কার পান। কৃত্রিম তেজষ্ক্রিয়তা আবিষ্কারের জন্য জুলিও ক্যুরি দম্পতি ১৯৩৫ সালে যৌথভাবে রসায়নে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন। ভারি মৌলিক পদার্থের নিউক্লিয়াস থেকে স্বতঃস্ফুর্তভাবে আলফা, বিটা ও গামা রশ্মি নির্গমনের প্রক্রিয়াকে তেজষ্ক্রিয়তা বলে। যে সকল মৌল হতে তেজষ্ক্রিয় রশ্মি নির্গত হয়, তাকে তেজষ্ক্রিয় মৌল বলে। যে সকল মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা ৮২ এর বেশি, সাধারণত সে সকল মৌল তেজষ্ক্রিয় হয়। যেমন: ইউরেনিয়াম (৯২), নেপচুনিয়াম (৯৩), প্লুচোনিয়াম (৯৪), রেডিয়াম (৮৮), থোরিয়াম (৯০), রেডন (৮৬) ইত্যাদি তেজষ্ক্রিয় পদার্থ। আন্তর্জাতিক (Sl) পদ্ধতিতে তেজষ্ক্রিয়তার একক পরিমাপের একক বেকরেল (Bq)। রেডিও অ্যাকটিভ মৌল সনাক্তকরণের জন্য গাইগার মুলার কাউন্টার বা গাইগার কাউন্টার ব্যবহৃত হয়।
তেজষ্ক্রিয় আইসোটোপ (Radioactive Isotopes)
অস্থিত আইসোটোপগুলো স্বতঃস্ফুর্তভাবে বিভিন্ন ধরণের রশ্মি বিকিরণ করে নিজের নিউক্লিয়াসে পরিবর্তন এনে মৌলের স্থিত আইসোটোপে পরিণত হয়, এই ধরণের আইসোটোপ গুলোকে তেজষ্ক্রিয় আইসোটোপ বলে। যেমন: কার্বন-১৪, ইউরেনিয়াম-২৩৬, আয়োডিন-১৩০ ইত্যাদি রেডিও আইসোটোপ। কার্বন-১৪ এর অর্ধায়ু ৫৭৩০ বছর। ইউরেনিয়াম-২৩৮ এর অর্ধায়ু ৪৫০ কোটি বছর। গলগন্ড রোগ নির্ণয়ে আইসোটোপ ব্যবহৃত হয়। রেডিও আইসোটোপ থেকে নির্গত গামা রশ্মি টিউমার, ক্যান্সার প্রভৃতি রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
আলফা, বিটা ও গামা রশ্মি (Alfa, Beta and Gamma rays)
আলফা (α): এটি একটি হিলিয়াম নিউক্লিয়াস বা দ্বি-আয়নিত হিলিয়াম পরমাণু। আলফা রশ্মি ধনাত্মক আধানযুক্ত। এই রশ্মি চৌম্বক ও তড়িৎ ক্ষেত্র দ্বারা বিচ্যুত হয়।
বিটা (β): এই রশ্মি অতি উচ্চ দ্রুতি সম্পন্ন ইলেকট্রনের প্রবাহ। বিটা রশ্মি ঋণাত্মক আধানযুক্ত। এই রশ্মি চৌম্বক ও তড়িৎ ক্ষেত্র দ্বারা বিক্ষিপ্ত হয়।
গামা (γ): গামা রশ্মি অত্যন্ত ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্যের তাড়িত চৌম্বক বিকিরণ। এর কোনো চার্জ বা ভর নেই এবং ইহা চৌম্বক ক্ষেত্র দ্বারা বিক্ষিপ্ত হয় না। এটি জীবজগতের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক। তবে টিউমার, ক্যান্সার প্রভৃতি রোগের চিকিৎসায় এ রশ্মি ব্যবহার করা হয়। ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহৃত গামা বিকিরণের উৎস হলো আইসোটোপ।
শক্তির উৎস ও ব্যবহার (Source of energy & its uses)
প্রকৃতি থেকে আমরা যা কিছু পাই, তাই প্রাকৃতিক সম্পদ। প্রাকৃতিক সম্পদকে নবায়নযোগ্য ও অনবায়নযোগ্য এই দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়।
(ক) নবায়নযোগ্য শক্তি (Renewable energy)
যে কোনো উৎস থেকে প্রাপ্ত শক্তি নিজেই পুনরায় শক্তির উৎস। অর্থাৎ যে শক্তির উৎসকে বারবার ব্যবহার করা যায়, তাকে নবায়নযোগ্য শক্তি বলে। যেমন-সৌরশক্তি সূর্যরশ্মি থেকে আহৃত শক্তি, পানি, সমুদ্রস্রোত, পানির জোয়ার ভাটা, হাইড্রোজেন শক্তি, পরমাণুশক্তি প্রভৃতি। নবায়নযোগ্য শক্তির ক্রয়মূল্য শূন্য।
সৌরশক্তি (Solar energy): সূর্য সকল শক্তির উৎস। সৌরশক্তি সূর্যরশ্মি থেকে আহৃত শক্তি। আংশিক পরিবাহী উপকরণ (সাধারণত সিলিকন) নির্মিত সৌর কোষসমূহের (ফটোভোল্টিক বা পিভি কোষ) প্যানেল ব্যবহার করে সৌরশক্তি ধরে রাখা হয়। এটিকে সূর্যালোক দ্বারা আলোকিত করা হলে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। সৌরকোষের বিদ্যুৎ রাতেও ব্যবহার করা সম্ভব যদি এর সঙ্গে থাকে স্টোরেজ ব্যাটারি। বিশ্বের সর্ববৃহৎ সৌরশক্তি কেন্দ্র (Solar power plant) যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত। সৌরশক্তি চালিত বিশ্বের প্রথম রেলওয়ে সুড়ঙ্গ (Tunnel) বেলজিয়ামে অবস্থিত।
বায়োগ্যাস (Biogas): বায়োগ্যাস জীবাশ্ম জ্বালানি নয়। গরু, মহিষ প্রভৃতি গবাদি পশুর গোবর কাজে লাগিয়ে তা থেকে যে গ্যাস তৈরি করে ব্যবহৃত হচ্ছে, এই গ্যাসকে বলা হয় বায়োগ্যাস। বায়োগ্যাসের প্লান্টের প্রধান কাঁচামাল গোবর ও পানি। এদের পরিমাণের অনুপাত ১ : ২। প্রাণীর মলমূত্র থেকে ব্যাকটেরিয়ার ফারমেন্টেশন প্রক্রিয়ায় মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হয়। এই মিথেন জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বায়োগ্যাসে মিথেনের পরিমাণ ৬০-৭০%। বায়োগ্যাস তৈরির পর যা অবশিষ্ট থাকে তা সার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
পরমাণুশক্তি (Nuclear Energy): মানবকল্যাণে পারমাণবিক শক্তির ব্যবহার প্রথম শুরু হয় ১৯৫৪ সালে। ঐ সময় তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রথম নিউক্লিয় তড়িৎ কেন্দ্রে তড়িৎ উৎপাদন শুরু করে।
(খ) অনবায়নযোগ্য জ্বালানি (Unrenewable Energy)
যে শক্তি বারবার ব্যবহার করা যায় না এবং ব্যবহারে এক সময় শেষ হয়ে যায় তাকে অনবায়নযোগ্য সম্পদ বলে। যেমন: গ্যাস, তেল, কয়লা ইত্যাদি। জীবাশ্ম (Fossil) বলতে প্রাণী বা উদ্ভিদ পাথরে পরিণত হয়েছে এমন ধরণের বস্তুকে বোঝায়। যে বিজ্ঞান জীবাশ্ম সম্বন্ধে আলোচনা করে তাকে জীবাশ্মবিদ্যা (Paleontology) বলে। প্রাগৈতিহাসিক যুগের উদ্ভিদ ও প্রাণীর ধ্বংসাবশেষ তথা মৃতদেহের চিহ্ন পাওয়া যায় ভূগর্ভ বা ভূ-পৃষ্ঠের কঠিনস্তরে সংরক্ষিত পাললিক শিলা বা যৌগিক পদার্থে মিশ্রিত ও রূপান্তরিত অবস্থায়। জীবদেহ (প্রাণী ও উদ্ভিদ উভয়ই) মাটির নীচে চাপা পড়ে লক্ষ লক্ষ বছর পর তা রূপান্তরিত হয় কয়লা, তেল বা প্রাকৃতিক গ্যাসে। এজন্য কয়লা, খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসকে জীবাশ্ম জ্বালানি (Fossil fuel) বলা হয়।
যে সমস্ত জীব সুদূর অতীতে উৎপত্তি লাভ করেও কোনো রকম পরিবর্তন ছাড়াই এখনও পৃথিবীতে টিকে আছে অথচ তাদের সমসাময়িক জীবদের অবলুপ্তি ঘটেছে, সেই সকল জীবদের জীবন্ত জীবাশ্ম বলে। সিলাকান্থ নামক মাছ, রাজকাঁকড়া নামক সন্ধিপদ প্রাণী, প্লাটিপাস নামক স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং ইকুউজিটাম, নিটাম এবং গিঙ্কগো বাইলোবা নামের উদ্ভিদ জীবন্ত জীবাশ্মের উদাহরণ।
কয়লা (Coal): কার্বন মৌলের অবিশুদ্ধ রূপ হলো কয়লা। ভূ-গর্ভে খনিতে পাওয়া যায় পাথরের মতো এক ধরণের শিলা-এর নাম খনিজ কয়লা। অস্থিজ কয়লাকে আইভরি ব্ল্যাক বলে। অপর্যাপ্ত বাতাসে কাঠ পোড়ালে কয়লা হয়। এর নাম কাঠকয়লা।
প্রাচীনকালের বৃক্ষ দীর্ঘদিন মাটির তলায় চাপা পড়ে ধীরে ধীরে কয়লায় পরিণত হয়। সময়ের সাথে সাথে কয়লায় কার্বনের অনুপাত বাড়তে থাকে এবং কয়লার মানও বৃদ্ধি পায়। সালফারের উপস্থিতি কয়লার মান নষ্ট করে। তাপ উৎপাদন ক্ষমতা ও কার্বনের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে খনিজ কয়লা চার প্রকার। যথা-
(১) পীট কয়লা: উদ্ভিদজাত জৈবিক পদার্থ থেকে কয়লা সৃষ্টি হওয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে যে কয়লা পাওয়া যায়, তাকেই মূলত পীট কয়লা বলে। পীট কয়লা ভিজা ও নরম।
(২) লিগনাইট: পীট থেকে কয়লা তৈরি হওয়ার মধ্যবর্তী ধাপ হচ্ছে লিগনাইট। এটি অতি প্রাচীন কালের (১০ থেকে ১৫ কোটি বছর) গাছপালা ও উদ্ভিদজাত দ্রব্যের পরিবর্তিত রূপ। এটি পীটের চেয়ে শক্ত ও ভারী। একে খয়েরি কয়লাও বলা হয়। এতে কার্বনের পরিমাণ ৬৭-৬৮%। রান্না-বান্না, ইট পোড়ানো, বাষ্পীয় ইঞ্জিন ও তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে জ্বালানি হিসেবে এটি ব্যবহৃত হয়।
(৩) বিটুমিনাস: এটি লিগনাইট কয়লার পরিবর্তিত রূপ। মৃত গাছপালা ও উদ্ভিদজাত দ্রব্য হতে বিটুমিনাস কয়লা সৃষ্টি হতে ১৫ থেকে ২০ কোটি বছর সময় লাগে। এটি কালো রংয়ের কয়লা। এতে ৬০-৮০% কার্বন থাকে। পোড়া কয়লা বা কোক, গ্যাস কার্বন ও কোল গ্যাস উৎপাদনে বিটুমিনাস কয়লা ব্যবহৃত হয়।
(৪) অ্যানথ্রাসাইট: সর্বপেক্ষা কঠিন ও শক্ত এবং উজ্জ্বল কালো রংয়ের হয়। এত কার্বনের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি (৯২-৯৮%)।
প্রাকৃতিক গ্যাস (Natural Gas): প্রাকৃতিক গ্যাস পাওয়া যায় ভূগর্ভ থেকে। প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রধান উপাদান মিথেন (৮০-৯০%) তাছাড়া অন্যান্য উপাদান উথেন (প্রায় ১৩%), প্রোপেন (প্রায় ৩%), বিউটেন, ইথিলিন, নাইট্রোজেন এবং নিম্ন স্ফুটনাঙ্ক বিশিষ্ট হাইড্রোকার্বন বাষ্প। আমাদের দেশে প্রাপ্ত প্রাকৃতিক গ্যাসে মিথেনের পরিমাণ ৯৫-৯৯%।
CNG (Compressed Natural Gas) হল সাধারণ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের একটি রূপ। প্রাকৃতিক গ্যাসকে চাপের মাধ্যমে তরলে পরিণত করে তা গ্যাস-ট্যাংকে জমা করা হয়। এটি সীসা ও বেনজিন মুক্ত।
Liquefied Petroleam Gas বা Liquid Petroleum Gas (LPG বা LP গ্যাস) অর্থাৎ চাপে শীতলকৃত জ্বালানি গ্যাস, এ সমস্ত নামে প্রোপেন বা বিউটেনকে বা এদের মিশ্রণকেও নির্দেশ করা হয়। জ্বালানি হিসেবে রন্ধন কার্যে, গাড়িতে ও ভবনের তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে (HVAC) এটি ব্যবহৃত হয়। এটির ব্যবহার প্রপ্যাল্যান্ট গ্যাস হিসেবে এবং শীতলকারকযন্ত্রের রেফ্রিজারেন্ট হিসেবে ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি বিভিন্ন কার্যে সিএফসির বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি জ্বলে শেষ হলে কোন অবশেষ থাকে না এবং সালফার নির্গত হয় না।
খনিজ তেল (Petrolium): অপরিশোধিত তেল (Crude Oil) বা পেট্রোলিয়াম (তরল সোনা) মূলত হাইড্রোকার্বন ও অন্যান্য কিছু জৈব যৌগের মিশ্রণ। অপরিশোধিত তেলকে ব্যবহার উপযোগী করার জন্য এর বিভিন্ন অংশকে আংশিক পাতন পদ্ধতিতে পৃথক করা হয়। পেট্রোলিয়ামে বিদ্যমান বিভিন্ন উপাদানের স্ফুটনাঙ্ক বিভিন্ন হয়। স্ফিুটনাংকের উপর ভিত্তি করে তেল পরিশোধনাগারে পৃথকীকৃত বিভিন্ন অংশে মধ্যে পেট্রোল (গ্যাসোলিন), প্যারাফিন, ন্যাপথা, কেরোসিন, ডিজেল তেল, লুব্রিকেটিং তেল, বিটুমিন প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। পেট্রোলকে বলা হয় সবুজ জ্বালানি (green fuel)। পেট্রোল পানির চেয়ে হালকা। তাই এদের আগুন পানি দ্বারা নেভানো যায় না। রাস্তা বা ছাদের আবরণ হিসাবে যে পিচ ব্যবহৃত হয় তা পেট্রোলিয়ামের অবশেষ।
আপেক্ষিকতাবাদ (Theory of Relativity)
জার্মান বিজ্ঞানী আইনস্টাইন বিশ্বাস করতেন, “Imagination is more important than Knowledge (কল্পনা শক্তি জ্ঞান অপেক্ষা অধিক গুরুত্বর্পর্ণ)”। ১৯০৫ সালে তিনি দেখান যে, পদার্থ এবং শক্তি প্রকৃতপক্ষে অভিন্ন। পদার্থকে শক্তিতে রূপান্তরিত করা যায়। m ভর বিশিষ্ট কোনো পদার্থকে সম্পূর্ণরূপে শক্তিতে রূপান্তরিত করলে প্রাপ্ত শক্তির পরিমাণ হবে E = mc2, এখানে c হলো আলোর বেগ। একে আইনস্টাইনের পদার্থ ও শক্তির অভিন্নতা বিষয়ক সূত্র বলা হয়। ‘থিওরি অব রিলেটিভিটি’র প্রণেতা আলবার্ট আইনস্টাইন। নিউটনীয় বলবিদ্যায় দৈর্ঘ্য, ভর ও সময় ধ্রুব – গতি নির্ভর নয়। কিন্তু আপেক্ষিক তত্ত্ব অনুসারে দৈর্ঘ্য, বর ও সময় আপেক্ষিক, যা বস্তু বা প্রসঙ্গ কাঠামোর উপর নির্ভরশীল। একে আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা বলে। আপেক্ষিকতা অর্থ কোনো কিছুর সাপেক্ষে। যেমন-আপেক্ষিক ভর বলতে কোন প্রসঙ্গ কাঠামো থেকে কোন স্থির পর্যবেক্ষক কোন বস্তুর যে ভর পরিমাপ করেন তা বোঝায়।
হিগস-বোসন (Higgs Boson)
মহাবিশ্বে দুই ধরণের মৌলিক কণিকা আছে। যথা- বোসন ও ফার্মিয়ন। মহাবিশ্বে চার ধরনের বল রয়েছে। যথা- মহাকর্ষ, তাড়িৎচৌম্বকীয়, দুর্বল নিউক্লিয়ার বল এবং শক্তিশালী নিউক্লিয়ার বল। এ বল বা মিথষ্ক্রিয়াগুলো কার্যকর হয় বলবাহক কণাগুলোর আদান-প্রদানের মধ্য দিয়ে। বলবাহক এ কণাগুলো হচ্ছে গ্রাভিট্রন, ফোটন, ডব্লিউজেড ও গ্লুয়ন। কণাগুলোর সাধারণ নাম বোসন কণা। বোসনের একটি সাধারণ ধর্ম হচ্ছে স্পিন বা ঘূর্ণনবেগ পূর্ণ সংখ্যার। এই বোসন কণাগুলো বোস-আইনাস্টাইন পরিসংখ্যান মেনে চলে। ভারতীয় বাঙালি পদার্থবিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু (Prof. M.N Bosh) আলবার্ট আইনস্টাইনের সাথে যৌথভাবে বোস-আইনস্টাইন পরিসংখ্যান প্রদান করেন। অধ্যাপক সত্যেন্দ্রনাথ বসু বৃহত্তর বাংলার তিন শিক্ষায়তন ঢাকা, কলকাতা এবং বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যৗালয়ের সাথে সম্পৃত্ত ছিলেন। ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী পিটার হিগস ১৯৬৪ সালে শক্তি হিসেবে এমন একটি কণার ধারণা দেন, যা বস্তুর ভর সৃষ্টি করে এবং এর ফলে মহাবিশ্ব সৃষ্টি সম্ভব হয়েছে। এই কণাটি হল হিগের কণা। হিগস কণাকে বিজ্ঞানে হিগস বোসন বলেই উল্লেখ করা হয়। কারণ হিগস কণা একটি বোসন কণা। এ কণিকাকে অনেকে মজা করে ঈশ্বরের কণিকাও বলে খ থাকেন। হিগস বোসন কোয়ান্টাম তত্ত্বের একটি বিষয়। মহাবিশ্বে আরেক ধরণের কণা হচ্ছে ইলেকট্রন, প্রোটন এবং নিউট্রন। এগুলোকে বলা হয় ফার্মিয়ন। ফার্মিয়নের স্পিন ভগ্নাংশ সংখ্যার। এ কণাগুলো ফার্মি-ডিরাক-ডিরাক পরিসংখ্যান মেনে চলে।
নিউক্লিয় শক্তি (Nuclear Energy)
নিউক্লিয়াস ভেঙ্গে বা বিভাজন করে অথবা দুটি হাল্কা নিউক্লিয়াসকে একত্রিত করে যে শক্তি পাওয়া যায়, এই শক্তিকে বলা হয় নিউক্লিয় শক্তি (Nuclear Energy)। একে পারমাণবিক শক্তি (Atomic Energy) নামেও অভিহিত করা হয়। পরমাণু হতে দুটি পদ্ধতিতে নিউক্লিয় শক্তি উৎপন্ন করা যায়-
(ক) নিউক্লিয় ফিউশন (Nuclear Fusion): যে নিউক্লিয় বিক্রিয়ায় দুটি ক্ষুদ্র নিউক্লিয়াস েএকত্রিত হয়ে অপেক্ষাকৃত বড় নিউক্লিয়াসযুক্ত ভিন্ন মৌল তৈরি করে তাকে নিউক্লিয় ফিউশন বা নিউক্লিয় সংযোজন বিক্রিয়া বলে। সূর্য ও অন্যান্য নক্ষত্রে শক্তির উৎস হচ্ছে নিউক্লিয় ফিউশন বিক্রিয়া। নিউক্লিয় ফিউশন নীতির উপর ভিত্তি করে হাইড্রোজেনের আইসোটোপ-ডিউটেরিয়াম, ট্রিটিয়াম ব্যবহার করে হাইড্রোজেন বোমা তৈরি করা হয়।
(খ) নিউক্লিয় ফিশন (Nuclear Fission): কোনো মৌলের অতি বৃহৎ নিউক্লিয়াসকে নিউট্রন দ্বারা আঘাত করার ফলে দুটি কাছাকাছি ভরবিশিষ্ট নিউক্লিয়াসে বিভক্ত হয়ে দুটি ভিন্ন মৌল উৎপন্ন করলে তাকে নিউক্লিয় ফিশন বা নিউক্লিয় বিভাজন বিক্রিয়া বলে। ইউরেনিয়াম-২৩৫ এর একটি পরমাণুকে একটি নিউট্রন দ্বারা আঘাত করলে পরমাণুটি প্রায় সমান দুই টুকরোয় বিভক্ত হয় এবং নির্গত হয় তিনটি নিউট্রন এবং কিছু পরিমাণ শক্তি। নির্গত তিনটি নিউট্রন অন্য তিনটি ইউরেনিয়াম পরমাণুকে আঘাত করলে তারা ভেঙ্গে দুটুকরো হয় এবং নিউট্রন নির্গত হয় এবং তিনগুণ শক্তি নির্গত হয়। এভাবে পরমাণুর ভাঙ্গন চলতে থাকে এবং নির্গত শক্তির পরিমাণ এবং নিউট্রন সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। একে বলা হয় চেইন বিক্রিয়া (Chain Reaction) বা শৃঙ্খল বিক্রিয়া বলে। এই বিক্রিয়া একবার শুরু হলে আপনা আপনি চলতে থাকে এবং নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে প্রচন্ড বিস্ফোরণ ঘটে। নিউক্লিয় চেইন বিক্রিয়াকে যে যন্ত্রে নিয়ন্ত্রণ করা হয় তার নাম নিউক্লিয় রিয়াক্টর (Nuclear Reactor) বা নিউক্লিয় বিক্রিয়ক। একে পারমাণবিক চুল্লী নামেও অভিহিত করা হয়। পারমাণবিক চুল্লীর মূল বস্তু বা মজ্জা (Core) গ্রাফাইটের ইটের তৈরি। চুল্লিতে জ্বালানি হিসেবে ইউরেনিয়াম-২৩৫ ব্যবহৃত হয়। চুল্লিতে ক্যাডমিযাম বা বোরন এর দন্ড থাকে। এ সব দন্ড নিউট্রনকে শোষণ করে নিউক্লিয় বিক্রিয়ার গতিকে মন্থর করে দেয়। পারমাণবিক চুল্লিতে তাপ পরিবাহক হিসাবে সোডিয়াম ব্যবহৃত হয়।
পারমাণবিক বোমা
১৯৩৮ সালে বার্লিনে জার্মান বিজ্ঞানী লিজে মাইটনার, অটো হ্যান এবং ফ্রিৎজ স্ট্রসম্যান সর্বপ্রথম নিউক্লিয় ফিশন প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেন। এই বিক্রিয়ার মাধ্যমে অনন্য সাধারণ শক্তির অস্ত্র নির্মান সম্বব – বিজ্ঞাণীরা তা বুঝতে পারেন। ২ আগষ্ট. ১৯৩৯ আইনস্টাইন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টকে এ ধরণের নতুন একটি বোমার কথা জানিয়ে চিঠি লিখেন। পারমাণবিক বোমা তৈরির লক্ষ্যে ১৯৪২ সালে মার্কিনীরা ‘ম্যানহাটন প্রকল্প’ হাতে নেয়। এ প্রকল্পের বৈজ্ঞানিক পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন রবার্ট ওপেনহাইমার। ম্যানটহাটন প্রকল্পের অংশ হিসেবে মার্কিন সেনাবাহিনী ১৯৪৫ সালের ১৬ জুলাই নিউ মেক্সিকোর আলামোগোর্ডোর নামক স্থানে বিশ্বের প্রথম পারমাণবিক বোমা ‘ট্রিনিট্রি’ এর সফল বিস্ফোরণ ঘটায়।
অনবায়নযোগ্য জ্বালানি (Unrenewable Energy)
যে শক্তি বারবার ব্যবহার করা যায় না এবং ব্যবহারে এক সময় শেষ হয়ে যায় তাকে অনবায়নযোগ্য সম্পদ বলে। যেমন: গ্যাস, তেল, কয়লা ইত্যাদি। জীবাশ্ম (Fossil) বলতে প্রাণী বা উদ্ভিদ পাথরে পরিণত হয়েছে এমন ধরণের বস্তুকে বোঝায়। যে বিজ্ঞান জীবাশ্ম সম্বন্ধে আলোচনা করে তাকে জীবাশ্মবিদ্যা (Paleontology) বলে। প্রাগৈতিহাসিক যুগের উদ্ভিদ ও প্রাণীর ধ্বংসাবশেষ তথা মৃতদেহের চিহ্ন পাওয়া যায় ভূগর্ভ বা ভূ-পৃষ্ঠের কঠিনস্তরে সংরক্ষিত পাললিক শিলা বা যৌগিক পদার্থে মিশ্রিত ও রূপান্তরিত অবস্থায়। জীবদেহ (প্রাণী ও উদ্ভিদ উভয়ই) মাটির নীচে চাপা পড়ে লক্ষ লক্ষ বছর পর তা রূপান্তরিত হয় কয়লা, তেল বা প্রাকৃতিক গ্যাসে। এজন্য কয়লা, খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসকে জীবাশ্ম জ্বালানি (Fossil fuel) বলা হয়।
যে সমস্ত জীব সুদূর অতীতে উৎপত্তি লাভ করেও কোনো রকম পরিবর্তন ছাড়াই এখনও পৃথিবীতে টিকে আছে অথচ তাদের সমসাময়িক জীবদের অবলুপ্তি ঘটেছে, সেই সকল জীবদের জীবন্ত জীবাশ্ম বলে। সিলাকান্থ নামক মাছ, রাজকাঁকড়া নামক সন্ধিপদ প্রাণী, প্লাটিপাস নামক স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং ইকুউজিটাম, নিটাম এবং গিঙ্কগো বাইলোবা নামের উদ্ভিদ জীবন্ত জীবাশ্মের উদাহরণ।
কয়লা (Coal): কার্বন মৌলের অবিশুদ্ধ রূপ হলো কয়লা। ভূ-গর্ভে খনিতে পাওয়া যায় পাথরের মতো এক ধরণের শিলা-এর নাম খনিজ কয়লা। অস্থিজ কয়লাকে আইভরি ব্ল্যাক বলে। অপর্যাপ্ত বাতাসে কাঠ পোড়ালে কয়লা হয়। এর নাম কাঠকয়লা।
প্রাচীনকালের বৃক্ষ দীর্ঘদিন মাটির তলায় চাপা পড়ে ধীরে ধীরে কয়লায় পরিণত হয়। সময়ের সাথে সাথে কয়লায় কার্বনের অনুপাত বাড়তে থাকে এবং কয়লার মানও বৃদ্ধি পায়। সালফারের উপস্থিতি কয়লার মান নষ্ট করে। তাপ উৎপাদন ক্ষমতা ও কার্বনের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে খনিজ কয়লা চার প্রকার। যথা-
(১) পীট কয়লা: উদ্ভিদজাত জৈবিক পদার্থ থেকে কয়লা সৃষ্টি হওয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে যে কয়লা পাওয়া যায়, তাকেই মূলত পীট কয়লা বলে। পীট কয়লা ভিজা ও নরম।
(২) লিগনাইট: পীট থেকে কয়লা তৈরি হওয়ার মধ্যবর্তী ধাপ হচ্ছে লিগনাইট। এটি অতি প্রাচীন কালের (১০ থেকে ১৫ কোটি বছর) গাছপালা ও উদ্ভিদজাত দ্রব্যের পরিবর্তিত রূপ। এটি পীটের চেয়ে শক্ত ও ভারী। একে খয়েরি কয়লাও বলা হয়। এতে কার্বনের পরিমাণ ৬৭-৬৮%। রান্না-বান্না, ইট পোড়ানো, বাষ্পীয় ইঞ্জিন ও তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে জ্বালানি হিসেবে এটি ব্যবহৃত হয়।
(৩) বিটুমিনাস: এটি লিগনাইট কয়লার পরিবর্তিত রূপ। মৃত গাছপালা ও উদ্ভিদজাত দ্রব্য হতে বিটুমিনাস কয়লা সৃষ্টি হতে ১৫ থেকে ২০ কোটি বছর সময় লাগে। এটি কালো রংয়ের কয়লা। এতে ৬০-৮০% কার্বন থাকে। পোড়া কয়লা বা কোক, গ্যাস কার্বন ও কোল গ্যাস উৎপাদনে বিটুমিনাস কয়লা ব্যবহৃত হয়।
(৪) অ্যানথ্রাসাইট: সর্বপেক্ষা কঠিন ও শক্ত এবং উজ্জ্বল কালো রংয়ের হয়। এত কার্বনের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি (৯২-৯৮%)।
প্রাকৃতিক গ্যাস (Natural Gas): প্রাকৃতিক গ্যাস পাওয়া যায় ভূগর্ভ থেকে। প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রধান উপাদান মিথেন (৮০-৯০%) তাছাড়া অন্যান্য উপাদান উথেন (প্রায় ১৩%), প্রোপেন (প্রায় ৩%), বিউটেন, ইথিলিন, নাইট্রোজেন এবং নিম্ন স্ফুটনাঙ্ক বিশিষ্ট হাইড্রোকার্বন বাষ্প। আমাদের দেশে প্রাপ্ত প্রাকৃতিক গ্যাসে মিথেনের পরিমাণ ৯৫-৯৯%।
CNG (Compressed Natural Gas) হল সাধারণ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের একটি রূপ। প্রাকৃতিক গ্যাসকে চাপের মাধ্যমে তরলে পরিণত করে তা গ্যাস-ট্যাংকে জমা করা হয়। এটি সীসা ও বেনজিন মুক্ত।
Liquefied Petroleam Gas বা Liquid Petroleum Gas (LPG বা LP গ্যাস) অর্থাৎ চাপে শীতলকৃত জ্বালানি গ্যাস, এ সমস্ত নামে প্রোপেন বা বিউটেনকে বা এদের মিশ্রণকেও নির্দেশ করা হয়। জ্বালানি হিসেবে রন্ধন কার্যে, গাড়িতে ও ভবনের তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে (HVAC) এটি ব্যবহৃত হয়। এটির ব্যবহার প্রপ্যাল্যান্ট গ্যাস হিসেবে এবং শীতলকারকযন্ত্রের রেফ্রিজারেন্ট হিসেবে ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি বিভিন্ন কার্যে সিএফসির বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি জ্বলে শেষ হলে কোন অবশেষ থাকে না এবং সালফার নির্গত হয় না।
খনিজ তেল (Petrolium): অপরিশোধিত তেল (Crude Oil) বা পেট্রোলিয়াম (তরল সোনা) মূলত হাইড্রোকার্বন ও অন্যান্য কিছু জৈব যৌগের মিশ্রণ। অপরিশোধিত তেলকে ব্যবহার উপযোগী করার জন্য এর বিভিন্ন অংশকে আংশিক পাতন পদ্ধতিতে পৃথক করা হয়। পেট্রোলিয়ামে বিদ্যমান বিভিন্ন উপাদানের স্ফুটনাঙ্ক বিভিন্ন হয়। স্ফিুটনাংকের উপর ভিত্তি করে তেল পরিশোধনাগারে পৃথকীকৃত বিভিন্ন অংশে মধ্যে পেট্রোল (গ্যাসোলিন), প্যারাফিন, ন্যাপথা, কেরোসিন, ডিজেল তেল, লুব্রিকেটিং তেল, বিটুমিন প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। পেট্রোলকে বলা হয় সবুজ জ্বালানি (green fuel)। পেট্রোল পানির চেয়ে হালকা। তাই এদের আগুন পানি দ্বারা নেভানো যায় না। রাস্তা বা ছাদের আবরণ হিসাবে যে পিচ ব্যবহৃত হয় তা পেট্রোলিয়ামের অবশেষ।
আপেক্ষিকতাবাদ (Theory of Relativity)
জার্মান বিজ্ঞানী আইনস্টাইন বিশ্বাস করতেন, “Imagination is more important than Knowledge (কল্পনা শক্তি জ্ঞান অপেক্ষা অধিক গুরুত্বর্পর্ণ)”। ১৯০৫ সালে তিনি দেখান যে, পদার্থ এবং শক্তি প্রকৃতপক্ষে অভিন্ন। পদার্থকে শক্তিতে রূপান্তরিত করা যায়। m ভর বিশিষ্ট কোনো পদার্থকে সম্পূর্ণরূপে শক্তিতে রূপান্তরিত করলে প্রাপ্ত শক্তির পরিমাণ হবে E = mc2, এখানে c হলো আলোর বেগ। একে আইনস্টাইনের পদার্থ ও শক্তির অভিন্নতা বিষয়ক সূত্র বলা হয়। ‘থিওরি অব রিলেটিভিটি’র প্রণেতা আলবার্ট আইনস্টাইন। নিউটনীয় বলবিদ্যায় দৈর্ঘ্য, ভর ও সময় ধ্রুব – গতি নির্ভর নয়। কিন্তু আপেক্ষিক তত্ত্ব অনুসারে দৈর্ঘ্য, বর ও সময় আপেক্ষিক, যা বস্তু বা প্রসঙ্গ কাঠামোর উপর নির্ভরশীল। একে আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা বলে। আপেক্ষিকতা অর্থ কোনো কিছুর সাপেক্ষে। যেমন-আপেক্ষিক ভর বলতে কোন প্রসঙ্গ কাঠামো থেকে কোন স্থির পর্যবেক্ষক কোন বস্তুর যে ভর পরিমাপ করেন তা বোঝায়।
হিগস-বোসন (Higgs Boson)
মহাবিশ্বে দুই ধরণের মৌলিক কণিকা আছে। যথা- বোসন ও ফার্মিয়ন। মহাবিশ্বে চার ধরনের বল রয়েছে। যথা- মহাকর্ষ, তাড়িৎচৌম্বকীয়, দুর্বল নিউক্লিয়ার বল এবং শক্তিশালী নিউক্লিয়ার বল। এ বল বা মিথষ্ক্রিয়াগুলো কার্যকর হয় বলবাহক কণাগুলোর আদান-প্রদানের মধ্য দিয়ে। বলবাহক এ কণাগুলো হচ্ছে গ্রাভিট্রন, ফোটন, ডব্লিউজেড ও গ্লুয়ন। কণাগুলোর সাধারণ নাম বোসন কণা। বোসনের একটি সাধারণ ধর্ম হচ্ছে স্পিন বা ঘূর্ণনবেগ পূর্ণ সংখ্যার। এই বোসন কণাগুলো বোস-আইনাস্টাইন পরিসংখ্যান মেনে চলে। ভারতীয় বাঙালি পদার্থবিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু (Prof. M.N Bosh) আলবার্ট আইনস্টাইনের সাথে যৌথভাবে বোস-আইনস্টাইন পরিসংখ্যান প্রদান করেন। অধ্যাপক সত্যেন্দ্রনাথ বসু বৃহত্তর বাংলার তিন শিক্ষায়তন ঢাকা, কলকাতা এবং বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যৗালয়ের সাথে সম্পৃত্ত ছিলেন। ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী পিটার হিগস ১৯৬৪ সালে শক্তি হিসেবে এমন একটি কণার ধারণা দেন, যা বস্তুর ভর সৃষ্টি করে এবং এর ফলে মহাবিশ্ব সৃষ্টি সম্ভব হয়েছে। এই কণাটি হল হিগের কণা। হিগস কণাকে বিজ্ঞানে হিগস বোসন বলেই উল্লেখ করা হয়। কারণ হিগস কণা একটি বোসন কণা। এ কণিকাকে অনেকে মজা করে ঈশ্বরের কণিকাও বলে খ থাকেন। হিগস বোসন কোয়ান্টাম তত্ত্বের একটি বিষয়। মহাবিশ্বে আরেক ধরণের কণা হচ্ছে ইলেকট্রন, প্রোটন এবং নিউট্রন। এগুলোকে বলা হয় ফার্মিয়ন। ফার্মিয়নের স্পিন ভগ্নাংশ সংখ্যার। এ কণাগুলো ফার্মি-ডিরাক-ডিরাক পরিসংখ্যান মেনে চলে।
নিউক্লিয় শক্তি (Nuclear Energy)
নিউক্লিয়াস ভেঙ্গে বা বিভাজন করে অথবা দুটি হাল্কা নিউক্লিয়াসকে একত্রিত করে যে শক্তি পাওয়া যায়, এই শক্তিকে বলা হয় নিউক্লিয় শক্তি (Nuclear Energy)। একে পারমাণবিক শক্তি (Atomic Energy) নামেও অভিহিত করা হয়। পরমাণু হতে দুটি পদ্ধতিতে নিউক্লিয় শক্তি উৎপন্ন করা যায়-
(ক) নিউক্লিয় ফিউশন (Nuclear Fusion): যে নিউক্লিয় বিক্রিয়ায় দুটি ক্ষুদ্র নিউক্লিয়াস েএকত্রিত হয়ে অপেক্ষাকৃত বড় নিউক্লিয়াসযুক্ত ভিন্ন মৌল তৈরি করে তাকে নিউক্লিয় ফিউশন বা নিউক্লিয় সংযোজন বিক্রিয়া বলে। সূর্য ও অন্যান্য নক্ষত্রে শক্তির উৎস হচ্ছে নিউক্লিয় ফিউশন বিক্রিয়া। নিউক্লিয় ফিউশন নীতির উপর ভিত্তি করে হাইড্রোজেনের আইসোটোপ-ডিউটেরিয়াম, ট্রিটিয়াম ব্যবহার করে হাইড্রোজেন বোমা তৈরি করা হয়।
(খ) নিউক্লিয় ফিশন (Nuclear Fission): কোনো মৌলের অতি বৃহৎ নিউক্লিয়াসকে নিউট্রন দ্বারা আঘাত করার ফলে দুটি কাছাকাছি ভরবিশিষ্ট নিউক্লিয়াসে বিভক্ত হয়ে দুটি ভিন্ন মৌল উৎপন্ন করলে তাকে নিউক্লিয় ফিশন বা নিউক্লিয় বিভাজন বিক্রিয়া বলে। ইউরেনিয়াম-২৩৫ এর একটি পরমাণুকে একটি নিউট্রন দ্বারা আঘাত করলে পরমাণুটি প্রায় সমান দুই টুকরোয় বিভক্ত হয় এবং নির্গত হয় তিনটি নিউট্রন এবং কিছু পরিমাণ শক্তি। নির্গত তিনটি নিউট্রন অন্য তিনটি ইউরেনিয়াম পরমাণুকে আঘাত করলে তারা ভেঙ্গে দুটুকরো হয় এবং নিউট্রন নির্গত হয় এবং তিনগুণ শক্তি নির্গত হয়। এভাবে পরমাণুর ভাঙ্গন চলতে থাকে এবং নির্গত শক্তির পরিমাণ এবং নিউট্রন সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। একে বলা হয় চেইন বিক্রিয়া (Chain Reaction) বা শৃঙ্খল বিক্রিয়া বলে। এই বিক্রিয়া একবার শুরু হলে আপনা আপনি চলতে থাকে এবং নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে প্রচন্ড বিস্ফোরণ ঘটে। নিউক্লিয় চেইন বিক্রিয়াকে যে যন্ত্রে নিয়ন্ত্রণ করা হয় তার নাম নিউক্লিয় রিয়াক্টর (Nuclear Reactor) বা নিউক্লিয় বিক্রিয়ক। একে পারমাণবিক চুল্লী নামেও অভিহিত করা হয়। পারমাণবিক চুল্লীর মূল বস্তু বা মজ্জা (Core) গ্রাফাইটের ইটের তৈরি। চুল্লিতে জ্বালানি হিসেবে ইউরেনিয়াম-২৩৫ ব্যবহৃত হয়। চুল্লিতে ক্যাডমিযাম বা বোরন এর দন্ড থাকে। এ সব দন্ড নিউট্রনকে শোষণ করে নিউক্লিয় বিক্রিয়ার গতিকে মন্থর করে দেয়। পারমাণবিক চুল্লিতে তাপ পরিবাহক হিসাবে সোডিয়াম ব্যবহৃত হয়।
পারমাণবিক বোমা
১৯৩৮ সালে বার্লিনে জার্মান বিজ্ঞানী লিজে মাইটনার, অটো হ্যান এবং ফ্রিৎজ স্ট্রসম্যান সর্বপ্রথম নিউক্লিয় ফিশন প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেন। এই বিক্রিয়ার মাধ্যমে অনন্য সাধারণ শক্তির অস্ত্র নির্মান সম্বব – বিজ্ঞাণীরা তা বুঝতে পারেন। ২ আগষ্ট. ১৯৩৯ আইনস্টাইন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টকে এ ধরণের নতুন একটি বোমার কথা জানিয়ে চিঠি লিখেন। পারমাণবিক বোমা তৈরির লক্ষ্যে ১৯৪২ সালে মার্কিনীরা ‘ম্যানহাটন প্রকল্প’ হাতে নেয়। এ প্রকল্পের বৈজ্ঞানিক পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন রবার্ট ওপেনহাইমার। ম্যানটহাটন প্রকল্পের অংশ হিসেবে মার্কিন সেনাবাহিনী ১৯৪৫ সালের ১৬ জুলাই নিউ মেক্সিকোর আলামোগোর্ডোর নামক স্থানে বিশ্বের প্রথম পারমাণবিক বোমা ‘ট্রিনিট্রি’ এর সফল বিস্ফোরণ ঘটায়।
আরও দেখুন...